গল্প না
এটা গল্প না। তাই শুরু বা শেষ নেই। শেষটাই শুরু হতে
পারে বা পাঠক যদি চান, শুরুতেই শেষের বাজনা বাজিয়ে দিতে পারেন। শেষের বাজনা
স্বভাবত দুঃখমুখী। আবার কোনো শেষের রেশ নিয়ে কেউ সারাজীবন কাটিয়ে
দিতে পারেন সুখেই। কোয়ান্টাম বিশ্বে শেষ কথা বলে কিছুই থাকে না।
‘ওয়াক ফর হেলথ্’ শ্লোগানটা
খুব খাচ্ছে আজকাল। ‘হু’ তো অনেক শ্লোগান গানে গানে কানে কানে শুনিয়ে যায় বহুকাল ধরে। শুনি কি সবাই!
কিন্তু এটা কী ক’রে...! ঐ। একশো গানের
মধ্যে কোনো একটা অনুপম, ‘আমাকে আমার মতো থাকতে
দাও’, ‘তোমার দেখা নাই রে...’
হয়ে যায়। তো হাঁটতে হাঁটতেই রোজকারের সকাল-সন্ধ্যার হ্যালো-হাই। কথা বিনিময়
একটু-আধটু। সে চিনি, এবং তিনি হার্ট। না হার্ট করেন না তিনি কাউকে, তিনি স্বহৃদয় হৃদয়
কিনা! দুজনের পারস্পরিক গাঁটছড়া আন্তরিক ভাবে দৃঢ়।
বাস্তবে চিনি হৃদয়কে কাঁদায়। ব্লক করে দিতে পারে তার মহার্ঘ পাম্পিং স্টেশন। তবু চিনি
মিষ্টি এবং হৃদয় হাভাতের মতো ঘরের দুচ্ছাই থেকে পথের হাঁটালগ্নের
মিষ্টতার ঢালু পথে ক্রমশ। হাঁটার বেসুমার কষ্ট-বিরক্ত
তখন একদিন মাত্র না-হাঁটার রিক্ততায়
বিষাদে পৌঁছে যায়। যাবেই। হৃদয় সে। ঘুরে মরে একটু মিষ্টতার জন্য।
চিনি হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে
বাঁধানো বকুল গাছের ছায়ায়। বকুলে ঝরে পড়ে ব্যাকুল কিশোরীবেলার টক-মিষ্টি কথকতা।
ফেলে আসা যৌবনের গীতিকথা। গীতিকথা ক-খ-ন যেন কঠোর নীতিকথায় বাঁক নিয়ে মুচড়ে ধরে
দেওয়া-নেওয়ার হৃদয়। পাজি বকুল তবু মিষ্টি গন্ধে ব্যথা ছুঁড়ে মারে, যে ব্যথা একদিন বুক ফালা ফালা
করেছে।
হাই-হ্যালোর বয়স্ক হৃদয়, সেও
কখনো হাঁপিয়ে ওঠে চলমান স্বাস্থ্যের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে। চিনির পাশাপাশি তারও
দম নিতে সাধ যায়। আবেগের ফ্লুইড এ-বয়সে কি কোনো গল্প বানাতে পারে? কাজেই
কোনো গল্প হয় না। কিন্তু ‘কাছাকাছি’ ‘পাশাপাশি’ ব্যাপারগুলো বড্ড বেশি ভাইরাল।
সংক্রামকও। নিপুণ চাষী যেন, থাইসিসের বীজ বোনে। হৃদয়ের
বহতা চলমান ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে চিনির মিষ্টি তারাণায়। বোঝা না-বোঝার নেশাঘোর ফাটলের মধ্যে
কান পাতলেই স্যাটেলাইট বাহিত যৌবন-মহুয়ার নেশা নেশা
নিঃশব্দ টেলিডাক মাঝে মাঝেই নির্জন প্রহরে শুনতে পেয়ে যায়। পেয়ে যায় নিঃস্ব
ডাকবাক্সে ডাকচিঠির আলাপন। দুজনেই।
বস্তুত শত্রুতা, শিরায়
শিরায় আর্টারিতে স্বচ্ছন্দ-বিহারের ছন্দিত ঠ্যাংগুলোকে ল্যাং মেরে জমাটি
কংক্রিট-দেওয়াল গেঁথে মিষ্টি দেয়ালা করে নাবোঝা অমোঘে। মিষ্টি শ্ত্রুতা-হৃদ্য
হৃদয়ের টানাপড়েন শল্যবিদের ছুরি-কাঁচির ভয়মানতা পর্যন্ত নিঃশব্দে কখন যেন...। ডাক্তার অভয় দেন, চিনি কি দিতে পারে তা! সে হৃদয়ের সাথে
চোরা ভালোবাসায় যৌবন যাপন করে চলে নাবুঝ নাজুক। সুগার আর হার্টের রসায়ন পজেটিভ হয় না। তবু বকুল দেখে দুজনের
নিভৃত ভালোবাসার আশ্চর্য পজেটিভ কেমিস্ট্রির টুকিটাকি, রিংকলখচিত কপালে কপোলে। এ
কি নিঃসঙ্গতার নিগেটিভ সংজ্ঞা হ’তে পারে? বকুল কিনারাহীন ভাবনাপুকুরে এর সংজ্ঞা খুঁজতে
টুপটাপ ডুবে যায়। এদের সঙ্গে কি সুগন্ধী সম্বন্ধ খুঁজতে চায় সে? লড়াই ফর
এগজিস্টেন্স আর ভালোবাসা কোনো পাস্ট বা ফিঊচার টেন্স
মানে না। তাদের সবটাই প্রেজেন্ট
টেন্স-এ বিলং করে কি! ভালোবাসায় থাকাই ভালো থাকা। বয়স্ক বকুলবৃক্ষটি আকুল
কাঁদে। তার সুগন্ধী শরীরের একমুঠো হাতবদলে কত হৃদয় দেওয়া নেওয়ার মুগ্ধ
স্বপ্নলোকের সাক্ষী সে কত যুগের...। নিঃশব্দে একমুঠো নিজেকে ঝরিয়ে দেয় একটু দূরত্ব রেখে বসা
দুই ওয়াকিং পার্টনারের মুখে বুকে, বিছানো হাতে, যে হাতের আঙ্গুলগুলো অজান্তে সরে
সরে আসে একটুকু ছোঁয়া লাগার বাসনায়। বকুলবৃক্ষটি বুঝতে পেরে যায়, এই ফাল্গুনী রচনার অঙ্কুর উদগমের নিঃশব্দ কথকতাটুকু।
জীবন-সায়হ্ন টায়াহ্ন বড়
ক্লিশে কথা। হার্ট বিনিময়ের সাথে এর কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। থাকতে পারে না। মেডিকেল সায়েন্সের নতুন উয়িং-এ লাভ থেরাপিস্টরা এখন বড়
ব্যস্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন