শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

১৭) অব্যয় অনিন্দ্য

ব্যর্থতা ও চুমো

মা-বাবা দুজনেই দীর্ঘশ্বাস হয়ে যাবার পূর্বমুহূর্তে একমাত্র সম্বল সন্তান বাৎসল্যকে বন্ধক রেখে আমাকে যে ট্রেনটাতে তুলে দিয়েছিলেন, সেটারও গন্তব্য ছিল ব্যর্থতানগর।

ফিরতি ট্রেনের খবর নিয়ে আসার পথে নিবু ফুটো কলসী ভরে জ্যোৎস্না আনতে ব্যর্থ হয়ে নিজেই চাঁদ হয়ে গেল। এখন শুক্লা চতুর্দশী রাতে জ্যোৎস্নাপিপাসু ব্যর্থতা লাঠি ভর দিয়ে হাঁটে, তাঁর সাথে চাঁদটাও হাঁটে। ব্যর্থতার তো কোনো মা নেই; থাকলে আমার মতোই ডেকে বলত, দেখ মা, চাঁদটাও আমার সাথে হাঁটে। সবাই সফলতাকেই দত্তক নিতে চায়, তাই তাঁর অনেক মা। এত মায়ের তোষণে সে নিজেকেই চাঁদ ভাবে একদিন, আর তাঁর কপালে চুমো দিয়ে যাবার ডিজিটাল চাঁদেরও অভাব হয় না কোনোকালেই।

আর আমার চুমোহীন কপালটা আকাশের দিকেই চেয়ে থাকে – যদি কোনোদিন চাঁদটা মা হয়ে যায় - নিবু হয়ে যায়।



মাকড়শা

আমার মৎস্যজীবী বাবা আমাকে মাছ ধরাটা শিখাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল; কিন্তু বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় – কথাটাকে সত্যি বানাতে আমি মাছ না ধরে জাল বানানো শিখলাম।

জালে অর্থ, প্রতিপত্তি, যশ সবই ধরা পড়ল। শুধু সুখ বেরিয়ে গেছে – কারণ সুখ নাকি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই একটা পাখি।

পাখিটার ফেরার শর্ত পূরণে এখন জালটা ছিঁড়তে প্রাণপণ চেষ্টা করছি। অভিজ্ঞ সনাতন তেলাপোকাটার গুচ্ছ চোখ বলছে - মানুষের মাকড়শার গুণ নেই, মাকড়শা নিজের জালে ধরা পড়ে না।



প্লাবন

আষাঢ়ের রোদ সাধু সন্ত চেহারা নিয়েও মেঘকে ভেংচি দিলে, বর্ষণ কিন্তু হবেই – আষাঢ়ের আকাশ বিদ্রুপ সহ্য করে না। রোদটা একথা জানলেও থামতে পারে না - তাঁর ক্রোমোজোমেই ভেংচির সূত্র লেখা যে! তাই ক্ষণে ক্ষণেই আষাঢ় রোদে ভিজে, বৃষ্টিতে শুকায়।

পরাজয়ের শতভাগ সম্ভাবনাটা তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে জেনেও নিবুকে ভালোবাসার ভেংচি দিতেই বর্ষণ হয়েছিল – ডুবে গেছে আমার দ্বীপ। এখন আষাঢ় হবার চেষ্টায় আছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন