ধারাবাহিক উপন্যাস
যে চিঠি অতিশূন্যতাকে
পড়তে
(৫)
(৫)
তিতলি, মেদিনীপুর থেকে ফিরতে ফিরতে বলেছিল যে কথাটা, সেটা মনে করতে গিয়ে দেখলাম আমার মনেই পড়ছে না।
সে কথার বদলে অন্য কোনো কথা বসিয়ে নেওয়াই যায়। সেভাবেই তো রচনা হয়ে থাকে! বস্তুত
কথার মূল্য মনে রাখা বা না রাখা দিয়েও
নির্ধারণ করা চলে। যে বলল, তার কাছে কথাটা খুবই মূল্যবান হতেই পারে, যে শুনল, তার কাছে
যে হবেই তার কোনো মানে নেই।
এইখান থেকে খিদে সংক্রান্ত কথাগুলো এসে থাকে।
খিদে অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। সে বিষয় নিয়ে কথা মানুষ বলেই থাকে। এ
দেশে অজস্র অসংখ্য লোক বলে চলেছে। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। কিন্তু শুনছে কে? যারা ক্ষুধার্ত
তারা পরস্পরের কথা শোনার ইচ্ছে রাখে না।
যারা খেয়ে ফেলেছে বা বেশি খাচ্ছে তারাও শুনতে চায় না। অতএব কথা বলা হলেই শো না হবে বা গুরুত্ব পাবে বা
মনে রাখা যাবে, এমন কোনো মানে নেই।
কথাটা তিতলির কাছে মূল্যবান হয়ে থাকতে পারে, আমার কাছে নয়। তাই কথা মনে
নেই।
এখান থেকে তিতলি ও আমার সম্পর্কের একটা
লাশকাটাঘর হতে পারে। সে হোক! যার ইচ্ছে সে করুক। আমার কিছুই করার নেই। তিতলি এবং আমি জীবিত। সকালে আমরা
দাঁত মাজা থেকে রাত্রে চুল আঁচড়ানো সব করে থাকি। যে যেখানেই থাকি এ সবের মধ্যে
দিয়েই যাই। ট্রেন থেকে নেমে তিতলি উঠে গেল একটা বাসে, আমি
চললাম অরূপের বাড়ি। অরূপের বাড়ির সামনে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। আমি খুব যত্ন করে গর্তটা পেরোতে গিয়েও হড়কালাম। বাঁ পা-টা স্লিপ করে গেল। ল্যাঙড়াতে ল্যাঙড়াতে অরূপের ঘরে ঢুকলাম। ঘরটা একেবারে
নরক হয়ে আছে। এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে মদের বোতল, সিগারেটের
নেভানো টুকরো। অরূপ মাটিতে উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। তার ওপর পা তুলে শুয়ে আছে সমীর।
ওদের ঘাড়ের কাছ দিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে দেবু। আমি কোনো রকমে ব্যাগগুলো রাখলাম। পা'টা বেশ ব্যথা করছে। ফ্রীজটা খুললাম। বরফের ট্রে-টা
বের করে সেটাকে ভাঙব বলে ওই ল্যাঙচাতে ল্যাঙচাতেই রান্নাঘরে ঢুকলাম। ছুরিটা দরকার।
একটু জল দিয়ে ট্রে-টা হাল্কা মচকে বের করা গেলে ভালো,
না হলে ছুরি দিয়ে মেরে ভাঙব। রান্নাঘরে
ঢুকতেই ভক করে একটা গন্ধ এসে লাগল নাকে। সকালের
ট্রেনে এসেছি। পেটে অল্প খাবার আছে মাত্র। গা'টা গুলিয়ে উঠল।
কালকের রাতের খাবারের উচ্ছিষ্ট ভরে ফেলেছে
ডাস্টবিনটা। মাথাটাও লাগাতে পারেনি মাতালেরা। খোলা আছে। সেই সব খাবার গরমে ভেপসে, স্বল্প পচে গন্ধ বেরোচ্ছে।
দাঁড়াতে পারলাম না। বেরিয়ে এলাম। অরূপের শোবার ঘরের দিকে চললাম। শোবার ঘরের দরজা
বাইরে থেকে ঠেললাম হাল্কা করে। খুলে গেল। ভেতরের ঘরে শুয়ে পারমিতা আর সন্দীপ।
বিছানা ছাড়া বসার কোনো জায়গা নেই ঘরে। কোনোরকমে বসলাম। পা-টা
তে আলগা করে বরফ বুলোতে লাগলাম। পারমিতার গা থেকে মদের গন্ধ ছাপিয়েও আসছে চেনা
ডিওডোরেন্টের গন্ধ। দরজার দিকে ওই ঘুমোচ্ছিল। বরফ টুকরোটা হাত থেকে স্লিপ করে গেল।
সেদিনও স্লিপ-ই করেছিল। পারমিতার হাত থেকে। স্লিপ করে ওর
ম্যাক্সির ভেতর ঢুকে গেছিল। সন্দীপ তখনো আসেনি ওদের বাগুয়াটির ফ্ল্যাটে। গরম পড়েছে
বলে সামনে বসে গলায় বরফ ঘষছিল। হুইস্কিটা দু' পেগ করে দুজনেরই পেটে গিয়েছে। পারমিতা টুক করে সসেজ
হালকা ভেজে এনেছে। রান্নাঘরের গরম ভাঙবে বলেও বরফ ঘষছিল। হাত থেকে ম্যাক্সিতে ঢুকে
যেতেই লাফাতে লাফাতে ম্যাস্কিটা টান দিয়েছিল।
তারপরে আমার দিকে ফিরে অসহায় মুখ করে বলেছিল,
- বের করতে পারছি না।
বলে বসেছিল হাঁটুগেড়ে আমার সামনে। কখনো সময়
বিবেচনা চায় না। অগ্র পশ্চাৎ এ সব ভাবার জন্য ভাবায় না। পারমিতার বরফ খুঁজে
দিয়েছিলাম। পারমিতার বরফ গলে গেছিল। সন্দীপ যখন বেল বাজিয়েছিল তখন আমি হাফপ্যান্টে, পারমিতা ম্যাক্সিতে আলগা করে ঢুকে
পড়েছিলাম। সন্দীপ পারমিতার লিভ ইন পার্টনার। পারমিতা আমার পরিচিত। এভাবে বেশ
কিছুদিন আমরা আমাদের পোশাক আশাকে ঢুকতাম
এবং বেরোতাম। আমার সঙ্গে তিতলির আলাপ হয়নি তখনো। বিতস্তা বলে যে কেউ আছে তা জানাই
ছিল না। কিন্তু কখনো আমার মনে হয়নি পারমিতার সঙ্গে থাকা যায়। পারমিতারও তাই। ওই যে
নির্লিপ্ত মুখ করে পারমিতা উঠে গিয়েছিল, দরজা খুলেছিল,
এই দৃশ্যের মধ্যেই আমি ওকে দেখে ফেলেছিলাম।
পারমিতা উঠে গিয়ে দরজাটা খুলল। যাবার সময় ওর
পায়ে কোনো বাড়তি গতি ছিল না। একটানে ম্যাক্সি পড়েছিল। আমি বিছানা থেকে নেমে নিচে
বসতে গিয়ে দেখছিলাম চাদরটা কুঁচকে আছে কী
না! চাদরে যে বীর্যের
দাগ লেগে আছে, দ্রুত জলের বোতল থেকে জল হাতে নিয়ে তা
মুছছিলাম। এর কোনো দিকেই পারমিতার ভ্রূক্ষেপ ছিল না। দেখতে পাচ্ছিলাম যে ও দরজা
খুললো। খুলে সরে এলো। সন্দীপ
ঢুকতেই ওকে বলল,
- শোন, আজকে মুদির দোকান থেকে হিসেব দিয়ে গিয়েছে!
বলে ঘুরে চলে গেল বাথরুমের দিকে। উত্তর শোনার
অপেক্ষাও করল না। সন্দীপকে এখানে দৃশ্যে আমি দেখলাম, একেবারে আঠা দিয়ে সাঁটা আছে। দরজা খোলা এবং
বন্ধের মধ্যে ওর অস্তিত্ব। এখানে ও ছবি হয়ে থাকছে। আমি পারমিতার এই অভ্যস্ততায়
অভ্যস্ত ছবি হতে চাইনি।
এভাবে একদিন আমি বিতস্তাকেও দেখে ফেলি। সেই
হাসপাতালে। বিতস্তার বন্ধু এসেছিল। তার আগে অবধি বিতস্তা পাশে পাশে হাঁটছিল। পাশে
বসছিল। বন্ধু এসে যাবার পরেই বিতস্তা সতর্ক হয়ে গেল। তার আচার আচরণ সব বদলে গেল।
একটু দূরত্বে যেন সব সময়। আমার থাকার ইচ্ছে ছিল, কথাও ছিল। কিন্তু পেশীগুলো, স্নায়ুগুলো চাইছিল না। তারা দেখে ফেলেছে। তারা কোলাহল করছিল। যাবার আগে না যাবার ইচ্ছেটাও কাজ করছিল। সেও পা আঁকড়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে, কথা বলতে বলতে, বিদায়
বাক্যের একটু আগেই হঠাৎ-ই দেখলাম বিতস্তার হাতটা সরে যাচ্ছে
তার বন্ধুর হাতের দিকে। সরতে গিয়ে শূন্যে দুলে ফিরে এলো। আমি বিদায় জানালাম। শুধু তখনই শেষ বিদায়
জানাতে পারিনি।
খেলাটা এখানেই। একটা বস্তুর উপরে আলো পড়ে। সে
আলো প্রতিফলিত হয়ে আসে চোখের মণিতে। দরজা
খুলে যায়। সার দিয়ে তারা প্রবেশ করে অণু-পরমাণুময়। চলে
যায় মাথার ভেতরে। ব্যাখ্যাত হয়। আমরা দেখি। কী
দেখি? বিতস্তাকে আমি কখনো
দেখিনি। সেও আমাকে দেখেনি। এই অণু-পরমাণুর সংঘবদ্ধ ইমেজকে দেখাদেখি হয়েছে। তাই যখন খুঁজতে গেলাম তখন কেউ
কাউকে পেলাম না। আলো পড়ল। দেখা
গেল কে কোথায়! কিন্তু আসলে দুজনেই
সরে গেছি। ওই আলো পড়ার সময়টুকুতে বিদায় জানানো যায় না। বিতস্তাকে যখন দেখেছি তখন
বিতস্তার উপরে আমার আলো পড়তে শুরু করেছিল। আমার চাওয়ার আলো। সেই আলো যতক্ষণ না
তাকে আপাদমস্তক মাখছে ততক্ষণ তো সরা যাবে না, চলে না।
পিথাগোরাস বললেন,
- সৃষ্টির প্রথম হলো মোনাড।
- তারপর ডায়োড, ট্রায়োড। এভাবে
এলো সংখ্যা। সংখ্যা
থেকে বিন্দু। বিন্দু জুড়ে জুড়ে রেখা। রেখা
থেকে দ্বিমাত্রিকতা, তারপর ত্রিমাত্রিক অস্তিত্ব সকল। দেহ
সেখান থেকে। এবং অবশেষে চারটি মূল উপাদান - ভূমি, জল, আগুন, বাতাস! বিতস্তা এ সব দিয়ে তৈরি।
- এর মধ্যেই আছে মোনাড।
- মোনাড মানে যা মোনোস থেকে এলো।
- অর্থাৎ নিঃসঙ্গতা।
- বিতস্তা মানে নিঃসঙ্গতা।
পিথাগোরাস আগুন জ্বাললেন। ভক্ত ও শিষ্যরা আসবে।
পায়ের ব্যথাটা বরফে ঠিক কমলো না। একটা
সান্ত্বনা জুটল যা হোক! খাটের ধার থেকে আমি
উঠে পড়লাম। কাল যখন ঠিক করলাম ফিরে আসব,
তখন একবার গেছিলাম যুবতীর বিছানার পাশে।
বিছানা বলতে চাটাই-এর নিচে খড় দিয়েছে। তিতলি দু'দিন ধরে যথেষ্ট যত্ন আত্তি করেছে।
কালশিটেগুলো এখনো মুখের পাশে, চোখের নিচে। কাঁধের কামড়ের দাগটা আমি দেখতে পাচ্ছি। বাকি দাগের অবস্থা জানি
না। পা দুটো একটু হলেও নড়ছে।
যুবতী সামান্য নড়েচড়ে উঠল। হাতটা বাড়িয়ে একবার আমার হাতটা ধরল, তারপরে নিজেই ঠেলে সরিয়ে দিল। আমিও তো পুরুষ!
- আমরা রাজা হতে চাই! এ আমাদের ভেতরে রয়েছে!
- কবে থেকে?
- দলপতি হবার অভ্যাস থেকে।
- কিন্তু এককোষী থেকে তো নয়!
- নয় কি?
- সৃষ্টির শুরুতে যা ছিল না তাকে নিয়ে অভ্যাস করে ফেললাম কী করে?
- প্রাণ এবং অপ্রাণের মধ্যের ফারাক থেকে বোধহয়!
এখান থেকে একটি নিবন্ধ শুরু হতে পারে! তার আগে মজার একটা গল্প আমাকে
লিখতে হবে। খুঁজছি মজাটা। অনেকগুলো মজার গল্প পড়ে ফেললাম। গল্পগুলোর মধ্যে থেকে
কেমন যেন একটা পুড়ে যাওয়ার গন্ধ বেরোচ্ছিল। তখন একটা মজার গল্প লিখতে বসলাম। এক
সন্ন্যাসী ও শিষ্যের গল্প।
এক সন্ন্যাসী ছিলেন। তিনি এক কথায় সমস্যার
উত্তর দিতেন। এক কথার বেশি কথা তিনি বলবেন না, এই ছিল তাঁর রীতি।
একটি মেয়ে খুব দুঃখ নিয়ে এসেছিল সেই সন্ন্যাসীর
কাছে। তার প্রেমিক তাকে ঠকাচ্ছে।
সন্ন্যাসী বললেন, তুমিও ঠকাও!
খানিকক্ষণ পরে একটি লোক এলো। তার
স্ত্রী তাকে ঠকাচ্ছে। সন্ন্যাসী বললেন, তুমি ঠকিও না!
বহুদিন ধরে তাঁর কাছে শিক্ষা নিতে তাঁর সঙ্গ
করছিল এক যুবক। সে প্রতিদিন দেখে সন্ন্যাসী এমনই করেন। একই সমস্যার সমাধান
একেকজনকে একেকরকম বলেন। সে অবাক হয়, কিন্তু প্রশ্ন করে না। সেদিন আর পারল না। সে জানতে চাইল সন্ন্যাসী এমন কেন
করেন? একেকজনকে একই সমস্যার একেক উত্তর কেন দেন?
সন্ন্যাসী হাসলেন। বললেন, এক সমস্যার একরকমই সমাধান দিলে
যে আমার ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যাবে, ভাববে আমি কিচ্ছু জানি না!
আমি খাব কি?'
শিষ্য বলল, কিন্তু এতে ভালো বা খারাপ যা হচ্ছে, তাহলে তার সব
দায় তো আপনার! পাপপূণ্য
সব তাহলে আপনারই হচ্ছে। আপনি ঈশ্বরের কাছে যাবেন কী করে?'
সন্ন্যাসী হেসে বললেন, তুমি কি মনে কর ঈশ্বর আছেন?
শিষ্য একটু হতচকিত হয়েই বলল, অবশ্যই আছেন।
সন্ন্যাসী আবার হাসলেন। বললেন, তিনি যে সব কিছুর মূলে, তা
তাহলে নিশ্চয়ই মানো?
শিষ্য জবাব দিল, অবশ্যই মানি।
সন্ন্যাসী এবারে বললেন, তাহলে এটাও মানো নিশ্চয়ই যে
সমস্যাগুলো তিনিই তৈরি করেছেন? তৈরি করে নির্দিষ্ট লোকের জীবনে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন?
শিষ্য বলল, হ্যাঁ।
সন্ন্যাসী তখন বললেন, এবং তিনি আমাকে ও তোমাকেও তৈরি
করেছেন নির্দিষ্ট কাজের জন্য?
শিষ্য বলল, হ্যাঁ।
সন্ন্যাসী বললেন, তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে আমার ব্যবসার কাজ
আমি করি, আর তুমি তোমার সেবার কাজ কর। আর কোনো প্রশ্ন কোরো
না।
গল্পটা লিখে ফেলার পরেই সুনীলের বাড়ি থেকে রাস্তাটা নেমে যে মাঠে
আসে সেই মাঠের সাপ্তাহিক বাজারের মদের ঠেকে হাসির হররা উঠল। সকলে
সম্মিলিত কন্ঠস্বরে বলে
উঠল,
- জানি জানি! এই গল্পটা আমরা হাজার হাজার বছর ধরে জানি!
আমিও ওদের সঙ্গে হাসছিলাম। লাফিয়ে উঠে এলো একটি
ছেলে। হাফপ্যান্ট পড়া, গামছা কোমরে বাঁধা। তার কোমরের গামছা থেকে সে
একটা একনলা তামাঞ্চা বের করে আমার ঘাড়ে
ঠেকালো। বলল, সে একটা জোক্স বলবে এবং আমাকে হাসতে হবে। যেহেতু আমাকে হাসতে হবে অতএব আমি হাসিটাকে
তৈরি করে রাখলাম। ওর জোকটা বলা শেষ হতেই
হেসে উঠলাম। ঘাড়ের কাছের ঠান্ডাটা আমাকে হাসির দিকে ঠেলে নিয়ে গেছিল। হাসি শুরু হতেই ঠান্ডাটা সরে গেল। আমরা হাসি নিয়ে সরতে থাকলাম একটা পর্দা টানা চালার সামনে।
হাসতে হাসতেই শুনলাম ছেলেটি অনেকটা পুলিশ।
পুরোটা পুলিশ না। ওর মতো ছেলেদের
হাতে অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। ওরা
এলাকা সামলায়। এলাকা সামলাতে গিয়ে গ্রামের
ভেতরে কিন্তু ওরা ঢোকে না। জঙ্গলের রাস্তা চিনলেও একমাত্র আধা-সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ছাড়া ওরা
জঙ্গলেও ঢোকে না। এই ছেলেটা আজ বেশি চলে এসেছে ওরই গ্রামের একটা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে। মেয়েটা
ওকে দেখে মুখ ফিরিয়ে চলে গিয়েছে। পুলিশের মতো কাজ শুরু করার পর থেকেই মেয়েটা আর ওর
সঙ্গে কথা বলে না। তারপর থেকে এই মদ আর
শুয়োরের মাংসের মধ্যে ও বসে আছে। মাঝে মাঝেই বলছে, জুয়ো খেলবে।
এ সব শুনে আমরা সকলেই হা হা হো হো করে হাসছিলাম, যেমন জোক'টা শুনে। হাসছিলাম, হেসেই চলছিলাম। হঠাৎ
একজনের মনে হলো, আরে জোকারটা কই গেল? অমনি খোঁজ খোঁজ। খানিক পরে পর্দার
পেছনে দেখা গেল এক বিষণ্ণ বুড়োটে লোককে। সবাই ঝাঁপিয়ে ধরলাম তাকে জোকারের খোঁজ
পাওয়ার জন্য। বুড়োটে লোকটা ঘ্যানঘ্যানে এক স্বরে বলল,
-- কোথায় আর যাবে? যা হবার তাই হয়েছে ওর।
সেই হওয়াটাই জানতে চাইলাম আমরা। আবার
সেই উত্থানপতনহীন কন্ঠে বলল,
-- As usual : he got killed right after the joke
was told.
কিছুটা এগিয়ে দেখলাম, ছেলেটার দেহ পড়ে আছে।
বুকের কাছটায় একটা পুড়ে যাওয়া দাগ। নকশালবাদীরা ইনফর্মারদের ঘৃণা করে। শাস্তি দেয়।
ওকেও দিয়েছিল এর আগে। সেবার মেরেছিল হাতে। বারণ করেছিল। শোনেনি ছেলেটা। একটা
সাইকেল কিনবে ভেবেছিল। মেয়েটাকে
নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে মেদিনীপুর। এমন সব নানা টুকিটাকি স্বপ্ন যা বেতের ঝুড়িতে রাখা যায়।
তাহলেও তাদের দেখতে কখনোই আমদানী করা আপেলের মতো লালচে মিষ্টি হবে না, তবু দেখেছিল। এখন শুয়ে আছে।
মেয়েটির মুখ ফেরানো পেরিয়ে গিয়ে শুয়ে আছে।
এখন ও নিষ্প্রাণ। জড় বস্তুর মতোই অপ্রাণও। শুধু
একটা পাথরের চেয়ে অনেক দ্রুত ও পচে যাবে।
এর পর থেকে প্রাণ ও অপ্রাণের সম্পর্ক নিয়ে নিবন্ধটা শুরু হতে পারে। মজার গল্পটা
আমরা অনেকটা লিখে ফেলেছি লেখক-পাঠক যৌথতায়।
[ক্রমশ]
গল্পটা লিখে ফেলার পরেই সুনীলের বাড়ি থেকে রাস্তাটা নেমে যে মাঠে আসে সেই মাঠের সাপ্তাহিক বাজারের মদের ঠেকে হাসির হররা উঠল। সকলে সম্মিলিত কন্ঠস্বরে বলে উঠল,
বাকিটুকুর....
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। আপনাদের মূল্যায়ণের জন্য বাকীটুকুও আসবে।
উত্তরমুছুন