কালিমাটি অনলাইন / ২৭
ভূদেব ভকত। অঙ্কনশিল্প ও আলোকচিত্রশিল্পের জগতে একটি বিশিষ্ট নাম। শ্রদ্ধেয় নাম। সবাই
হয়তো তাঁর কথা জানেন না, কেননা তিনি ছিলেন অন্তর্মুখি স্বভাবের মানুষ, নিতান্তই
আত্মপ্রচারবিমুখ। কিন্তু যাঁরা তাঁর সৃজন শিল্পের সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা জানেন, কী
আশ্চর্য প্রতিভার শিল্পী ছিলেন তিনি। বিশেষত অঙ্কন ও আলোকচিত্র, এই দুই শিল্প একই
সঙ্গে চর্চা ও প্রয়োগ করে তিনি যে নতুন চিত্রশিল্পরসায়ন সৃষ্টি করেছেন, তা সত্যিই
অভূতপূর্ব। এবং শুধু তো অঙ্কনশিল্প ও আলোকচিত্রশিল্প নয়, কথাশিল্পেও ছিল তাঁর
অনবদ্য মুন্সিয়ানা। প্রখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ একটি চিঠিতে লিখেছেন -- “ভূদেব একজন বহুমাত্রিক মানুষ। তার বহুমুখী
প্রতিভার কারণে আমি তার একজন অনুরাগী। শুধু ভালো আঁকিয়ে বা ফটোগ্রাফারই নয়, ভূদেব
অত্যন্ত ভালো লিখিয়েও। তার বাংলা ভাষা অত্যন্ত সুন্দর”।
ভূদেব ভকতের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে আমার এবং মুদ্রিত পত্রিকা ‘কালিমাটি’র
সম্পর্ক ছিল অমলিন হৃদ্যতার ও ভালোবাসার। প্রচ্ছদশিল্পী রূপে তিনি প্রথমে
‘কালিমাটি’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি বয়সে আমার অগ্রজ ছিলেন এবং আমি তাঁর
গুণমুদ্ধ। ক্রমশ আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং সেই ঘনিষ্ঠতা এমন এক ভিন্ন মাত্রায়
পৌঁছে যায়, যা আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় এক স্বতন্ত্র সমীকরণ নির্মাণ করে। আর
তারই ধারাবাহিকতায়, ইতিপূর্বে যা তাঁর তুলির আঁচড়ে ও ক্যামেরার লেন্সের অসাধারণ
ব্যবহারে মূর্ত ও বিমূর্ত রূপ ধারণ করত, এবার তাঁর কলমের নিরন্তর সঞ্চালনায় অক্ষর
শব্দ ও বাক্যের সৃজনে তা বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। তিনি ‘কালিমাটি’ পত্রিকার ৫৭তম সংখ্যা
থেকে শুরু করে এ বছর কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত ১০১তম সংখ্যা পর্যন্ত প্রচ্ছদশিল্পে
এক অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। ‘কালিমাটি প্রকাশনী’র ২০টি বইয়ের প্রচ্ছদও
তাঁরই সৃষ্টি। এছাড়া ‘কালিমাটি’ পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। সেইসব লেখা সংকলনা ও
সম্পাদনা করে ‘কালিমাটি প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশ করেছিলাম তাঁর প্রথম গদ্যগ্রন্থ
‘বিবর্ণ পোস্টকার্ড’। দ্বিতীয় গদ্যগ্রন্থ ‘কোরাস’ প্রকাশিত হয়েছিল আমারই সম্পাদনায়
‘প্রিয়শিল্প প্রকাশনা’ থেকে। আবার তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ
‘মধ্যলয়’ও প্রকাশিত হয়েছিল আমার সম্পাদনায় ‘কালিমাটি প্রকাশনী’ থেকে। এছাড়াও তাঁর
আরও কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছিল অন্য প্রকাশনা থেকেও। ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনেও তিনি নিয়মিত
লিখতেন। অসাধারণ সব লেখা। আর ‘ছবিঘর’
বিভাগের প্রতিটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অনন্য সাধারণ অঙ্কনশিল্প ও আলোকচিত্রশিল্পের নতুন
চিত্রশিল্পরসায়নের সৃষ্টিগুলি। আমাদের অতিপ্রিয় সাহিত্যিক ও সম্পাদক প্রয়াত
নবকুমার শীল লিখেছিলেন -- “একজন সম্পাদকের যা কাজ, কাজল সেন তা করেছেন। সাহিত্যে
আলোর ঔজ্জ্বল্যে তুলে ধরেছেন এক আলোকচিত্রীকে। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ আলোতে চকিতে
জ্বলে ওঠা নয়, একেবারে সূর্যের সোনা আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠা”।
ভূদেব ভকত আর নেই। আমাদের সবার প্রিয়, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ ভূদেবদা,
সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আর কোনোদিন তাঁর সঙ্গে দেখা হবে না, তাঁর সঙ্গে
কথা হবে না, তাঁর সৃষ্ট নতুন কোনো ছবি দেখে এবং লেখা পড়ে বলা হবে না -- ভূদেবদা,
আপনার সত্যিই কোনো তুলনা নেই! আপনি লা-জবাব! ভূদেবদা আমাদের ছেড়ে সত্যি সত্যিই কোথায় যে চলে গেলেন!
পরিশেষে একটা বিনীত নিবেদন প্রিয় লেখক ও পাঠকদের প্রতি। ‘কালিমাটি অনলাইন’
ব্লগজিনের গত ২৬টি সংখ্যা প্রকাশের পর দেখেছি, প্রকাশিত লেখাগুলির তলায় লেখাটি
সম্পর্কে অভিমত জানাবার জায়গায় (কমেন্ট বক্স) খুবই কম পাঠক-পাঠিকার অভিমত এসে
পৌঁছেছে। অধিকাংশ লেখা সম্পর্কে কোনো অভিমতই থাকে না। অথচ সেই লেখাগুলি যখন
লেখক-লেখিকারা ফেসবুকের টাইমলাইনে পুনঃপ্রকাশ করেন, তখন সেই লেখাগুলি সম্পর্কে অনেক পাঠক-পাঠিকার
অভিমত এসে পৌঁছয়। আমরা একথা কখনই মনে করছি না যে, লেখক-লেখিকারা তাঁদের লেখা
ফেসবুকে পুনঃপ্রকাশ করে এবং পাঠক-পাঠিকারা তাঁদের অভিমত জানিয়ে কোনো ভুল করেছেন।
বরং আমরা তাঁদের সমর্থন জানাই। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই যে, পাঠক-পাঠিকাদের সেই
অভিমতগুলি এরপর নিঃশব্দে হারিয়ে যায়। তা আবার খুঁজে বের করা খুবই আয়াসসাধ্য কাজ।
আর তাই আমাদের বিনীত অনুরোধ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে, আপনারা যদি আপনাদের প্রিয়
লেখক-লেখিকাদের লেখাগুলি সম্পর্কে সুচিন্তিত অভিমত ফেসবুকের পাশাপাশি ব্লগজিনের
‘কমেন্ট বক্স’এ ‘পোস্ট’ করেন, তাহলে সেই অভিমতগুলি আর হারিয়ে যাবে না এবং অন্যান্য
পাঠক-পাঠিকারাও তা পড়ার সুযোগ পাবেন।
অনুরোধটা সবাই ভেবে দেখবেন আশাকরি।
সবাই সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন। আনন্দে থাকুন।
আমাদের
সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
দূরভাষ যোগাযোগ :
0657-2757506
/ 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main
Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন