আলাপ
আলাপ
ধোয়া-মোছা লেখপট
আঁধার পলাশ!
আছি
বহমান
আহির-ভৈরব।
আমার গলিত লাভার লাবণ্যে
আমার বিশ্বের কঠিন
সুন্দর।
ফিরে আসা
নিজেকে হারিয়ে ফিরে আসি।
এবার চোখের গানে ভাসুক সাহারা।
হারানো সুবাসে কলরব
কে বাজায়?
ঊষার গভীরে
বিভাসের চোখ
প্রদীপ জ্বালছে
মাটির উৎসব।
গভীরে আলাপ হবে।
ব্যথিত বিকেল
ব্যথিত গন্ধের এই মুখর
বিকেল
শীতে শুষ্ক পাতার মর্মরে
পূরবীর ঢেউ।
কতকাল বৃষ্টি, বৃষ্টি
নেই।
বৃষ্টি না হলে
সারা দেহে পাকা ধান
কোথায় নগ্ন করে মাটির
লবণ?
অতি দূর নক্ষত্রের স্বাদ
নিমীলিত হরিণের চোখে।
তবু কাল, মহাকাল গোপন
গভীরে
কপোতের কম্বু কন্ঠে
উন্মন করে
অন্ধকার চৈতে চৈতে
সূর্যের সৌরভ।
তাই রাতজাগা মরু কন্ঠ
ডানার চাতক
একা – আকাশ বিহার।
একা একা ঘরে ফেরা
পাথরের অন্ধকারে—
আষাঢ়ে
একদিন মেঘেরা আসবে।
বাতাসে আলাপে
ভোড়ের কুঁড়ির মতো
কেঁপে কেঁপে
ফোটার আহ্লাদ।
আষাঢ় আষাঢ়ে এলো--
অলকার গভীরে ঘর
ভেঙে যাচ্ছে
মেঘের ডানার
কলরব।
বিরহ
ঝড়ের কেতন
নিবেদনে নতজানু।
অপলক পাতার নিঃশ্বাস
ফোটা পাপড়ির
শিহরণ
প্রথম বর্ষার জলে
পূরবীর আল্পনা
নদী সেও
থেমে নেই।
ঝড়! থেকে – থেকে – থেকে
রাতভর হেঁটে ফিরে গেল!
শিব-রঞ্জনী
ধূতরার নীল চোখেই বেজেছে
প্রতীক্ষায় পাহাড়ী
বালিকা
অতসী সকাল।
নর্ম লীলাস্থলী,
পুষ্পিত আবেগে
পদ্মবীজ মৃদু দ্বন্দ্ব
অতনু-সেতারে
ধনু পুষ্পসজ্জা যথাযথ
অপেক্ষা পলক
আলাপের কোলাহলে
পাহাড়ের বাঁকে
পায়ে ধ্যানী ডমরু
নিক্কন!
ক্রন্দন
তাপসী বালিকা।
নদী চাই – অগস্ত্য
গন্ডুষ!
প্রতিজ্ঞা –
সে যে বৃক্ষময় শবরী
সবুজ।
তুমি তো নদীই!
তবে কেন নদীর পিপাসা!
মিলবার মেলাবার যোগে
সবুজক্রন্দন!
মা
মাকে ভোলাই সহজ।
সে তো আর তুমি নেই –
কবে আমি হয়ে গেছি।
বাইরে সবাই তৃতীয় পৃথিবী
দ্বীপমালা অথৈ –
গভীরে তুমি মা – সে আমিই
–
জন্মদিন – সে আমার মধ্যে
তোমারই
প্রতি পাতার সবুজে কী
নদী যে বাজে!
আমার গভীরে চলা
কত দূরে এলে তুমি
তোমার সমুদ্র, তরঙ্গ অথৈ
–
এবার তোমার মুখ – মেলা –
আমার দু’চোখে
সবুজের কল্লোল মল্লার।
শিশিরে সূর্যের নাচ।
আমি যাব
আমি ভালো নেই –
না-এর বাকল জড়াচ্ছে
আমাকে
আমি যাব। আমনের
সোনা-শীষে।
কেউ ভালো নেই।
পাতাঝরা গাছ – কাঁপাচ্ছে
আমাকে।
আমি যাব। পলাশের
পৃথিবীতে।
চলে যাব
আমি চলে যাব। পেয়েছি
শমন।
খুলে ফেলেছি নিজেকে।
ভারহীন নির্জন
মুখোমুখি অপলক।
উজ্জ্বল আঁধার
পাতাহীন গাছে গাছে
ভিড় করে আছে।
আমি চলে যাব – মনে মনে –
বোধের সুরতরঙ্গ
মননে – বিজনে
আম্রকূটে
রেবা তার তিরতির জলে
চোখের বিলাসহীন
তরতাজা
দুলালি সে মেয়ে,
এক্কা-দোক্কা খেলতে
খেলতে
ঝাঁপিয়ে পড়েছে গভীরে
গহনে।
পথের ইশারা – পথে পথে,
বনে বনে
সবুজহাসির পাহাড়ে পাহাড়ে
সোনালি আমের আকুল আবেগে,
কখন যে রেবা
নর্মদা হয়েছে
বনের কিরাত তারই খবরে
আনমনা।
তার দেহের সৌরভ
কবে যেন
যক্ষের আকুল চোখে
ঘুঙুরের কুচিপুড়ি।
আকাশে কোথাও মেঘ নেই
মনের আকাশে অনেক অনেক
মেঘ
নর্মদার শালের প্রবাহে
পাখা মেলে
আমি যেন
যক্ষ সেই
আমার আমিই –
মানসী-অলকা
এক অঙ্গে দুই আমি
বিরহ-বেহাগ।
আছি
শিকড়ে লবণ নেই, সূর্য
নেই।
সারা দেহে পাতায় পাতায়
কী যে নীল ব্যথা, গভীর
ক্রন্দন
হা হা করে!
ঘুণপোকা ধীরে হাঁটে
প্রতি ইঞ্চি আগ্রাসী
মিছিল।
তবু অন্ধ
দুটোটির গভীর বয়ানে
আলো ধরে।
আছি। তাই তুমি আছ।
শবরী সংকেত
পথের পাশেই লতিয়ে উঠছে
বুনো লতা। সহজ মিথুন।
পাতায় খোদাই
সন্ধ্যাভাষা।
সবুজ আলোকে লতা
সহজ সুন্দরী।
পাহাড়ের শবরী-বালিকা।
লতানো আনন্দ
উপচে পড়ছে মুকুলিত
আলোকতরঙ্গে।
শবর ভুজঙ্গ চোখেই শুনছে
সবুজ সেতার।
জন্মগন্ধ
জন্মগন্ধ
শিকড়ে লবণে অর্কেষ্ট্রা
সোহিনী-নিশান।
প্রদীপা আমি’র পাতা
দ্রাক্ষার সবুজে।
নিভৃত আচার আলাপে
দাঁড়িয়ে।
নদী
সহজ জলেই অমলিন।
অযোনি আদিমদল – শিনানে
উন্মুখ।
অন্ধকার বাজাচ্ছে আকাশ।
কী একটা পাখি খুঁড়ছেই –
তারার নিঃশ্বাস শোনা
যাচ্ছে
এবার স্বাতীই বুঝি ঝাঁপ
দেয়!
জন্মগন্ধ
মাটির কলসে সমুদ্রই।
সারা শরীরের ঝড়ে আলাপে
প্রদীপ।
গন্ধ অতনু শরীর
সুরের শিখায়।
যুগলবন্দী
পাথরের প্রশংসা জলের –
জল পাথর পেলেই লতা
জড়িয়ে চুম্বন খোঁজে।
জল বয়ে যাচ্ছে
খোদাই করছে – গ্রাফিকের
বসন্ত-বাহার।
পাথর – কঠিন তরঙ্গের
নিকষ সানাই।
চাঁদ
মেঘের আকাশ
চাঁদ বোরখা পরেছে।
রাতের সমুদ্র
হা হা করছে পিপাসা।
চাঁদ লাফ দিলে
সাঁতার জলের ভুঁই।
আকাশে হাঁটছে
চাঁদের বিভাষ।
দুই আমি
সেই চাঁদ এসেছে আলাপে
বিছানার পাশে।
ধ্বনি –
ওই, বসি মুখোমুখি।
বাতাস দাঁড়িয়ে।
গভীরে ঘোমটা খুলি
দুই আমি চেয়ে আছি
চাঁদ অপলক।
পিতা
দিনরাত তোমার চোখের বেড়া
কাচের মতোই আড়াল করেনি
আমার অকুল-অমল অরণ্য।
আমি তাই নির্জর হরিণ।
তোমার পালনে সহজের জল
গভীরে লালিত বোধের সোহাগ
দেহে বৃক্ষসজ্জা সূর্য
নিয়ে খেলা
আমি তাই সহজ বাউল।
সহজ
একটু সহজ হলে পাথর গানের
দু’ চোখের আকুতি লতাই
যেন
তারপর অনাবিল নদী।
অবগাহনে পুলক। তাকানো
সাগর –
একটু সহজ হলে প্রতিদিন
লহরি-পহর।
বদ্ধ কপাট খুললে
হাওয়ার এলোমেলো উড়ো খৈ
অনেক গোবিন্দের বাউল
বাগান।
সহজের সহজ জলই
ঘাসের মতোই সবুজ শিখার
ডানা।
প্রতীক্ষায়
সেই যাওয়া। শুধু যাওয়া।
চলা বাজে না।
শুধু চোখই শুনেছে ব্যথা –
পায়ের।
আবার পথেই, কেউ কি আসে?
আসে, আসে না।
বুক আঁকছে ছবি।
এবার খোলা। দরজা খোলা
আলো শুনুক গন্ধ
তার ফোটার বোবা কান্না।
আজ পথেই কান পেতেছি
কেউ কি আসে?
আসে। আসে না।
দেওয়াল না ভাঙে
সব কি সবাই জানে!
কেউ জানে। কেউ জানেই না।
যে জানে, জানেই
তার দায় নেই
তার – কোলাহলে
যার জানা নেই – জানেই না
পাতা তুলে গন্ধ কোথায়!
সেই কেন নেই পথের পাতায়
সবাই হাঁটছে
নিজের গভীরে – দেওয়াল না
ভাঙে।
রবীন্দ্রনাথ
যাদের রবীন্দ্রনাথ নেই
তাদের পৃথিবী কী, কেমন?
আকুতি চলার
আমার পিপাসা, আলো
সব চলে গেলে
কোথায় দাঁড়াই
আর্তি বোধের।
আলো থেকে আলো নিলে
আলো সনাতন জীবনের
অন্ধকার
কেবল ক্ষণের।
রবীন্দ্রনাথের অন্য নাম আলো
ডানায় ডানায়
সশিখা উত্তর।
শ্রাবণে
আজ মেঘ নেমেছে মাটিতে
চিরকালের বুকেই।
লিপি – হরপ্পার গন্ধে ভেজা।
পাথরও শিনান করে।
রাই
ফুটে আছে –
যৌবনের সূর্যমুখি।
দেখা হলো।
তুমি? কে তুমি? কে?
হাসির লহর।
আমি রাই। শুধু ফুল।
বলতে বলতে
পূরবীর আবডালে
নতমুখ আলোর বিরহী!
বাইশে শ্রাবণ
বাইশে শ্রাবণ
এক নৌকো আলো
নতুন গাছের –
“কে ডাকিছে বুঝি”
ওপারে যাবার
সীমানা ভাঙার!
বাঁশি
মাঝে মাঝে দেখা হতো।
তার হাসি
পাতার সেতারে বাজে।
তার চোখে—
এই আমি, তোমাকে বাজাই
আমি নেই –
তুমি নীরবের।
তারপর
পরদার পারে
ভুবনের ঢেউ।
কে যে জানে –
বাঁশি বাতাসের
গভীরে নিজেই বাজে।
একা
আমি নিজেই পাঁচিল দিয়েছি
দরজা বন্ধ করেছি গভীরে।
আজ যাব পথের মিছিলে —
বাইরে বাতাস আবেগের হাত বাড়িয়েছে
আমার পা পুষ্পিত পাথর
দূরের আলোয় আর কুলায় না।
পাঁচিল দিয়েছি ভেঙে
দরজা খোলাই
তবু একা। এলোমেলো –
পত্রপুটে
বিজুরি। বিজুরি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন