ব্রেক আপ কে বাদ ২
সন্ধ্যে ২৮
সন্ধ্যেগুলো বেচে দিয়ে ইন্দিরা বুঝতে
পারে ফরেস্ট গাম্প কেন দেশের এ মাথা থেকে ও মাথা দৌড়েছিল। ইন্দিরা দৌড়োয় না, শুধু
সন্ধ্যেগুলো কয়েক ডলার মূল্যে বেচে দিয়ে রাত করে বাড়ি ফেরে। দুধের প্যাকেট হাতে
চাঁদের মতো একা ইন্দিরা ঘরের দরজা খোলে। নিজের মধ্যে ঢুকে আসে ইন্দিরা। এই ঘর আর
ইন্দিরার মধ্যে এখন আর কোনো ব্যবধান নেই। গোটা ঘরটাই ইন্দিরা, গোটা ইন্দিরাই একটা
ঘর, একটা ফাঁকা ঘর, একটা সাদাটে, ঠান্ডা, ফাঁকা ঘর।
নিজের হাত থেকে বাঁচতে ইন্দিরা রাতের
দিকে ছাদে চলে আসে। জলের ট্যাঙ্কের পাশে, সোলার সেলের গায়ে সেখানে শুয়ে থাকে ছাদের
পর ছাদ। তারাদের সাথে একটা সময় বন্ধুত্ব ছিল তার। এখন তার কোনো বন্ধু নেই এই শহরে।
শত্রুও নেই। এই শহরে কেউ নেই ইন্দিরার।
ভোর ৩৯
ক্ষমা করতে করতে, ক্ষমা করতে করতে
কেউ কেউ ঈশ্বর হয়ে যায়।
ঘড়ির কাঁটার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে
ইন্দিরা। এভাবেও সময় কাটানো যায়, সময় দিয়ে সময় কাটানো। যেমন নিজেকে দিয়ে জীবন
কাটানো, নিজেকে নিয়ে। নিজের হাত থেকে বাঁচতে অতীতের কথা ভাবা বারণ ইন্দিরার। নিজের
হাত থেকে বাঁচতে ভবিষ্যতের কথাও ভাবা বারণ তার। ইন্দিরার শুধুই বর্তমান, খাঁ খাঁ
করা একটা আস্ত বর্তমানের কঙ্কাল শুয়ে থাকে ইন্দিরার পাশে। ইন্দিরা কঙ্কালের শূন্য
চোখে চোখ রেখে সমস্ত রাত জেগে থাকে।
ইন্দিরা ঈশ্বর হতে চায়নি কোনোদিন,
তাই রাত শেষ হয়ে যায়, নিজেকে ক্ষমা করা হয়ে ওঠে না।
রাত ৪৬
একটা মানুষ ভুলতে গেলে কতগুলো পাহাড়
লাগে? কতগুলো সমুদ্র?
টেবিলের ওপার থেকে সে বলে উঠল,
“তারপর? তুই এখানেই থেকে যাবি?”
“কে জানে, আজ অবধি প্ল্যান করে কোনো
কিছু তো হলো না আমার,” বলে ইন্দিরা ব্যাগ থেকে আতরের ছোট শিশিটা টেবিলে
রাখে।
“কি এটা?”
“রাখ”
ইন্দিরা ভেবেছিল এরপর বাসে তুলে দিয়ে
এলেই সব কিছু আতরের মতো উবে যাবে, ইন্দিরা
ভেবেছিল ফোন নাম্বার মুছে দিলেই, ইন্দিরা ভেবেছিল কাজে ডুবে গেলেই; ডুবিয়ে দিলেই,
ইন্দিরা ভেবেছিল ক’দিন গান না শুনলেই, ইন্দিরা ভেবেছিল সময় দিলেই...
সকাল ৫৫
পাহাড় থেকে নেমে এসে জলে নামে ইন্দিরা। রোদে বুজে আসছে চোখ, সাথে এরকমই আতর
হতে চাওয়া দু’ তিনজন মানুষ নৌকোয় ভেসে চলেছে। ঢেউয়ে ঢেউয়ে ইন্দিরার ঘুম পাচ্ছে, অনেক দিন বাদে এমনি এমনি ইন্দিরার ঘুম পাচ্ছে,
বালিশ ছাড়া, শুকনো চোখে ঘুম নামছে ইন্দিরার। হঠাৎ দেখে হলুদ ডানা প্রজাপতি উড়ে
যাচ্ছে সমুদ্রের উপর দিয়ে। কোথায় যাচ্ছে প্রজাপতি? প্রজাপতির একটা শুঁয়োপোকা অতীত
আছে, ইন্দিরা জানে। প্রজাপতির ভবিষ্যৎ কী, ইন্দিরার জানা নেই।
তবে ইন্দিরা জানে, প্রজাপতি দেখতে দেখতে মানুষ কখনো কাঁদতে পারে না। সমুদ্রের
মধ্যে উড়ে যাওয়া প্রজাপতির দিকে ইন্দিরা রোদ্দুরে বুজে আসা চোখ, জোর করে মেলে
রাখে।
বাহ, অন্যরকম। ভালো, বেশ ভালো।
উত্তরমুছুনশ্রাবণী।