সম্পাদকীয়
প্রকাশিত হলো
'কালিমাটি অনলাইন' ব্লগজিনের তৃতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা। ক্রমিক সংখ্যা ২৬। সম্পাদকীয়র
শুরুতেই প্রয়োজনীয় দু' একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। 'অণুরঙ্গ' বিভাগটি
যখন শুরু করা হয়েছিল, তখন আমরা জানিয়েছিলাম, এই বিভাগে নিয়মিত ভাবে ছোট নাটক
প্রকাশ করা হবে। কেননা আমরা মনে করি যে,
নাট্যসাহিত্য বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম মুখ্য ধারা। এক সময় বাংলা গদ্য
সাহিত্যের পাশাপাশি নাট্যসাহিত্য সমান জনপ্রিয় ও সমৃদ্ধ ছিল। বিশেষত সেইসব নাটক
মঞ্চস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্য রূপেও পাঠক-পাঠিকাদের কাছে সমাদৃত হয়েছিল। পরবর্তী
সময়ে মঞ্চস্থ হওয়ার জন্য অসংখ্য বাংলা নাটক রচিত হলেও পাঠক-পাঠিকাদের কাছে কিন্তু
তা পাঠ্য রূপে বিশেষ গৃহীত হচ্ছে না। এর
কারণ কি, তা সাহিত্য সমালোচকরা সঠিক বিশ্লেষণ করতে পারবেন। আমরা সেই
বিতর্কে আপাতত প্রবেশ করছি না। বরং আমরা শুধু চেয়েছি, বাংলা নাট্য সাহিত্যের
ধারাটি আবার যেন সজীব হয়ে ওঠে। প্রেক্ষাগৃহে নাটক দেখে নাট্যরস উপভোগের পাশাপাশি
যেন নাটক পাঠ করেও তার রস আহরণ করা যায়। কালিমাটি অনলাইনের পাঠক-পাঠিকারা জানেন
যে, বেশ কয়েকটি সংখ্যায় 'অণুরঙ্গ' বিভাগে আমরা অনেকগুলি নাটক প্রকাশ করেছি এবং
তাঁরা সেজন্য আমাদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন। কিন্তু তাসত্ত্বেও আমরা স্বীকার করছি
যে, সম্প্রতি কয়েকটি সংখ্যায় 'অণুরঙ্গ' বিভাগটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি, কেননা
আমাদের হাতে প্রকাশযোগ্য কোনো নাটক ছিল না। আমরা তাই কালিমাটি অনলাইনের
পাঠক-পাঠিকাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই, আপনারা যাঁরা বাংলা নাটকের সঙ্গে জড়িত
আছেন, মঞ্চস্থ করার জন্য বাংলা নাটক রচনা করছেন, তাঁরা কালিমাটি অনলাইনের 'অণুরঙ্গ'
বিভাগের উপযোগী নাটক পাঠিয়ে এই বিভাগটিকে
সজীব ও সমৃদ্ধ করে তুলুন। আমরা আশা করি, বাংলা ভাষার নাট্যকাররা আমাদের এই অনুরোধে
সাড়া দেবেন ও সহযোগিতা করবেন। সেইসঙ্গে কালিমাটি অনলাইনের অন্যান্য বিভাগের জন্যও
লেখা ও ছবি পাঠাতে অনুরোধ জানাই। আপনাদের ভালো লেখা প্রকাশের জন্য আমরা দায়বদ্ধ।
'কালিমাটি'(মুদ্রিত)
পত্রিকার শততম সংখ্যা পেরিয়ে যাবার নেপথ্যে যে সব অসাধারণ ব্যক্তিত্ত্বের স্নেহ
ভালোবাসা শুভেচ্ছা অনুপ্রেরণা সহযোগিতায় প্রতিনিয়ত ঋদ্ধ হয়েছি, তাঁদের মধ্যে
অনেকেই আজ আর নেই। অবশ্য তাঁদের শরীরী অনুপস্থিতিই অনুভব করি; কিন্তু তাঁরা সবাই
অত্যন্ত গভীর ভাবে ছড়িয়ে আছেন আমার অস্তিত্বে ও চেতনায়। সম্প্রতি আবার হারালাম
আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও প্রণম্য ব্যক্তিত্ব প্রভাতরঞ্জন রায় মহাশয়কে। গত ১লা জুন
সন্ধ্যায় তিনি প্রয়াত হয়েছেন। ১৯২৮ তাঁর জন্মসাল। প্রায় ৮৮ বছর বয়সে চিরবিদায়
গ্রহণ। তাঁর মরদেহ দান করা হয়েছে চিকিৎসাশাস্ত্রে গবেষণার জন্য। 'কালিমাটি'
পত্রিকার জন্য তাঁর যে কী বিশাল আন্তরিক অবদান, পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্কিত সবাই
সেসব কথা জানেন। তাঁকে আমি সম্বোধন করতাম 'প্রভাতদা' নামে। কিন্তু তিনি বয়সে ও
মর্যাদায় ছিলেন আমার পিতৃতুল্য। কর্মজীবনে প্রথমে তিনি ছিলেন ত্রিপুরায়।
পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যায় কিছুদিন। তারপর কর্ম জীবনের শেষদিন পর্যন্ত জামশেদপুরে।
টাটানগর রেলওয়ে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন
তিনি। আর তাই সবার কাছে পরিচিত 'মাস্টারমশাই' সম্বোধনে। অবসর গ্রহণের পর তিনি কলকাতায় বসবাস করতেন। আদর্শ
শিক্ষক ছিলেন তিনি, যা এযুগে একান্তই বিরল। আর ছিল সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর
অচ্ছেদ্য সম্পর্ক। অসংখ্য সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি নিবিড়
ভাবে জড়িয়ে ছিলেন। অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল তাঁর। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই
সমান দক্ষ ছিলেন। দুই ভাষাতেই অনেক কবিতা ও গদ্য লিখেছেন। আর সাহিত্য সংস্কৃতি
ভাষা সমাজ শিক্ষা ও বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর ছিল অনন্য মৌলিক চিন্তা ভাবনা।
যাঁরাই তাঁর সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য লাভ করেছেন, তাঁরাই তাঁর সেই চিন্তা ভাবনায়
জারিত হয়েছেন, মুগ্ধ হয়েছেন। আজ এই অনন্যসাধারণ ও অনন্যসুন্দর ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে
খুব স্বাভাবিক কারণেই আমরা অভিভাবকহীন হয়ে
পড়েছি। আর আমি ব্যক্তিগত ভাবে হারিয়েছি আমার মাথার আরও একটি বটবৃক্ষ।
আপনারা সবাই ভালো
থাকুন, সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
দূরভাষ যোগাযোগ :
0657-2757506 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main
Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন