অ-ঘুম
সেদিন অনেক রাতে ইচ্ছের অধীনতা মেনে
উল্কাবৃষ্টি দেখব বলে চোখ খুলেছিলাম। টিভির খবর আর খবরের কাগজের পাতা টইটম্বুর ছিল
অনাস্বাদিত প্রাকৃতিক বিস্ময়ের স্বাদে। একটানা চোখ মেলেছিলাম।
কয়েকটা হাউই রকেট আর খান দশ তারাখসা বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখা ছাড়া বাকি রাত অপেক্ষায়
কেটেছে। বিস্ময় আসেনি।
সকলে বাড়ির ছাদে সকলের মতো
নামহীন তারাদের স্থিরতা চিনেছে। তার আগে এবং পরে চোখ বুজেছে যারা, স্বপ্নে দেখেছে
বিস্ময়কে ভীষণ নিজের মতো করে। সকলের দেখা আর সকলের বোঝা আলাদা আলাদা।
তাও সকলের রাতজাগা চোখ উড়ে যাওয়া ঘুম যৌথতা এনেছিল।
কৃত্রিম তবু বিস্বাদ নয়; এতগুলো দ্বিপদজীবী উন্নত মগজের জীব একসাথে বিস্মিত স্বপ্ন
দেখেছে।
অনেকের কাছে স্বপ্ন ছাড়া দেখার মতোন
কিছু নেই। এতটাই নিয়মিত চারপাশ – জীবন অভ্যেসে মিশে গেছে, তাই মানুষের
নড়াচড়া কথা বলাগুলো ভীষণ ঘুমের ঘোরের মতো লাগে।
পৃথিবীকে জানবার অধিকার ক্রমশ সীমিত হতে হতে খোলা আকাশকেও কেমন দমবন্ধ বন্দীনিবাস বানিয়ে
ফেলতে পারে। জানবার সুযোগ সীমিত আর জানাটাও বিপজ্জনক বলে মাছের মতোন
চোখ খুলে নিজ নিজ সাধনায় মেতে যেতে হয়। চোখ খুলেও ঘুমোনোর
মতো – মগজের নড়াচড়ায় হরতালের বাধ্যতা এনে অনেকেই প্রতিবাদ জানায় বিশ্বব্যবস্থার
প্রতি। কে জানায়, কাকে জানায়, কোথায় জানায় এসব
হিসাবগুলো এলোমেলো থাকে, জমা হয় না কোথাও। কিন্তু বাস্তবে পড়ে থাকে চোখ মেলে ঘুম।
চোখ বুজলেই ঘুম হয় না। চোখ খোলা থাকলেই বলা যায় না,
ঘুম নেই।
অতএব সেই পরিচিত
গল্পটায় ফেরা যাক। পরিচিত বলাটা বোধহয় ভুল, তাই নিয়মিত
বলা যেতে পারে, অথবা একটা Fable। বিশাল ঘন একটা জঙ্গল
আর একটা মাংসাশী বাঘ।
খিদে থাকলে খিদের ক্রীতদাসত্ব যেমন প্রকৃতির নিয়ম,
তাই তাকে অপরাধী বলা চলে
না। বনের হরিণ, হরিণী এবং হরিণ-শাবকরা
তার খাদ্য ছিল এবং প্রায়শই দেখা
যেত শিকারের পর কেউ কেউ ক্ষতদেহে সাড়হীন চোখ খুলে শুয়ে আছে।
ঘুম নেই চোখে আরও কারও। সঙ্গী অথবা সঙ্গিনী
হারিয়ে নিশাচর যন্ত্রণায় ঘুমহীন
পালিয়েছে তারা। তারপর একদিন যেমন হয়, জঙ্গলটাও বিক্রি হয়ে গেল।
বাজারের নিয়মের শৃঙ্খলাকে পরিচিতি জেনে সকলেই কিলোদর – মুদ্রার বিনিময় মাধ্যম।
হরিণের দল কচি ঘাস মুখে নিলে জিভে এলো লোনা বালি –
সিমেন্ট আর গাছের পাতা থেকে
বেড়িয়ে এলো ইলেকট্রিক তার। এখন রাতগুলো দিনের
চেয়েও আলোময় তবু, বাঘকে
শিকার করতেই হয় খিদের তাগিদে। Fableএর উপদেশে দেখা
গেল, বাঘটাও শুয়ে আছে হরিণের বুকে।
দাঁতের ফাঁকে কাঁটাতার – জিভে নির্বিকল্প
রেডিয়েশন। শিকার ও শিকারী দু’জনেই চোখ মেলে শুয়ে।
বড় বেশি আলো – ঘুম নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন