বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

১৩) শুক্তি ঘোষ





(হাইকু সতেরো অক্ষরের চালে গাঁথা জাপানী অণুকবিতা জাপানের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে হাইকু এখন প্রশান্ত আর অতলান্তের দুই পারেই জনপ্রিয়, সম্ভবতঃ সবচেয়ে জনপ্রিয়, কবিতা মাধ্যমবাংলার সাথে হাইকুর পরিচয় অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেশুধু  বাশোর বিখ্যাত ‘ব্যাঙের কবিতার’ অনুবাদই নয়, একই সাথে তাঁর ‘লেখন’ অথবা ‘স্ফুলিঙ্গ’র কবিতাগুলিও অনেক সময়েই হাইকুর লক্ষণাক্রান্তএখনকার বাংলা কবিতায় হাইকু চর্চার পরিসর ঠিক কতটা? তুলনামূলক বিচারে মনে হয়, এই কবিতা মাধ্যমটি  আমাদের মধ্যে হয়তো ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি এখনওযদিও  আপাতসরল, অথচ ঘনসন্নদ্ধ এই কবিতাগুলি যেন বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন, যেন বা খুদে একটা আংটির মধ্যে গলিয়ে দেওয়া বাইশগজী মসলিনএকবার এই রসে মন মজলে নেশা না ধরে যায় নাবাংলায় হাইকু লেখা কি আদৌ সম্ভব? আমি চেষ্টা করেছিনিচের ‘হাইকু’গুলি খাঁটি বাংলাআসলে হাইকুর ধ্রুপদী প্রকরণ অনেক সময়ই মানা সম্ভব হয়নি, তবে চেষ্টা করা হয়েছে তার মেজাজটাকে ধরে রাখার শেষ বিচারে সাফল্যের খতিয়ান অবশ্যই পাঠকদের)


হাইকু

(১)
শীতের কুয়াশা
একটা কাক, দু’টো কাক,
ফুটছে ভোর

(২)
পড়ন্ত বিকেল;
শিমুল ডালে আলো ছায়া
বালিকা বয়স

(৩)
“রেড রাইডিং হুড”
ডাকলে তুমি, চমকে গেলাম
ছলকে গেল মন

(৪)
উপুড় আকাশ
চুমকি তারার ঝালর মেলা
ঝিমঝিমে রাত


(৫)
ঝোড়ো হাওয়ার গতি
আমের ডালে ঝাঁকড়া চুলে
ক্রুদ্ধ বনস্পতি

(৬)
ডাক পিয়নের পা
থামল না কি থামল না
অপেক্ষা অপেক্ষা

(৭)
সিনীবালী চাঁদ
তোমায় আমি দেখব বলে
জাগছি সারা রাত

(৮)
রোদের তাত মিঠে
লম্বা ছায়া পুবমুখো
বেলা গেল

(৯)
আশমানি ভোর
শিউলি ফুলে ভরা সাজি
তোমার আশিস্‌

(১০)
ঈগতপুরী
আরও একটা স্টেশন, আর একটু দূর
লম্বা ট্রেনটা

(১১)
দুরন্ত এক্সপ্রেস
কী আর করি বসে বসে
হাইকু লিখি বেশ

(১২)
স্বর্ণাক্ষী
কোথায় তুমি হারিয়ে গেলে
শালিক পাখি

(১৩)
দিনের শেষে
বিনবিনানি মশার সাথে  
সন্ধ্যা হলো

(১৪)
বিন্দু জল, বিন্দু কথা
বারে বারে, অনেক বাড়ে
সমাকলন কাকে বলে!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন