কুয়াশা ও বাইসাইকেল
--কুয়াশা চাই,
কুয়াশা...
সাইকেলটা আস্তে,
আস্তে আরও। চাকাগুলো হাওয়ায় এক চক্কর কী দু
চক্কর...। উড়ছে,
কিন্তু ঠিক তাও না। ধড়াম করে পড়তে পারে, পড়ে না। পরদা
সরিয়ে কাচে নাক। হাওয়ার ফিনফিনে সর্দি হয়েছে। সাইকেলের পিঠে পেন্সিলের
দু’হাত দু’পা।
--কুয়াশা চাই,
কুয়াশা?
জানালার ঘষা কাচ। তাও চেষ্টা করলে
হয়তো নাকটা বা দুলটা বা ঠোঁট। সাইকেলের চাকায় কাদা ধরেনি।
টুটুলের সাইকেল বেগুনি-কালো লেডিস্। বড় ডল। দুই ঝুঁটির গোড়া কষে হলুদফুল। কত্ত
স্মা-র্-ট্!
--ও টুটুল!
--কুয়াশা চাই,
কুয়াশা?
তার জানালার দিকে। টুটুলের কাচে
উত্তর ছিট্ছিট্, বাষ্পবাষ্প।
--বলছি না,
না? আমার অর্গান্ডি ফ্রকের কলার আর কুঁচিতে –
কুচিকুচি। বড় হচ্ছি, মা বলে।
লেখার টেবিল, আলমারির বইয়ে
কুয়াশায় কুয়াশা। পুরনো সোঁদা। একটু একটু করে উড়িয়ে দিচ্ছে একঝুড়ি। খাটের
তলা – ঝুঁকতে গিয়ে
কোমরে খচাং, দাঁড়াতে গিয়ে আবার।
--কুয়াশা চাই,
কুয়াশা?
আকাশে তাকাতে তাকাতে প্যাডেল...
একটু নিচুতে চিল উড়ছে না বড় ডানার? পচার মাঠে ময়লার গাদা... কাগজ ন্যাকড়া খোসা
হাড়গোড়।
--এই টুটুল, তাড়াতাড়ি চল! সন্দে
হবে এক্ষুনি।
--দাঁড়া না, ওর ঠোঁটে বেড়ালছানা?
আহারে!
আকাশের কোণে প্রদীপ। আচমকা সোমুর
মুখবাঁধা রুমাল - ঝাঁপিয়ে কেমন গন্ধ, হাত-পা ভারি। চিলটা উড়ে যাচ্ছে –
বেড়ালবাচ্চাটাকে ঠুকরে রেখে। মরে গেল? নাড়িভুঁড়ির গন্ধ। ধাঁইধাঁই ভারি দু’জোড়া
পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে যাচ্ছে। পা দুটো ভি-এর মতো কেন দেখাচ্ছে
শুয়ে-থাকা টুটুলের? গলগল লালস্রোত! নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে গেছে? প্যাণ্ট পরেনি ও? সোমু
চোখ পিটপিট, আবার কি চিলটা! হলুদফ্রিল টুটুলের প্রিয় ফ্রকটা সেলাই করলে, আগের মতো
হবে? খড়খড়ে মাঠে খালি পায়ে খোঁজে। কোন্দিকে ওর হাওয়াই চটি, টুটুলের ব্যালেরিনা?
দু’জনের সাইকেল?
--টুটুল, এই টুটুল, চোখটা খোল্...
দ্যাখ কেউ নেই। কাঁদিস না, কী হলো তোর?
আমার হাত ধর্ - এই যে!
--সোমু!
--ওঠ্ মা-রা ভাবছে। ঈস্ তোকেও
কি বেড়ালবাচ্চাটার মতো?
গাল মুখ বাজুর আঁচড়গুলোয় রক্ত। পা
ঘষে টুটুল,
--সোমু কী ব্যথা... পা... মা-গো...ও
সোমু বায়োলজি কোচিংক্লাসে সেরা।
পরের বছর ক্লাস সেভেন। তপনস্যার ডাকে,
--সৌমেন, জবাফুলের বিভিন্ন অংশ...
বিশ্লেষণ কর।
--বৃতি –
পাপড়ি – পুংকেশর -
সোমুর হাতে টুকরো হওয়া জবাফুল।
লালস্রোত - চিল –
বেড়ালবাচ্চা।
--কুয়াশা চাই, কুয়াশা?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন