নষ্ট মেয়ে
আরও অনেক কথা হয়েছিল
পরিণীতির সঙ্গে। পরিণীতি চোপড়া। কুরমালি ভাষা চলচ্চিত্রের এক নম্বর নায়িকা এখন।
তবে হ্যাঁ, আমি এক তরফাই কথা বলে যাচ্ছিলাম। বলছিলাম নিজের কথা। এবং অন্য অনেক কথাও।
আসলে আমি তো জানি, আমি থামলেই পরিণীতি কথা বলা শুরু করবে। এবং এক তরফাই কথা বলে
যাবে। কিন্তু পরিণীতি নিজের কথা কিছুই বলবে না। সমাজ সংসারের অন্য কোনো কথাও নয়।
পরিণীতি বলবে শুধু একজনের কথা, বিশেষ একজনের কথা, দিলীপকুমারের কথা। আমি স্বীকার
করছি যে, দিলীপকুমারের কথা এখনও অনেকেই শুনতে চায়, জানতে চায়, দেখতে চায়। কিন্তু
আমি দিলীপকুমারের কথা শুনব কেন? হ্যাঁ, একথা ঠিক যে, দিলীপকুমার এক সময় করবরক ভাষা
চলচ্চিত্রের এক নম্বর নায়ক ছিলেন। তাঁর অভিনয় কখনই ভোলার নয়। কিন্তু সে সব তো
অনেকদিন আগের কথা! বিগত যুগের কথা! চলচ্চিত্র জগত থেকে অনেক দূরে এখন তাঁর বসবাস!
তাহলে! অন্য কেউ বললে না হয় ভেবে দেখা যেত। কিন্তু পরিণীতির কাছে আমি শুধুই কেন
দিলীপকুমারের কথা শুনব? তাতে আমার কী লাভ? বরং পরিণীতি তার নিজের কথা বলুক! তার
জন্মের কথা। শৈশবের কথা। কৈশোরের কথা। প্রথম যৌবনের কথা। ভরা যৌবনের কথা। তার
যৌনতার কথা। আমি শুনব। নিশ্চয়ই শুনব। আমি তো পরিণীতির গোপন মন ও শরীরের সব কথা
শুনতে চাই!
আর এই যে আমি নিজের এত
কথা পরিণীতিকে বলি, কীভাবে দিনের পর দিন স্ট্রাগল করতে করতে আমার জীবনটা এত সুন্দর
মোল্ড করেছি, কীভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে আমার ব্যক্তিগত গুণমানকে উত্তুঙ্গ শিখরে
পৌঁছে দিতে পেরেছি, এই সব কথাই তো শুধুমাত্র পরিণীতিকে মুগ্ধ করার জন্য! আর তারপর
এই যে আমি চলমান বিশ্বের নানারকম ঘটনার কতরকম বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞের মতামত
পরিণীতিকে শোনাই, এই যেমন মোদি সরকারের বর্তমান ও ভবিষ্যত, কাশ্মীরে ব্রাক্ষ্মণ পন্ডিতদের
পুনর্বাসন, প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের হামলা, নেইমারের মেরুদন্ডে আন্তর্জাতিক ফাউল,
এদেশে সম্প্রতি জনপ্রিয় গণধর্ষণ উৎসব – এই সবই তো পরিণীতির জন্য, মানে পরিণীতিকে
শোনানোর জন্য, মানে আর কী পরিণীতিকে শুনিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করার জন্য। কিন্তু পরিণীতি
কি আমার কথা শোনে! শোনে ঠিকই, কিছু বোঝে! বোঝে ঠিকই, কিন্তু কিছু বলে না কেন? আর
কতদিন আমি শুধু দিলীপকুমারের কথা শুনব?
পরিণীতির এক গালে একটা
ছোট্ট তিল, আর এক গালে আরও ছোট্ট একটা জড়ুল। পরিণীতিকে ঠিক কী জন্য দেখতে এত সুন্দর
লাগে, তিলের জন্য, নাকি জড়ুলের জন্য, এখনও পর্যন্ত আমি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে
পারিনি। পরিণীতিকে একদিন এই ব্যাপারে প্রশ্ন করায়, সে সটান উত্তর দিয়েছিল, এই
দুটোই নাকি তার কাছে আপদ! আর তাকে যে এত কুৎসিত দেখতে লাগে, তা ঐ তিল আর জড়ুলের জন্যই নাকি! হতেও পারে। সবারই তো
দেখার চোখ আলাদা আলাদা। আর নিজের রূপ
নিয়ে কে আর কবে সুখি হতে পেরেছে! যৌবন নিয়েই বা কে কতখানি সুখি হয়! অনন্ত যৌবন তো আর কেউ
লাভ করে না! পরিণীতির আজকের এই ভরা যৌবনই বা আর কতদিন!
না, আমি পরিণীতির অনন্ত
যৌবন কামনা করি না। বরং তার তাৎক্ষণিক যৌবন আমার কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। সে কথা
আমি সরাসরি পরিণীতিকে জানিয়েছিও। কুরমালি
ভাষা চলচ্চিত্রের এখন এক নম্বর নায়িকা পরিণীতি চোপড়া। কিন্তু পরিণীতিই বা কী করে!
সে শুধু করবরক ভাষা চলচ্চিত্রের একদা এক নম্বর নায়ক দিলীপকুমারের কথা বলে। আমি
অনেক চেষ্টা করেও পারিনি তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে। আমি অনেক সাধ্য সাধনা করেও তাকে
দিলীপকুমারের সম্মোহন থেকে পারিনি বাঁচাতে। পরিণীতি শুধু
দিলীপকুমারেরই কথা বলে। বলে, সে কীভাবে দিনের
পর দিন একটু একটু করে নষ্ট হয়ে গেছে মস্তিষ্কে ও অস্তিত্বে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন