ব্রেক আপ কে বাদ ১
সকাল ১
চোখদুটো খোলাই পড়ে ছিল সারাটা রাত। বারান্দায় এসে
দাঁড়াতে তাতে আলো পড়ল। সে দেখল, চকচকে নারকেল ডাল
দুলছে হাওয়ায়, মোটা কেবল বেয়ে দ্রুত দৌড়ে যাচ্ছে কাঠবেড়ালী। উল্টো দিকের
বাড়ির উঠোনে বউরা রোদে লঙ্কা শুকোতে দিয়ে গল্পে মগ্ন।... কিছুই বদলায়নি তাহলে, তাই
না?
ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে,- খালি ঘর, আলমারি খুলতে,-
ফাঁকা আলমারি, বিছানায় কিছু স্বপ্নের যেন শুয়ে থাকার কথা ছিল।
তবু গন্ধ রয়ে
গেছে। সে প্রাণপণে নিঃশ্বাস নেয়, যতটা গন্ধ ভিতরে ঢুকিয়ে নেওয়া যায়।
শালা-
‘শ্যাম্পু করা ডাইনি।’
রাত ৫
সব জানালা বন্ধ। বন্ধ সমস্ত দরজাও। লাউড স্পিকারে
মেঝেতে রাখা রেডিও চলছে। গ্লাসে ঢুলে ঢুলে পড়ছেন বৃদ্ধ ভিক্ষু।
কোরাস কন্ঠে কলকাতা ‘ক’ বেজে ওঠে, “আলো আমার আলো ওগো, আলো
ভুবন ভরা”।
সিলিঙে চোখ রেখে ইন্দিরা গলা মেলায়, “আলো নয়ন ধোয়া,
আমার আলো হৃদয় হরা”।
কিছুক্ষণ পর কী মনে করে যেন উঠে দাঁড়ায়। এক এক করে
খুলে ফেলে টি শার্ট, পাজামা, যাবতীয় আন্ডার
গার্মেন্টস। মেঝেতে রাখা রেডিওটার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, গ্লাস হাতে রেডিও
ঘিরে পাক খেতে শুরু করে ধীরে ধীরে। রেডিওর সাথে গলা মেলায়- “আলোর স্রোতে পাল
তুলেছে হাজার প্রজাপতি”। যেন হাজার বছর ধরে পথ চলছে এমন, কলকাতা ‘ক’ পাক খেতে খেতে নগ্ন
দেহে চিৎকার করে গেয়ে ওঠে “সুরনদীর কুল ডুবেছে
সুধা- নিছর- ঝরা”।
গান থেমে গিয়ে কারো গলা ভেসে আসছে রেডিও থেকে।
ইন্দিরা এক দৃষ্টিতে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে। হাতে খালি গ্লাস, মেঝেতে নগ্ন দেহের
ছায়া পড়ে আছে।
সিলিঙের দিকে
তাকিয়ে থাকাটাও একটা হবি। সিলিং থেকে ঝুলে পড়াটা?
বিকেল ১৩
শিশুর মতো বিকেল ফুটে আছে। তাতে চলে যাচ্ছে বাস, অটো। উড়ে যাচ্ছে দূর প্লেন। হারিয়ে যাচ্ছে ইন্দিরা। দিনের মধ্যে সকাল, রাত, সন্ধ্যে সবার নিজের
নিজের ঘর আছে, আছে বাবা মা, ঠিকানাও আছে। শুধু বিকেলের নেই, তাই বিকেলের মধ্যে
হারিয়ে যাওয়া যায়।
একা একা হেঁটে যায় ইন্দিরা রাস্তা দিয়ে। মসজিদের
গায়ে এসে পড়ছে আলো। তাকে অবাক হয়ে দেখা যায়। অবাক হয়ে দেখতে গিয়ে দেখে ফেলবার মতো কেউ নেই এই শহরে ইন্দিরার। তাই রিপ্লেস করা সহজ মেমরিদের। বাঁ দিকের কফি স্টল থেকে কফি
নিয়ে রিপ্লেস মেমরি নং ২৩, বাটার শো রুমে উইন্ডো শপিং করে রিপ্লেস মেমরি নং ৩৫,
গোলাপি ফুলের উপর হেঁটে যেতে যেতে রিপ্লেস মেমরি নং ৪৪। শহরের রাস্তা দিয়ে ইন্দিরা
হেঁটে হেঁটে যায়, “মেমরি আছে গো, আছে মেমরি?” সকল মেমরি ফুরালে ঘরে ফেরে ইন্দিরা।
শহরটাকে স্মৃতিহীন করে ফেরা গেছে। স্মৃতি দিয়ে স্মৃতি মুছে বিছানায় শুয়ে সিলিঙে
চোখ রাখে সে, শব্দ-
শব্দরা কিসে
মোছে, হ্যাঁ? বলি, শব্দরা মোছে কিসে?
*ঋণ- শ্রীজাত
আহা দারুণ!
উত্তরমুছুনপড়ার পর আরো বেশ কয়েকবার পড়ার ইচ্ছেটা মুছে গেল না!
উত্তরমুছুনeta kabita ba muktogoddo-o hote parto....etotai bistar lekhatar...
উত্তরমুছুন