প্রতিবেশী
সাহিত্য
মিগেল
এরনান্দেসের কবিতা
(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী)
কবি পরিচিতি
স্পেনের বিংশ শতকের গোড়ার দিকে সাহিত্য জগতের বিখ্যাত জেনারেশন ’২৭এর অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হলেন মিগেল এরনান্দেস। বারোক রীতির বিখ্যাত সাহিত্যিক গঙ্গোরার বিশেষ অনুরাগী মিগেলের ছোট বয়সে
অর্থের অভাবে বেশিদূর পড়াশোনা হয় নি। স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় সরকার বিরোধী রিপাবলিক দলের হয়ে লড়েন এই বামপন্থী কবি। জীবনের অনেকটা সময় তাঁকে কারান্তরালে কাটাতে হয়েছে। মিগেলের সবচেয়ে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘পেঁয়াজের ঘুম পাড়ানি গান’ বা ‘নানাস দে সেবোইয়া’। ১৯৩৯ সালে সরকার বিরোধী কাজের জন্য তাঁকে মৃত্যুদন্ড প্রথমে দেওয়া হলেও পরে জেনারেল ফ্রাঙ্কো তাঁর শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। অসুখে ভুগে তিনি অবশেষে ১৯৪২ সালে মারা যান।
চুম্বন (BESARSE)
চুম্বন, নারী,
এই পুরো আয়ুষ্কাল জুড়ে
সূর্য, উত্তাপ, এই হলো চুম্বন।
অনুনাদশীল আলোর ছটা ও
সব জলুস নিয়ে
বিজরীর গতিতে
চারটির মধ্যে কেবল একটি সূর্য নিয়ে
ঠোঁটেরা উঠতে থাকে।
চাঁদ চুম্বন করা,
এই গোটা মরণ কাল জুড়ে
নারী, এই হলো চুম্বন।
তার অস্তে যাওয়াই চাইতে চাইতে
ঠোঁটেরা নামতে থাকে
আস্ত চাঁদ সঙ্গে নিয়ে,
ক্ষয় পড়া আর জমাট বাঁধা চাঁদ
আর চার খন্ডে বিভক্ত।
অপ্রমত্ত, জীবনের আগে ( ANTE LA VIDA, SERENO)
জীবনের আগে, নির্মেঘ
আর মৃত্যুর সমীপে, বড়
ওরা যদি আমায় হত্যা করে, ভালোই
যদি বেঁচে থাকি, আরও ভালো।
আমি রাই শস্যের ফুল নই
যে পলকা হাওয়ায় কেঁপে ওঠে।
ওরা যদি আমায় হত্যা করে, ভালোই
যদি বেঁচে থাকি, আরও ভালো।
আমি এখানেই আছি, জীবিত এবং
প্রতিপালকের ঝাড়ের বিষয়
সম্বন্ধে পুড়ে ঝামা হয়ে যাওয়া এক
মানুষ।
ওরা যদি আমায় হত্যা করে, ভালোই
যদি বেঁচে থাকি, আরও ভালো।
কোনো বিদ্যুৎ চমক নয়, কো্নো বজ্রপাতও নয়
আমি ওদের ভয় পাওয়াতে পারি।
ওরা যদি আমায় হত্যা করে, ভালোই
যদি বেঁচে থাকি, আরও ভালো।
বিশ্বাসঘাতকেরা আমার দিকে বিষ
নিক্ষেপ করেছে
আর আমি তাদেরকে ছুঁড়েছি মূল্যবোধ।
ওরা যদি আমায় হত্যা করে, ভালোই
যদি বেঁচে থাকি, আরও ভালো।
এক আনন্দ প্রতিভাস থেকেও
হৃদয়ে বয়ে আনি শূন্য
ওরা যদি আমায় হত্যা করে, ভালোই
যদি বেঁচে থাকি, আরও ভালো।
আহত
মানুষ ভরা ট্রেন ( EL TREN DE
LOS HERIDOS)
রাতের বন্ধু মুখ থেকে নীরবতা
ডুব দেয় নির্বাকে
স্তব্ধ হয়ে যাওয়া বন্ধ হয় না নগণ্য
নীচও।
মৃতদের নিলীন ভাষায় সে কথা বলে।
চোপ
গহন সুতোর পথ উন্মোচন করে সে,
স্তব্ধ করে চাকাদের, ঘড়িদেরও,
থামিয়ে দেয় সমুদ্রের গর্জন, ঘুঘুর
ডাক
শিহরিত করে স্বপ্নের রাত।
চোপ
রক্ত বৃষ্টি ঝরা ট্রেন মুক্তি দেয়
ওদের,
ফঙ্গপানি ট্রেন জুড়ে রক্তপাত হয়
ওদের,
নিশ্চুপ, ফ্যাকাশে, যন্ত্রণা
দীর্ণ,
আঘাতে থমকে যাওয়া ট্রেন যত।
চোপ
প্রাণঘাতী ম্লানতার ট্রেন চড়ে বসে
মানবতা অবেক্ষণ করে শিরোমণিদের
আউচ, কন্ঠ, হৃদয়, পৃথিবী,
ওই সব খুব খারাপভাবে আহত মানুষের
হৃদয়গুলি।
চোপ
ধুপধাপ করে চলে যায় পায়েরা,
হাতেরা, বন্ধুসকল,
অগ্রণী সদস্যদের দুধ মাথা ট্রেন
ভরা আনপথে।
তিক্ততার চিহ্নগুলোও ফেলতে ফেলতে
যায়,
ওরা ছুঁড়তে ছুঁড়তে যায় পাথরের
টুকরো।
চোপ
কর্কশ, অঘোর ট্রেন, বুড়োটে
উদ্গীরণ করে কার্বন, ধোঁয়া ফিসফিস
করে আর
যন্ত্রের মাতৃগর্ভ অস্ফুটে কথা
বলে,
এক দীর্ঘ আতঙ্কে এগিয়ে যায় সে।
চোপ
একটি সুড়ঙ্গ তলে আটক রাখতে চাওয়া
দীর্ঘাকায় জননীর, নরম ফোঁপানি
কোথাও স্টেশন নেই যেখানে বিরতি
টানা যায়
কোনো হাসপাতাল নয়, কোনো বুকেও নয়।
চোপ
বেঁচে থাকবার জন্য, একটা লাগসই
পাথরের টুকরো
মাংসের কোণে এখন একজন মানুষ খাপে
খাপ লেগে যায়।
কেবল একটি আঙুল, একটি ডানার খন্ড
শুধু
তুলে ধরে পুরো শরীরের এক উড়ান।
চোপ
ওই মর্মবিদারী ট্রেন থামিয়ে দাও
তোমরা
যে ট্রেন কখনো রাত অতিক্রম করা শেষ
করে না
আর অশ্বের সওয়ারী হওয়ার আগে পর্যন্ত থাকে নগ্নপদ
খুর ও শ্বাসেদের করে রাখে বালুময়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন