বাঁচার দৌড়
তিতাই
দোতলার জানালায় জলের ছাঁটে জবজবে। সে হুঁশ হারিয়ে ভাবে, আঁধার কোপানো বাইরেটা তার পাপেই বাজ বিজলী ঝড়ে ঠাসা বাদলায় খেপেছে। সে
হঠাৎ বেগে সিঁড়ি ভেসে নিচে নামে। বিতন চিৎকার করে ফাটায় – “না!”
ওই ‘না’
পৌঁছয় না তিতাইয়ের উতরোল ভেতরে। কোলাপসিবল
গেটের একদিক ধ্বসিয়ে বাদলা ঠেলে সেই ঝোপে এলো তিতাই, যেখানে
ডোমবাড়ির আইবুড়ো বড় মেয়েটা সদ্যজাত শিশুটিকে ফেলে গেছে। কলকাতায়
কোনো এক ভদ্রবাড়ির কাজে গিয়ে মনিবের ফুটিয়ে তোলা চিহ্ন। কড়াৎ
কড়াৎ আলোয় ব্যাঙেদের কোলাকুলি ফুঁড়ে পাওয়া গেল ফেলনা ডেলাটি। তিতাই দু’হাতের তাপে
তুলে গভীর স্নেহে বুকে চেপে ধরল ওই অপার
বিস্ময়ের নির্ধনটুকু। তারপর
ঘাসজলমাঠ ঝপাং ঝপাং পায়ে পেরিয়ে বাড়ি। গেটে
থমকে দাঁড়াতে হলো। ঘরসুদ্দু
আগলে। বিতন গরগর করল, “না বলেছিলাম, না?”
তিতাই
মা হবে। পাঁচসালের খরা - বুকের গোড়ায়। অকপালে সে। দত্তক-এ জাতাজাতির অছাপ্পা থাকায়
বরাবরের ঘেন্না বিতনের। আজ তিতাই কিন্তু একরোখা হয়ে গেল। নিষেধ, ছিছিক্কির মাড়িয়ে –
বুক ভর্তির টানে দৌড় তার। সে কাকুতি ঢলিয়ে বলে – “আগে তো বাঁচাতে দাও! পরে দেখা যাবে, যা হোক!”
-“না, ন্না! ডোমের বাচ্চা। তোমার মাথাটা গেছে। তোমাকে বিয়ে করাটাই ছিল আমার মস্ত ভুল। যাকগে সেসব, ডোমটা যেখানে ছিল রেখে এসো!”
পিছনে
বাজখাঁই জলঝড়। সামনে চাঁই চাঁই দুচ্ছাইয়ের ঢেলা। পিছন দিকটাই তিতাই বেছে নেয়। আবার
দৌড় তার। উত্তরদিকে পুকুর পাড়ে কয়েকটি আদিবাসী ঝুপড়ি। একটায় ঢোকে। এক
সাঁওতাল সুন্দরী তার নিজের কোলের বাচ্চাটি
সামলে কেরোসিনের টিমটিম চিমনিটি তুলে জলচোবানো মুখটা দেখে। হাসে।
-“গরম দুধ হবে রে শামলী?”
আবার
হাসে শামলী – “হব্বে গ” বলে নিজের বুকের কাপড়টা সরায়। বোঁটা থেকে নিজেরটির ঠোঁট
ছাড়ায়। তারপর নতুন অতিথির মুখ ডাইনের বড় স্তনে আর নিজেরটি বাঁয়ের ছোট স্তনের
বোঁটায় জাপটে ধরে বলে, “দিদি তুমি ভিজ্জা গেছ। কাপট্টারে
বদলাই লও। কিন্তক দিদি, তরটা য্যা টানে নাই!”
-“টানবে টানবে, তুমি একটু ধরে রাখো!”
বাঁচার
দৌড়ে তিতাইয়ের ভেজা দেহে কত যে রোশনাই খেলে যায়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন