পরকীয়া ও কাঁটাতার বৃত্তান্ত — চার
যুদ্ধ যুদ্ধ ভয়ে জমিন সাঁতরে বৃক্ষের চিবুকে তাকাই— কোমল ছন্দে ঢেউ খেলে যায় কৃষ্ণ কৈশোরে। ডোরাকাটা চিন্তায় চষে বেড়াই নিশিবৃক্ষর অভ্যন্তর। নতুন চশমায় উঠে আসে বড়াইয়ের মুখ।
পানপাত্র হাতে তোমার ইচ্ছেমতো পাহাড় ভাঙো— হাওয়ার শরীরে বিষ ছড়িয়ে দাও। আমি মেঘের নাভিতে বিগত স্বপ্নের অনুবাদ খুঁজি আর চুমুতে চুমুতে র্নিবিষ করে দিই গোলাপী ছায়া।
পরকীয়া ও কাঁটাতার বৃত্তান্ত — পাঁচ
আলোর ডানায় বিবেকের তাবিজ লটকানো থাকুক। তুমি পরিশুদ্ধ তালে নেচে যাও রঙবাজ ঢোলীদের মঞ্চে। আমি মজনুর দুরুদ জপে পরিত্যক্ত পথে নিজেকে খুঁজি অথবা মুক্ত মিছিলের বাইপাস হয়ে তোমার ইস্টিশনে মানুষ দেখি। এই ইস্টিশনটা ঘুমের মাদুলিতে ভরে একদিন তোমার বাহুতে বেঁধে দিয়েছিলাম।
সেদিন থেকে ফেরিওয়ালাদের বেগুনি হাসি আমার কোল ছেড়ে উড়ে গেছে। এখন খয়েরি বোতামে লুকানো মুহূর্তের আবদারে নিদ্রার অভিনয় করছি।
পরকীয়া ও কাঁটাতার বৃত্তান্ত — ছয়
বালিশের শরীরে ঠোঁটের ঘ্রাণ আর রৌদ্রের ভাঁজে ভাঁজে তোমার স্পর্শ— হাইতোলা বিকেলকে মাতাল করে দেয়। সাদাকালো পর্দার ইতিহাস পাঠে ফড়িঙচোখে বিস্ময় লেগেই থাকে। বর্ণতন্ত্রের সীমানায় থাকা মুখগুলো হাহাকারের গদ্যপথেই বেঁচে আছে। তবুও তুমি সাদাজীবন খুলে আমাকে ডেকে যাও স্রোতের সুরে। জেগে থাকা আর্তনাদের গলায় পিপাসার জমজম ঢেলে দেবো বলে— বরষার ঊরু ছুঁয়ে চন্দ্রনাথের চূড়ায় সাহসিকতার বীজ বুনেছি।
তুমি বরং মিঠে শব্দের পতন মুলুক অথবা সুখ পোড়া গন্ধের অন্তর ঘুরে এসো।
পরকীয়া ও কাঁটাতার বৃত্তান্ত — সাত
হলুদ পাতার পাঁজরে ভোরের কঙ্কাল খেলা করে। আমিও শাপলার উঠোনে খেলি গোল্লাছুট। তোমার দৃষ্টিতে ছায়ার আহবান— শরীরে আতরের পেলবতা। নিশিশব্দে জেগে থাকা রূপার কৌটা খুলে চুষে নেই রূপকথার পাপড়ি। মায়ামৈথুন শিহরণ তুলে যায় কাপালিক ধ্যানে। দেখি জানালার গ্রীলে খেলা করে পরীর চোখ, জড়ানো কণ্ঠের বাঙলায়নে সে বুঝে যায় অসুখ আমার প্রিয় বান্ধব।
চাঁদকে বলি শুনে যাও দুঃখ জাগানিয়া সুর—আমি তো দুখপাখির কুটুম উড়ে উড়ে বেদনা বিলাই।
পরকীয়া ও কাঁটাতার বৃত্তান্ত — আট
রাতজাগা রচনার প্রথম লাইনেই তোমার নাম লিখেছিলাম। প্রতিটি প্যারার গতরে নোকতার মতো জড়িয়ে ছিল তোমার ঠোঁটবিদ্যা। তুমি ছুঁয়ে দিলেই পিরামিড প্রেমের আয়নায় আমার মুখ দেখি। মরুময় ছড়িয়ে যায় গোপন ইশারার ঘ্রাণ। হৃদয়ের হারমোনিয়ামে বেজে ওঠে গোলাপী সুর। দেউরকার গলায় পুষে রেখেছো যে অসুখ তাকে আমি পিদিমের সুইসাইড নোট দেখাই।
আগুন আগুন রমণের আয়ু থেকেই আমাদের বেড়ে ওঠা— একথা বলতে গিয়ে বিষাদের জলে গুম হওয়ার ভয়ে চুপসে যাই। হাওয়াই ঘড়ির ফ্রেমে আটকে থেকে থেকে ভুলে গেছি মৃত্যুমোহের হৃৎপিণ্ডের শোকগাথা। খোলা তরবারির বিষদাঁতে জেগে আছে সুখ। রাত শেষ হয়ে যায় শেষ হয় না পরকীয়ার অসুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন