পথের গল্প
(জীবনানন্দ দাশের উদ্দেশে)
ভোরবেলায় আজানের আগে
সে এসে দাঁড়াতো আলো-আঁধারের মাঝে,
আমার পূর্বপুরুষের কেউ কেউ হয়তো দেখে থাকবে তাকে
সবার স্মৃতিতে ঘাপটি মেরে আছে
আমাদের পারিবারিক উপকথার
শিমুল গাছতলার বউ, তার অলংকারের শব্দ
এখনো আমার দাদির চোখের তন্ময়তায় সিল হয়ে আছে।
সবারই আছে একটা উপকথা, গল্পের বুনোট সব
যা কিছু দেখার স্পর্শের এবং শোনার।
ধানকে জিজ্ঞেস করো
সেও বলবে বেড়ে ওঠার কাহিনী।
কাহিনীর অর্ধেক জুড়ে বীজের স্বপ্ন আর অর্ধেক
কী করে বাতাস জুড়িয়েছে তার হৃদয়
বৃষ্টি ও গোবরে জুটেছে অন্ন
দমকা হাওয়ায় পতন এবং
পাশ থেকে হেঁটে যাওয়া ক্ষুধার্ত অথচ অলস
মেঠো ইঁদুরের এগিয়ে এসেও ফিরে যাওয়া।
এভাবেই ধানের ওপর হলুদ রোদ, অলস ইঁদুর
কবির চোখ মুদিয়েছে
নতুন উপকথায় ধানের শিশির রূপ নিয়েছে
যুবতীর স্তন চুঁয়ে পরা দুধের।
হেমন্তে আচ্ছন্ন কবি এভাবেই পতনের ভেতর জীবনের তান বেঁধে দেয়।
পথে বেরোলে সবারই হয়তো একটা উদ্দিষ্ট থাকে
অথচ পথেরও আছে নিজস্ব একটা গল্প
সে কারণে ক্ষুধার্ত ইঁদুর জানে না কেন সে
ধান ফেলে স্বগৃহে ফিরে আসে
কেনই বা আমি মৈথুন থেকে ফিরে আসি যখন সেটাই অভীষ্ট!
সমস্ত অভীষ্ট পেছনে ফেলে
পথই পথিককে নিয়ে যায় যেখানে যাবার
যেখানে গেলে গল্পের শেষ হয় না।
পথিক তো তার নিজস্ব যাত্রার দর্শক মাত্র।
শিমুল গাছতলার আলো-আঁধারের বউ
হেমন্তে আচ্ছন্ন কবির হলুদ আলোয় ধান দেখা
এসবই তো ছড়িয়ে আছে পথে, গল্পের গাঁথুনিতে।
আমি পথিক এসবের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাই
আমি দেখি আমি কেমন করে হেঁটে যাই
আমি শুনি আমারই গল্প আমার গল্পের মুখ থেকে।
আমি তোমাকে গল্প বলি
তুমি গল্প বল আমাকে।
পথের পথিক তুমি
সাথে আমাকে নিয়ে।
আলো-আঁধারের বউ তুমি
তোমার স্তনের দুধে ধানের গায়ে শিশির।
পথের গল্প কেবলই দীর্ঘ হয়
যার শেষ অজানা
যে গল্পের রূপ অচিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন