রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

০১) অমিতাভ প্রামাণিক

চারানা আটানা


১২ ঘাসস্য শিকড়ম্‌
-   কিৎনে আদমী থে?
-   কুল মিলাকে লগভক সাড়ে পানশো, সর্দার
-   হুম, সাড়ে পানশো। শুয়ার কে বচ্চে, ও সাড়ে পানশো থে অর তুম আশ্‌শি কড়োর। ফির ভি খালি হাথ আ গয়া! ক্যা সমঝ কর আয়ে থে? সর্দার  বহোৎ খুশ হোগা? সাবাশি দেগা? ধিক্কার হ্যায়। আরে ও সাম্বা, কিৎনা ইনাম মিলা রে ও সাড়ে পানশো কো?

-   পুরা দেশ লুটনে কা ইনাম, সর্দার!
-   শুনা? পুরা দেশ লুটনে কা ইনাম! অর ইয়ে ইনাম ইসলিয়ে হ্যায় কে ইঁহা সে পচাশ পচাশ কান্ট্রি মে যব বুড্‌ঢা লোগ রাতমে রোতা হ্যায় তো কোই উসকো বোলতা হ্যায়, শো যা, নেহী তো ডেমোক্রেসি আ যায়েগা। অর ইয়ে আশ্‌শি কড়োর হারামজাদে নে ইয়ে ডেমোক্রেসি কা নাম পুরে মিট্টি মে মিলা দিয়া!  ইসকি সাজা মিলেগি। বরাবর মিলেগি...

* * *

পোস্‌চিম্বঙ্গের ডেমোক্রেসির ডেমো যে বেশ ক্রেজি, তা তো আপনারা জানেনই!

মাধ্যমিক বোর্ডের জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে, রক্তের রং লাল কেন? দেখেই ভয়ংকর ক্রুদ্ধা নেত্রীর দপ্তরে ডাক পড়ল হেড এগ্‌জামিনারের। বেচারি কাঁচুমাচু মুখে হাজির রাইটার্সে। থুড়ি নবান্নয়।
-   আর কোশ্চেন খুঁজে পেলেন না? কেন পাতার বা মুকুলের রং সবুজ, এটা কী দোষ করল?
-   ওটা গতবার এসে গেছে ম্যাডাম।
-   আকাশের রং নীল কেন, এটা?
-   ওটা তার আগের বার।
-   আসুক। জনগণের সিতিশক্তি অত নেই। কাউ-এর রং কালো কেন, এটা দিন। লাল কথাটা থাকবে কেন, জানেন না জনগণ ওদের বর্জন করেছে! আপনি কি  লোকাল কমিটির মেম্বার? দেখি, কোশ্চেনটা আর একবার দেখি।
-   না ম্যাডাম, আমি কারো মেম্বার না।
-   এ কী! রানার কাকে বলে বায়লজি এগ্‌জ্যামে কেন?
-   রানার, ম্যাডাম, এক ধরনের উদ্ভিদ, ঐ যে যারা –
-   রাখুন তো, আমাকে উদ্ভিদ শেখাবেন না। রানার কার লেখা পদ্য জানেন না? তিনি কার কাকা? রানার চলেছে, তাই ঝুমঝুম – উঁহু, রানার চলবে না। জনগণ ওদের –
-   কিন্তু ম্যাডাম, এটা তো বাংলা এগ্‌জ্যাম না।
-   তাতে কী? এগ্‌জ্যাম ইজ এগ্‌জ্যাম। ইস্‌, এটা কী করেছেন? এই যে কোশ্চেনের পাশে ৫ লেখা, এটা?
-   ওটা ম্যাডাম মার্ক্‌স্‌, ঐ কোশ্চেনের।
-   মার্ক্‌স্‌? আপনি মার্ক্‌স্‌বাদী? তার মানে মাওবাদী! এই কে আছিস –

* * *

(তিনোভোজী পার্টি অফিস। রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে, তবে ইলেকট্রিক বিল পে না করার জন্যে কানেকশন কেটে দেওয়ায় টিমটিম করে হেরিকেন জ্বলছে)
বড়দি এতবার করে লোদিকে ফোন করছি, ফোনই ধরে না! গদিতে বসেছে একটা  উল্লুক! বেঙ্গল প্যাকেজটা না পেলে পরের মাসের মাইনে দিতে পারব না সরকারি কর্মচারীদের। আপনারা প্লীজ কালকের পার্লামেন্ট অধিবেশনে পোধানমন্ত্রীকে বলুন এটা।
(সবাই চুপ)

বড়দি ধুর ধুর, কেউ কম্মের না। দেবু, আই মীন কিঙ্কর, তুই তো চালাক চতুর ছেলে বাবা, তুই পারবি না বলতে? একটু অ্যাক্টিং করে বলিস। ওহো, তোর তো আবার ওটা আসে না। ঠিক আছে, পেলেন নামিয়ে দিস, বলিস বড়দি বলেছে।
(নো রেসপন্স)
বড়দি পারবি না? চুনমুন, আপনি?
চুনমুন (গলায় মাখন ঢেলে) এগ্‌জ্যাক্টলি কী বলতে হবে? ইংলিশে বললে হবে না? আই মীন, আমার বেঙ্গলিটা তো ঠিক
বড়দি হবে না কেন? খুব হবে। আমার ইংলিশ বোঝে, আপনারটা তো বুঝবেই। আমি অবশ্য ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজের চেয়ে বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই কাজ চালিয়ে নিই। তবে আপনার ক্ষেত্রে বডি ল্যাঙ্গুয়েজটা রিস্কি হয়ে যেতে পারে।
চুনমুন কেন, রিস্কি হবে কেন?
বড়দি না, মানে যদিও স্বীকার করেছেন বিবাহিত, সংসার টংসার তো
আর তেমন করেন নি
চুনমুন যাহ্‌, আপনি না এ রকম করলে খেলব না কিন্তু। দিল্লী যা হট, আচ্ছা পার্লিয়ামেন্টে কি এসি চলে? আমি কি কোল্ড টিস্যু নিয়ে যাব? অবশ্য কতক্ষণই বা কোল্ড থাকবে এই গরমে? পার্লিয়ামেন্টের ভেতরে ফ্রীজ নেই?
বড়দি থাক, আপনি বরং ফ্রীজ টীজ নিয়েই থাকুন। এই পাপোষ-লতাব্দী, তোরা মানে তোমরা পারবে না? সিম্পলি বলবে, মিস্টার লোদি, উই নীডিং বেঙ্গল প্যাকেজ। বড়দি ইজ টোল্ড অ্যাবাউট বেঙ্গল প্যাকেজ। দিস সিপিয়েম হ্যাজ ফিনিশ আওয়ার ট্রেজারি ইন দেয়ার চৌতিরিশ বচ্ছর। ইফ ইউ ডোন্ড গিভিং আস বেঙ্গল প্যাকেজ, উই উইল না খেয়ে মরব
ইউ নো দি পাওয়ার অফ বেঙ্গল, না? বেঙ্গল মীন্‌স্‌ কবিগুরু রবিন্দোনাথ, শামি বিবেকানন্দো। ইফ ইউ অ্যাংরি বেঙ্গলিজ, ইয়োর গরমেন্ট উইল ফলিং ইন নো টাইম। কী রে, বলতে পারবি না? সবই আমাকেই করতে হবে?
(সবাই চুপ। হঠাৎ সন্ধ্যামালতী রায়চৌধুরী পেছন থেকে বলে উঠলেন)
সন্ধ্যামালতী আমি বলব। ডায়লগটা লিখে দিন, আমি ঠিক নামিয়ে দেব। কান্না কান্না গলায় বললে হবে তো? আমার গ্লিসারিন লাগে না। আমি এমনিতেই পারি। এই ভাই হাপুস, স্যরি পাপোষ, তুমি প্লীজ ডায়লগটা কপি করে নিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দিও।

অবশ্য আমাদের পার্লামেন্ট! যা আলোচনা হবার ছিল, তা আর কবে হয়েছে? অধিবেশন শুরু হতেই পোধান বিরোধী দল ওয়াক আউট করল। পেছনে পেছনে চুনোপুঁটির দলও খেলছি না, খেলব নাকরতে করতে বেরিয়ে গেল। স্পীকার বললেন, আজকের মতো আলোচনা খতম।

বড়দির ফোন বেজে উঠল সন্ধ্যামালতীর মোবাইলে। আজ যে করেই হোক লোদিকে বেঙ্গল প্যাকেজ না জানাতে পারলে চলবেই না। পার্লামেন্ট হলের বাইরে লোদির পেছন  পেছন সন্ধ্যামালতী এসে বললেন, লোদিদা, মানে লোদিভাই, স্যরি, মিস্টার লোদি, আমাকে চিনলেন না বোধহয়, আমি বেঙ্গল থেকে
লোদি জোড়হাতে নমস্কার করে বললেন, হাঁ, হাঁ, খুব চিনেছি। আপনি তো ফিল্ম স্টার আছেন। বেঙ্গল ইজ প্রোডিউসিং স্টার পলিটিশিয়ান্স ইন গুড নাম্বারস। সীমস দ্য স্টেট ইজ পারফর্মিং ওয়েল ইন অল অ্যাকাউন্ট্‌স্‌, সো পীপ্‌ল্‌ ওয়ান্ট অনলি এন্টারটেইনমেন্ট নাউ ফ্রম দেয়ার লিডার্স। চলুন, ওদিকে গিয়ে আপনার ফিল্মের গল্প শোনা যাক।
সন্ধ্যামালতী ভাবলেন, খাইসে! এবার কী করা যায়? ইনি বলে বসলেন, বেঙ্গলে  সমস্যা নেই দেখছি, একে এবার কী করে বোঝাই যে ভিক্ষে চাইতে এসেছি? ঝানু পলিটিশিয়ান একেই বলে।

লোদির পাশাপাশি হেঁটে আসছেন সন্ধ্যামালতী। তাই দেখে দাড়িওয়ালা এক কবি কবিতা লিখলেন লোদি ও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে...


* * *

এবার ভোটের প্রচারের ধর দেখেই বোঝা গেল, যুগ পাল্টেছেএক পার্টি কোথাও  বলল না সেই পার্টিকে ভোট দিতে। বলল, আমাদের নেতাকে ভোট দাও। আর মানুষ দিলোও, না হলে এতগুলো সীট পেয়ে তারা গদিতে বসে গেল! প্রচারে হিন্দুত্ব, মন্দির, করসেবা – এসবের বালাই ছিল না। বলল, দুর্নীতি তাড়াবো, উন্নয়ন করবপুরো সত্যযুগের ভাষা!


বাংলায় অবশ্য যে যুগ চলতেই থাকে, তার নাম হুজুগ। যে মানুষ ঘাস খেয়ে গরুর মতো দিন কাটাচ্ছে, সেও বুঝে ফেলেছে বিরোধীদের চক্রান্ত কী জিনিস, ‘আমরা তো  ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না, সব বুঝি’সব বুঝে তারা ঘাসের শিকড়ে ছাপ্পা মেরেছে। ফলে পর্দারাজ্যের বড়দা-রা খড়দা ছেড়ে দিল্লী হাজির।

নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন যে দারুণ ইন্টারেস্টিং হবে, তাতে আর সন্দেহ কী!

লোকসভায় জোর বিতর্ক চলছে লোকপাল বিল, কোটা, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট ইত্যাদি বিষয়ে। হঠাৎ দেখা গেল একজন গলায় মাফলার জড়িয়ে বিড়বিড় করছে – মা সরস্বতী, বিদ্যে দে মা, মা সরস্বতী, বিদ্যে দে মা, মা সরস্বতী –

সভায় শোরগোল মুহূর্তে থেমে গেল। বহুজন সমাজ পার্টির একজন এম পি একখানা মাইক উপড়ে ছুঁড়তে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ এই নরম সরম দৃশ্য দেখে থেমে গেলেন।

মিস্টার বিড়বিড়ের পাশে যিনি বসেছিলেন কালো চশমা চোখে, গলায় পোয়াটাক মাখন আর দেড়কিলো ন্যাকামি মিশিয়ে বললেন, আহ, কী করছ বলো তো, এমন করে না!  মেয়েদুটোকে বাড়িতে রেখে এসেছি, উঠতি বয়স, কী যে করছে –

তাতে বিড়বিড়ানি থেমে গিয়ে সে তার উল্টোদিকে বসা বয়স্কা ভদ্রমহিলার পা চেপে ধরে গান গেয়ে উঠল, চরণ ধরিতে দিও গো আমারে, নিও না, নিও না সরায়ে –

তিনি তো গেলেন প্রবল ঘাবড়ে। ‘আ মরণ’ বলে পা সরিয়ে নিতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেল, না, তার তো এ সীনেও দেড় গ্লাস চোখের জল ফেলা আছে। তিনি  তার  মাথা নিজের কোলে নিয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ও মা আজ যে আমার কত আনন্দের দিন গো, আমি কোতায় ছিলুম কোতায় এলুম, তাও দেখ চোখের জল বাধা মানে না।

অন্য একজনের চোখে আতঙ্ক, সে পাশের জনের দিকে তাকিয়ে রইল ফ্যাল ফ্যাল চোখে, যেন আকাশে একসাথে দুটো চাঁদ উঠেছে।

স্পীকার স্পিক্‌টি নট হয়ে মজা দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন গদিতে কুটকুট করে কামড়াচ্ছে কী এগুলো, ছারপোকা? এরা মেহুলবাবাকে হুল ফোটায় না কেন?

নিস্তব্ধ সভার পরিবেশ ভঙ্গ করে স্কাইলাইটের গর্ত দিয়ে হঠাৎ একটা ফুটবল উড়ে এসে ঢুকে গেল লোকসভায়। বোঝা গেল, পার্লামেন্টের বাইরে কেউ ফুটবল প্র্যাকটিশ করছে। হয়তো ভেতরেই করত, কিন্তু ভোটে জিতে এম পি হতে পারেনি বলে হয়তো  ঢুকতে পারছে না। একজন সেই বলটা ধরে স্পীকারকে গোলকীপার ভেবে সেদিকে লাথি কষালোস্পীকারের দিকে না গিয়ে বল গিয়ে লাগল এক সদস্যের গায়ে। আর  সে লাফিয়ে উঠে নাচতে লাগলো – পাগলু রে, পাগলু...

* * *

রাজ্যে ঘোর অশান্তি। চারিদিকে মারামারি, হানাহানি। কাগজের তীর বড়দির দলের দিকে। মরছে সেই দলের লোক, দাদার দলের লোকও। দলে দলে লোক এ পার্টি ছেড়ে ও পার্টি চলে যাচ্ছে। দাদার টিনের ভান্ডে সেই কবেকার লাল রঙের ছাপ্পা – প্রণামী বাক্সে দিবেন। বহুকাল প্রণামী পড়ছে না। দলের মিটিঙেও তীব্র কোলাহল। সারাজীবন যারা লড়েছি লড়ব বলে এসেছে, তারা এবার নিজেদের দাদাকেই বলছে, নইলে গদি ছাড়তে হবে। এতকাল এরা ডিমস্টেজে ছিল, কখন ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে গেছে।

হেরে পাচ্ছে প্রাণপণ টের
নেতৃত্ব, বামফ্রন্টের -
ফাটা ডিম! ও পলিটব্যুরো
মানে ইম্পোলাইট বুড়ো।

লজ্জার মাথা খেয়ে দাদারা বড়দির আপিসে দেখা করতে এলো।

নবান্নে দাদা। ঘেমে ফর্সা, ম্লান।
বড়দিদি বলে, আগে ঘর সামলান।
এত অভিযোগ শুনে বিষপ্রায় কান
বিপ্লব পরে হবে, ফিশফ্রাই খান।

যাহ্‌, সব প্রোগ্রাম মাঠে মারা গেল। তার বদলে মাঠে গজিয়ে উঠল কচি কচি ঘাস। তিনো।

[বিঃদ্রঃএই লেখায় সব চরিত্র কাল্পনিক জীবিত, আধমরা, হাজতবাসী বা বাসি মড়া কারো সঙ্গে সাদৃশ্য চোখে পড়লে বুঝতে হবে, সেটা নিতান্তই কাকতালীয়, সাজানো ঘটনা, বিরোধীদের চক্কান্তো]


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন