বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

০৭) অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়


 
বাদুড় বা নবান্নবিষয়ে

বোসপুকুরের পাশে তেঁতুলের ডালে,
পা আটকে সারাদিন অজস্র বাদুড়,
প্যারালেল বারে ঝুলেপাকা অ্যাক্রোব্যাট।
পা-উপরে-মাথা নিচে; তীক্ষ্ম খোলা চোখ,
মানুষেরি ম
তো ঠিক উল্টোবাগে পৃথিবীকে দেখে।
হয়তো ওইটাই সোজা, তখনো বুঝিনি।
যদিও বাদুড়, এই মানুষেরি ম
তো, প্রাচীন, উড্ডীন স্তন্যপায়ী।  
ভরপেট ভাত খেয়ে সারাদিন খিদে।
বোসপুকুরের পাড়ে, ঝোপেঝাড়ে অচেনা খাবার।
রাতে বাদুড়ের হোক্, দিনমানে শুধুই আমার,  
শেকুল, বেঙুচ, কুল, আঁশফল, মৌচাক,
সম্ভব-অসম্ভব, সবখানে খোঁজা।
অলজ্জ, ক্ষুধাময় ফোরেজিং, বোঝা।

জলরেখা শেষ হলেই কলমি-শুস্নি,
সেদ্ধ খেলে বেশ স্বাদু, কাঁচা খেলে কষা
বালকরা কাছে কেউ দেশলাই রাখে না
জিভে আমরুলশাক টকমিঠে স্বাদ,
কষি পেয়ারাও একটু কাগজের নুন পেলে
সোয়াদি উন্মাদ।
এরি মধ্যে একদিন মেজদির বিয়ে, ভোজ,  
শেষ পাতে স্বপ্নময় গাছের ল্যাংড়া।
ভোজবিয়ে শেষ।
বোসপুকুরের পাশে কাকিমার বাড়ি,
গাঢ় লাল রাতের রোয়াকে
বিয়েতে পাওয়া বই চিত্রে জয়দেবখুলে ঘুমিয়ে পড়ার আগে,
হাত তোলা গোপিনীর কাঁচুলি এড়িয়ে
আধখানা স্তনের আভাসে প্রথম আকুল।

হঠাৎই চোখে ধাক্কা, অসংখ্য বাদুড়।
পুকুরপাড়ের তেঁতুলের ডাল থেকে
রোমহীন পাখার দাপটে, আকাশ কাঁপিয়ে আসছে।  
স্তনাঢ্য গোপিনীর যৌন আঘাতে টলমল
গীতগোবিন্দের পাতা কি
সাধে উড়ছে?
জীবনে প্রথম পাওয়া টেবিল ফ্যানের হাওয়া?
নাকি বাদুড়ের এই আকাশে ব্যস্ত আসা
যাওয়া?
বাড়ির সামনে স্তূপাকার, উচ্ছিষ্টে বসছে।  
ট্রেন ফেল করে আসা অসময়ে লাস্ট ব্যাচ? নাকি অনাহূত,  
বাদুড়-মানুষ কিম্বা মানুষ-বাদুড়,
নবান্নেপ্রথম সেটে এ
রই একটি ছবি কি সত্যি জায়গা পেত?  
শম্ভু, বিজন, কিম্বা খালেদবাবুকে বলা গেলে?



ফেসবুকে প্রোফাইল ছবিতে তুই  

অনায়াসে সূর্য তোর আঙুলের ফাঁকে
তাই নিয়ে, 
বয়সের অভিমানে, 
বড়াই করিস   
তাৎপর্য বুঝিস?
প্রোফাইলে আসা তোর হঠাৎ সে তীক্ষ্ণ মুখ
(
আহা যাকে বড় আর দেখাই যায় না), তার
জন্য আনপড় হাতে
ডেস্কটপ সাফ করবার
প্রাণপণ চেষ্টা, আর
তারপর ওর থেকে তোর আধখানা
মুখ টেনে বের করে আনা—   
যার সুনির্মল শীতলতা,  
পৃথিবীর কোনো কূপ, ঝর্ণা, হ্রদ, সাগরের জল   
যত খোঁজ্ স্বর্গ-রসাতল,
ছুঁতে পারবে না—
আজো তার অর্থ খুঁজিস?  
              
পুন্নাম, পুন্নাম বলে’,  
যে জনকরা রোজ রেতঃবৃষ্টি করে       
তারা কি সবাই বোঝে
হিম দেহে রাইগর মর্টিস
নিয়ে যে অসহায় পিতা
সন্তানের এতটুকু আগুনের সেঁক  
পাবে কি পাবে না তাতে সংশয় বাড়লে
সস্তা খাটিয়ায়
সটান দাঁড়িয়ে যায়!
তার খিদেটা বুঝিস?
            
নয় শত পিতামহী’— সেই কল্প বিজ্ঞানের গল্পটার মতো,
কিম্বা তোর দিদিমার কাহিনীর ভুতেদের মতো  
আমাদের কায়াশরীরতা
কৃশ থেকে কৃশতর হতেহতে,
যখন বিদেহ হবে, তখনই কি তোর
হাতের মুঠোর সূর্য  
মুখে দেবে আগুনের সেঁক?
          
পশ্চিম সমুদ্র দ্বারে, কোথা? 
কারা তোর সঙ্গে ছবিতে?
ওদের মধ্যে কেউ বেশি কি আপন?
গোয়ানিজ বিচে বসা ক্যাম্পফায়ারের আলো ফেসবুকে
আপলোড হওয়া কটা মুখে    
ঝলসে বেড়ায়।
ভাবি সেই বিভা কার মুখে সব চেয়ে
প্রতিফলিত?
তোর হাতে পাটকাঠি ধরার সময়ে কোনটা
লাল শাড়ি পরে
নূপুরবিহীন চালে খালি পায়ে শ্রদ্ধা জানাবে?

আগুন আগুন চাই — বেদজ্ঞরা দিলেন বিধান


কামড়

নীলাক্ষি ভ্রমর তুমি উড়েই বেড়াও।  
একবার নেমে এই ঠোঁটে বসা যায়?  
এখানে যে কতদিন কোনো গন্ধ
এমনকি সিগ্রেটেরও নেই।
একটু বসবে?
একটা কামড় দিলে,
ওরা ফুলে ঢোল,
সিংহলসমুদ্র পার, আনবে
এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনির
বেহায়া সৌরভ।

ঘামগন্ধ ফেরাবে?
পৃথিবীর সব ব্যর্থতার নাম যদি
আকাঙ্ক্ষাই হতো?
আকাঙ্ক্ষার নাম হতো সৌন্দর্য, আর
সৌন্দর্যের নাম হতো
সবকটা গত জন্মের রাস্তা?
প্রতিটি রাস্তার মোড়ে
থাকতো এলাচ বন?
এলাচের নাম হতো অকারণ,
কী মনকেমন!

ক্যাম্প থেকে দুশ মিটারেই  
ধনপতিয়ার ঠেক।
নরম, দুগুণো মোটা, ফোলা রুটি,
অনেকক্ষণ ধরে,
আঙুলের চাপ দিয়ে
আস্তে আস্তে
ছিঁড়তে ভালো লাগে।
আমার রামের, ওর ঘামের গন্ধ মিশে...
জানি, কাছেপিঠে কটা গামছামোড়া মুখ
কালাশ্নিকভ-রোখা চোখে,
সোহাগী রুটির
আধবোজা
ছিঁড়ে যাওয়া দেখছে।

ফটকরে শব্দ হলে
মনে পড়ে যাবে

পুরো দু
বছর হলো
আমাকে নীলাক্ষি কোনো ভীমরুল
কখনো   
কোথায়ও কামড়ায়নি!


             
দ্বিধা

কাঠবিড়ালির মতো ঝাঁকড়া গাছ বেয়ে     
ক্ষিপ্র পায়ে নেমে আসছে অলস দুপুর।
জলে ভাসা, ফেঁপে ওঠা, সবুজ শাড়িতে নেয়ে,  
কচি বুক উজলালো নিথর পুকুর    
তাই দেখে যে তন্ময়, হঠাৎই ভয়ার,   
কেউ কি জানলো তার আজ থেকে
কী ক্ষমতা তৈরি হলো যন্ত্রণা সওয়ার!   
সমস্ত পুকুর জুড়ে ডুবছে, ভাসছে,  
বেহায়া পালক 
কিন্তু সেই অনভিজ্ঞ, ভ্রান্ত আহাম্মক,
টিকিটবিহীন রেলে দূরগামী। 
ভাবছে কপট আর অজানা রাস্তায়
আমি কোন্ ইশ্টিশানে নামি!  

 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন