প্রতিবেশী
সাহিত্য
এদুয়ার্দো
গালেয়ানোর অণুগল্প
(অনুবাদ :
জয়া চৌধুরী)
লেখক পরিচিতি
“শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয় কিন্তু, কিছু
ইউরোপীয় দেশও পৃথিবী জুড়ে স্বৈরতন্ত্রের বীজ রোপন করেছে। আর তারাই এমন ভাব করে যেন
তারাই শেখাবে গণতন্ত্র কি?”
এদুয়ার্দো খেমান উখেস গালেয়ানো ওরফে
এদুয়ার্দো গালেয়ানো ১৯৪০ সালে উরুগুয়ের রাজধানী মন্টে ভিডিওতে জন্মগ্রহণ করেন।
লাতিন আমেরিকার সবচেয়ের শক্তিশালী লেখকদের
অন্যতম গালেয়ানো একজন সাংবাদিক-লেখক ছিলেন। ১৯৭১ সালে লেখা তাঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ
বই ‘লাস বেনাস আবিয়েরতাস আমেরিকা লাতিনা' বা 'লাতিন আমেরিকার খোলা শিরারা'। এই
বইটি আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং চিলেতে
নিষিদ্ধ করে দেয় তৎকালীন স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। এছাড়া লাতিন আমেরিকার ইতিহাসের একটি জ্বলন্ত দলিল, ১৯৮৪ সালে
লেখা তাঁর আর একটি বই 'মেমোরিয়া দেল
ফুয়েগো' বা 'আগুনের স্মৃতি' তাঁর অন্যতম মহান কীর্তি। সারাজীবন বিচিত্র পেশায় কাটিয়েছেন তিনি।
কখনো স্কেচশিল্পী, কখনো আবার চিত্রকর, বার্তা দূত, টাইপিস্ট, ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার
ইত্যাদি। তিনি তিনবার বিবাহ করেছিলেন। এই বছর গত ১৩ই এপ্রিল ২০১৫ তিনি লাংস
ক্যান্সারের কারণে প্রয়াত হয়েছেন। ।
নারীরা
সেন্ট জন ক্রিসোস্তোমো বলতেনঃ “প্রথম নারী বলেছিল - সেই প্রথম
পাপ ঘটাতে ইন্ধন জুগিয়েছে"। সেন্ট আম্ব্রোসিও শেষ করতেনঃ “যদি কোনো নারীকে
নতুন করে বলতে অনুমতি দেওয়া হয়, সে আবার
পুরুষের জন্য ধ্বংস ডেকে আনবে।”
ক্যাথলিক গির্জা তাদের শব্দগুলো বলতে বাধা দেয়। মুসলমান উগ্রবাদীরা
তাদের যৌন বিকৃতি ঘটায় আর তাদের মুখ ঢেকে রাখে। ইহুদীরা খুব গোঁড়া, তারা দিন শুরু
করে কৃতজ্ঞ হয়ে ধন্যবাদ প্রকাশ করতে করতে। “ধন্যবাদ প্রভু, আমাকে নারী করে না
পাঠানোর জন্য।”
তারা সেদ্ধ করতে জানে।
তারা এমব্রয়ডারি করতে জানে।
তারা যন্ত্রণা সইতে আর রাঁধতে জানে।
বাধ্য মেয়েরা
নিঃস্বার্থ মায়েরা
দাতা স্ত্রীয়েরা
হাজার লক্ষ বছর ধরে এই রকমই হয়ে এসেছে। যদিও তাদের অতীত
থেকে আমরা কমই জানতে পারি।
পুরুষ কন্ঠের প্রতিধ্বনিরা।
অন্য শরীরের ছায়ারা।
যোগ্যের মহিমাকীর্তন করার জন্য, চেয়ারের পিঠের ব্যাক রেস্টটার শোচনীয় ছেঁড়া
ফাটা অবস্থান থেকে নারীকে খাটো করতে করতে লোকে বলে, “সব কীর্তিমান পুরুষের পিছনে
একজন নারী থাকে।”
ধর্মতত্ত্ব
খ্রিষ্টানদের ঈশ্বর হলেন শিশু বয়সের ঈশ্বর। তিনি
ভালোবাসাবাসি করেন না। পৃথিবীর সব ধর্মের সব ঈশ্বরের মাঝে সম্ভবত তিনি একমাত্র
ঈশ্বর যিনি কক্ষনো ভালোবাসাবাসি করেন নি। ওনার কথা যতবার আমি ভাবি ওনার জন্য আমার
বড় কষ্ট হয়, আর আমি ওঁকে ক্ষমা করে দিই এই জন্য যে, তিনি মহান দন্ডদাতা পিতাশ্রী, মহা বিশ্বের পুলিশ কমিশনার।
শেষমেশ ভাবি শেষের দিন উনি নিজেও আমার বন্ধু হতে চাইবেন। সেইসব সময় যখন আমি ওনাকে
বিশ্বাস করতাম যে, কোনোদিন তিনিও আমাকে বিশ্বাস করবেন। আর কখনো কখনো আমি তাঁর দুঃখী গোপন কথাও শুনতে পেতাম। মনে হতো
তিনি যেন আমার কানের গোড়ায় ফিসফিস করে
বলছেনঃ “আদম এতটা নিষ্ঠুর ছিল বলে আক্ষেপ হয় আমার। ইভ এতটা কানে খাটো ছিল বলে আমার
দুঃখ হয়। আর আমি নিজেকে এসব বুঝতে দিইনি ভেবেও আমার খারাপ লাগে। ওরা বিশ্বাস
করেছিল যদি সেটা কোনো পাপ হয়, তাহলে একটা পাপের জন্য শাস্তি পাওয়া যায়। আমি বলেছিলাম, “যে ভালোবাসে না, সে পাপ করে”। আর ওরা
বুঝল, “যে ভালোবাসে সে পাপ করে।” যখন
ঘোষণা করেছিলাম, ফূর্তির প্রেইরী বনভূমি; ওরা বুঝেছিল, “সেটা চোখের জলের উপত্যকা”। আমি বলেছিলাম, “মানুষের
অ্যাডভেঞ্চার হলো যন্ত্রণা কিংবা নুন যা জীবনকে আনন্দ দেয়; আর ওরা বুঝল, “শরীরধারী হয়ে আনন্দ উপভোগ করার জন্য কিংবা
পাগল হবার আনন্দটাকে উপভোগ করার জন্য আমি ওদের দোষ দিচ্ছি।”
নিরাপত্তা
ও দেখেছিল আমাদের ঘুমোতে। স্বপ্নে এলে না আর আমি আমরা
দুজনে কোনো এক বিমানবন্দরে অন্য
প্যাসেঞ্জারদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কী জানি কোন্ বিমানবন্দর! কারণ সব বিমানবন্দরই কমবেশি একরকম।
আর প্রত্যেক প্যাসেঞ্জারের বগলে একটা করে
বালিশ। একটা মেশিনের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। মেশিনের
নিচে বালিশগুলো চলে যাচ্ছিল আর মেশিনটা আগের রাতে দেখা স্বপ্নগুলো পড়ছিল। পাবলিক
ল’ এন্ড অর্ডার-এর একটা বিপজ্জনক স্বপ্নডিটেক্টর ছিল সেই মেশিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন