শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫

শ্রাবণী দাশগুপ্ত

সে এক চিলেকোঠা

একটা খুপরি জানালা পেলেই খুশি চিলেকোঠা। ধাঁধাঁ ঘুড়ি, হুই হুই পাখপাখালি, এরোপ্লেন...। চালটা উঁচু টিনের। ডিঙি মেরে, উঁচু হয়েও ছোঁয় না। একটু কম, একটু সামান্য কম। আবার মাথায় জলছাদ হয়নি। যা হয়, তেতে যায় বেশি। তখন আবার চোখ বুজে দুহাত ছড়িয়ে পাক খেয়ে পাখি পাখি ভাব বেশ আনিমানি জানি না ভালো ছেলে মানি না। তারপরে উড়ে চলল কোথায়, অবশ্য যতক্ষণ ঠোক্কর না খেতে হয়।
চিলেকোঠায় জানালা রাখা হয়নি।
ছোটকা ওখানে লুকিয়ে সিগরেট খেত। বড়দা আর বন্ধুরা - ভাগ ভাগ নিচে... চা পাঠা...। কাঁঠাল কাঠের দরজা দমাস বন্ধ।
হাঁটুঝুল ফ্রক উড়িয়ে হুলুস্থুলুস সিঁড়ি নামছে।
পড়তে বসিস না কেন? খালি ছাদে যাওয়া!
গৌ গাবৌ গাবঃ গাম গাবৌ গাঃ।
মাথা-বোঝাই কাকের কাটিকুটি। শেওলা গালে ফুটকি ফুটকি। বগলে ঘাম জমলে গায়ে গুমো গন্ধ...।
পরিষ্কার থাকতে পারো না, বড়ো হচ্ছ?
মার সব তাতেই খিটখিট... খিঁচুনি বুড়ি।

চিলেকোঠায় কেন জানালা নেই? আবার ওই বোকা কথাটা জিজ্ঞেস করে বিপদে পড়বে না? তা কেউ পাত্তাই দেবে না ভেবে সূর্‍যটা গলে গলে মাথাতে... জানালা থাকলে পোড়া গন্ধটা পেত না হয়তোসে তো রাখাই হয় না।
আয়নায় পায়ে মোটা মোটা লোম, বেঁটে বামন। চিলেকোঠার ছাদটা - আরে বাপরে কোথায় উঠে গেছে!
এ্যাই আমি কি মুটিয়ে গিছি?
এ্যাই আমি কি বেঁটে হয়ে গিছি?
চিলেকোঠায় জানালা রাখতে ভুলে গেছ কেন, এ্যাঁ?

ঘরটার যা দশানন দশা! ওই চ্ছেচল্লিশে এসে তাপ্পর ছাদখানাতে ফাঁকফোঁকর।  চারপাশে বাঁইবাঁই ঘুরছে আর উড়ছে নতুন একখানা হেলিকপ্টার। কী এস্মার্ট! এখানে হেলিপ্যাড নেই, তার দরকারও নেই। হেলিকপ্টার ঘুরছে আশেপাশেই। পাক খেয়ে খেয়ে যাচ্ছে।
আর এ-কটু... স্লাইট... পারবে পারবে! এসো এসো এসো...
ঝকঝকে গা চকচকে কাচ জানালা সবটা। ফেরেশ এয়ার দেখ, শোঁকো। চিলেকোঠা অন্ধকার ভেঙে ডিঙ্গি মেরে চালের ফুটো দিয়ে দেখে নীলমতো সাদামতো খোলা খোলা হাওয়া হাওয়া শ্বাস শ্বাস।
চিলেকোঠায় জানালা রাখা উচিত ছিল। তাহলে কুড়ি বছর ভাঁজে ভাঁজে ফাটা হতো না। এমনিই হয়। যে সয়, সে রয়... তবু ওই খুঁতখুঁতুনি যাদের থাকার, থাকবেই।
চিলেকোঠায় জানালা থাকা উচিত।

হেলিকপ্টার থামবেই না, ওপর থেকে নেমে এসেছে দড়ির সিঁড়ি...
ওটা ধরে বেয়ে এস, উঠে এসে দেখ... কাম আপ, কাম আপ-
এই হাতটা ধর্‌ না রে
বেঁকিবেঁকি চুড়ি-পরা খসখসে। তরকারির কষটষ, হলুদের ফুটকিফাটকি অনেক কষ্টে দড়ি বেয়ে দরজায়, হেলি-র দরজায়। কী ঝকমারি বাবাঃ! ঝিকমিকে কাচ আকাশের চেয়ে শানদার। চোক আটকে কত কিছু... কী সব দিশ্য! কোমরে হাত দিয়ে দুটি ছেলেমেয়ে, শুদ্দু দুটি ছেলে, শুদ্দু দুটি মেয়ে ঠোঁটে ঠোঁটে চুমু... ওমা এসব তো রাত্তিরে ঘরের মধ্যে... এমন খোলা হাটে... কী করে গো এরা?
ওঃ মা তুমিও...
ওমা চাদ্দিকে কী যেন ঝুলচে আবার... লাললাল সাদাসাদা কালোকেলো -  
ওটা প্রোটেস্ট আঃ প্রতিবাদ... দেখো গ্রাফ চড়ছে... মাথার ওপরের ফ্যানটা কী জোরে বুঝছ না?
বুঝব কী? কেউ কি কখনও একটা জানালা রেখেছিল? দেখচি তো! ঝুলচে! ওই  অতগুনো কিরে?
হেলি স্পিড বাড়িয়ে ছুটছে আকাশপারা। দাঁড়া দাঁড়া একটূ ধীরে বাপু। পারি নাকি? পারি নাকি ভারভরকম গতর নিয়ে? দরজাটা খোল, উটে বসি।
খুলে নাও নিজে। থামতে পারব না।
পড়ে যাসনি যেন! ভেঙে যাবে। পারচি না যে খুলতে খালি ঘুরচি, মাথা ঘুরচে, ধোঁকার টাটি এমন... পায়ের তলে বনবন বনবন... নামিয়ে দে - এর চে ফুটো ছাত ভালো। বিষ্টির হাওয়া ঢোকে পিরপির করে, ঘুড়িগুলো নীলের বুকের মধ্যে ছিটছিট পাখি... নামিয়ে দে, নামিয়ে দে...
কে-ন? নামবে কী করে, চড়েছ যখন? চেষ্টা করো ভেতরে ঢোকার। না হলে জানালার  কাচে চোখ রেখে দেখ - রঙ বদলায় রঙ বদলায়... আজমমো জানালা চেয়েছিলে তো একটুকরো? তো নাও পুরোটাই...  






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন