অধর্ম
বরোদায়, এখন নাম ভদোদরা, ওরা কবরখানা আক্রমণ করেছিল। ভেঙে দিয়েছিল ফৈয়াজ খাঁ’র সমাধি। বেস্ট বেকারির সেই প্যারানয়েড
মেয়েটা, কী যেন নাম, একবার সত্যি কথা একবার মিথ্যে কথা
বলতে বলতে কোথায় হারিয়ে গেল! আর সত্যি-মিথ্যের আলো-আঁধারি পথ পেরিয়ে ওরা পৌঁছে গেল দিল্লি। অনেকটা পথ। অর্ধদগ্ধ ছেঁড়া পা, পোড়া ভ্রুণ, তোবড়ানো খুলি, খোবলানো মাই – টপকে আসতে হয়েছে। কালো ধোঁয়া আর চামড়া-পোড়া গন্ধে ভুরভুর চারদিক। মানুষের চামড়া-পোড়া গন্ধ নাকে পেয়েছেন কখনও? শ্মশানের পাশে পাওয়া
যায়। কাবাবের মতো শিকে ঝুলছে নরম তুলতুলে শিশু গোস্ত। এসব শ্মশান-পথ পেরিয়ে আসতে হয়েছে, অনেকটা পথ তো মনে হবেই। আসলে বেশিদূর নয়। গান্ধীর সবরমতী থেকে দারাশুকোর
দিল্লি। বেশি পথ নয়। এভাবে ভাবলে বেশি নয়। কিন্তু পথটা একটু বেশি মনে
হলো, কারণ ওদের পথটা ছিল সুলতান মামুদের পথ। লুণ্ঠিত সোমনাথ মন্দির থেকে আওরঙ্গজেবের দিল্লির পথ। জেনারেল ডায়ারের জালিয়ানওয়ালাবাগ
থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের খানসেনাদের জেনোসাইডের পথ...
আজ ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিচ্ছেন। টিভিতে তরজা বসে গেছে যথারীতি। ভিতু অধ্যাপকের সঙ্গে থিতু
বিপ্লবী। ওপরের বচন বিপ্লবীর, বোঝাই যাচ্ছে।
কিন্তু তোমরা যে মুসলিম
মহল্লায় মুসলিম ক্যান্ডিডেট আর হিন্দু মহল্লায় হিন্দু করে করে শেষে যে ভায়া হারিয়েই
গেলে! ওভাবে সেক্যুলারিজম হয় না ভাই! টিভিতে বিপ্লবীয়ানা
দেখিয়ে লাভ নেই। রাস্তায় নামো!
বিপ্লবী ত-ত করছেন। অফ করে দিলাম টিভিটা।
বাবার ঘরে গেলাম। আমার বৃদ্ধ বাবা। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত
উদ্বাস্তু। চোখ এখন কম কাজ করে। কানও। সকালে বাবাকে কাগজ পড়ে শোনাই
রোজ। গান চালাই। স্কুল থেকে ফিরে মাঝে মাঝে
নিজেই গান গাই। বাবা খুশি হন।
বাবাকে শোনালাম খবর। বাবা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ।
কিছু খাবে বাবা?
না। আইজ অরন্ধন। আইজ কেবল গান।
আমি চুপ। বাবা আবার বললেন, অস্ফূটে, আইজ কত তারিখ জান?
২৬শে মে।
১১ই জ্যৈষ্ঠ। আইজ নজরুলের জন্মদিন। তুমি ওই গানটা একটু গাইবা
মা?
কোন্ গান বাবা?
‘কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যারে আলোর নাচন...’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন