বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

০২) রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়


শৃঙ্খল

শনিবার ঋকের সঙ্গে অনন্যা যখন ক্লাবে পৌঁছল, তখন প্রায় সন্ধে ৭টা ঋক্‌  হুইস্কি নিয়ে বসে গেল বন্ধুদের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিস-বস-অফিসের বেড়াজালে আটকে গেল কথাবার্তা। অনন্যা বিরক্ত হয়ে খুঁজতে গেল টেনিস পার্টনারকে। কিন্তু শুনল, সে অফিসিয়াল ট্যুরে গেছে চেন্নাইপার্টনার হারিয়ে   হতাশ হয়ে উঠল অনন্যা টেনিসকোর্ট থেকে দুটো ছেলে অনন্যাকে দেখে আহ্বান জানালোকিন্তু উল্টোদিকের ছেলেটি বোধহয় নতুন, একটু খেলেই বিরক্তবোধ  করল অনন্যাকোর্ট ছেড়ে সুইমিং পুলের ধারে খালি পায়ে হাঁটতে লাগল সেডোনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল অনেকদিন পর। টেনিস র‌্যাকেট হাতে অনন্যাকে দেখে এগিয়ে এলো সে

-হাই অনন্যা
-হাই, কেমন আছ? কতদিন পর!
-তোমার এখনও টেনিস?
-ধুর, পার্টনারটা আজ হাওয়া, খেলাই হলো না!

চ্ছ্বল হাসে অনন্যাপুলের ধারে দুটো চেয়ার টেনে বসে দুজনে। তোয়ালেতে  মুখের ঘাম মুছে অনন্যা পা দুটো ছড়িয়ে দেয় সামনে। হেয়ার ব্যান্ড খুলতেই একরাশ ঘন কালো চুল বাঁধ ভাঙল ঘাড়ের কাছে। কিছু ছড়িয়ে পড়ল কপালের আশেপাশে ডোনা চেয়ারে বসেই ভ্যানিটি ব্যাগ খোলে। ছোট আয়না আর লিপষ্টিক বের করে ঠোঁটে মাঞ্জা দিয়ে নেয়। তারপর ছোট্ট রুমাল বের করে নাকের নিচে আলতো চাপে ঘাম মুছে নিতে নিতে বলে
 
-
তুমি কিন্তু একই রকম আছ অনন্যা! তোমাকে দেখে কে বলবে, চালশের সময়  হলো! কী করে মেনটেইন কর? এখনও কী সুন্দর চুল তোমার, সিল্কি সিল্কি...  

অনন্যার চোখের ঝলকটুকু মুহূর্তেই ম্লান হয়ে আসে। আবারও সেই শরীর আর বয়সের বিশৃঙ্খল অবস্থান! রূপ কেমন, অরূপই বা কতটুকু! সমাজের এইসব  প্রচলিত চর্চাগুলোর বিরুদ্ধে প্রবল রাগ পাক দিয়ে ওঠে সামাজিকতার মুখোশ খুলে হঠাৎই ঘুরে দাঁড়ায় অনন্যা

-ডোনা, তুমি আমার লেখা পড়েছ?
-তুমি আবার লেখো নাকি? স্টোরি না নভেল?
-কবিতা
-
মাই গড! তুমি পোয়েট? আমার আবার পোয়েট্রিতে নো এনট্রি বুঝলে, ওই  প্লেনজার্নির সময় একটু আধটু ইংলিশ নভেল টভেল ওল্টাই। তাও রিসিডিউল্ড হলে তবেই...
ডোনাকে কথা শেষ করতে দেয় না অনন্যা
-আমার কবিতায় কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলতা নেই
-মানে?
-
কিছু না। আজ উঠি, পরে কোনো সময়... বাই...
-বা-আ-আ-ই

সুঠাম চলনের দিকে চেয়ে ডোনা বিড়বিড় করে, বয়সে শৃঙ্খল টানলে কী হবে, মাথার ছিট বেড়েই চলেছে!

1 টি মন্তব্য: