মন রে
কতদিন বা কতবছর, মনে পড়ে না তার। অন্ধকারে থাকতে থাকতে থাকতে থাকতে, তার দেখার চোখ তৈরি হয়ে গিয়েছে। সে দেখেছে, এই ঘরে শুধু দেওয়াল আছে। দরজা নেই, জানালা নেই, ঘুলঘুলি এমনকি শব্দও নেই কোনো। তার সন্দেহ হয়, এমন নেই-এর মধ্যে থাকতে থাকতে তার কান একদিন শব্দ শুনতে ভুলে যাবে, চোখ দেখতে ভুলে যাবে, জিভ ভুলে যাবে বলতে। এসব ভেবে সে কঁকিয়ে ওঠে আর আবিষ্কার করে, মানুষ কোনোদিন কাঁদতে ভোলে না।
এতদিন বা এতবছর ধরে সে স্মৃতি রোমন্থন অভ্যাস করে এসেছে। বারবার একই ধরনের হাসির আওয়াজ, একই গানের লাইন, একই রোদ, রোদের তাপ, একই গন্ধ – ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভাবতে কখন যে তার নিজের খেয়ালও তাতে মিশে গিয়েছে, সে টের পায়নি। অতএব এখন সে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, তার সন্দেহ হয়, সে নিজে আদৌ সত্যি তো? সত্যিই কি এই চারটে দেওয়ালের কোনো অস্তিত্ব আছে? এই যে অন্ধকার, এটা কি আলো নয়?! নিজের হাত পা টিপে টিপে মেপে মেপে দেখে সে, সন্দেহ দূর হয় না। নিজের বুকের উপর সে হাত রাখে। টিক টক, টিক টক। তার হৃৎপিণ্ড বলে দিচ্ছে, সে আছে, সময় আছে, চার দেওয়াল আছে, অন্ধকার আছে। সমস্ত নেইকে এক ধাক্কায় মিথ্যে বানিয়ে দিচ্ছে ওই ঠিক থাক, ঠিক থাক শব্দটা।
একদিন ঘুম ভাঙার পর সে ভেবে নিল, দেওয়ালগুলোর রঙ হলুদ। এরকম ভেবে সে নিজের ভাবার ক্ষমতার প্রতি সন্তুষ্ট হতেই হঠাৎ ঘরের কোণ থেকে কে যেন বলে উঠল, “দেওয়ালগুলো হলুদ নয়, নীল”।
-“কে?”
“আমার পরিচয়ের থেকেও কি এই দেওয়ালের রঙ বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়?”
সে কিছুক্ষণ ভাবে, “রঙ যে নীলই আপনি জানলেন কী করে?”
“যে ভাবে তুমি জেনেছ, দেওয়ালের রঙ হলুদ”
সে সময় নিয়ে কথাটা কাটাছেড়া করে নিশ্চিত হয়। “আপনি এই ঘরে কীভাবে এলেন?”
“এলাম কোথায়, তুমিই তো এলে, আমি তো আগে থেকেই ছিলাম।”
সে ভাবার চেষ্টা করে, কিন্তু তার কিছুই মনে পড়ে না। “আপনি কখনও এখান থেকে বেরোতে চেষ্টা করেননি?”
“করেছিলাম, যখন তোমার মতো ছিলাম... এখন বুঝে গিয়েছি”
“কি?”
“এখান থেকে বেরোতে গেলে এখানেই ফিরে আসতে হবে”
দুজনেই চুপ করে থাকায় ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে।
“আপনার নাম কি?”
“তোমার মনে আছে, তোমার কি নাম ছিল?”
“না”
“তাহলে, আশা করছ কি করে যে, আমারও মনে থাকবে?”
কথা খুঁজতে থাকে সে, “আপনি এতদিন ধরে আমায় দেখছেন, অথচ আজই সাড়া দিলেন, কেন?”
“না দিলে কি তুমি খুশি হতে? দেওয়াল যে হলুদ রঙের তা ভেবে কি তুমি স্থির থাকতে, না পরক্ষণেই নিজের সাথে লড়াইয়ে নামতে নীলের পক্ষ নিয়ে? আমি তোমার কাজটা সহজ করে দিলাম শুধু।”
“ধন্যবাদ”, সে আর কিছু বলতে পারে না,
“আচ্ছা, আপনি এতদিন আমার সাথে একই ঘরে আছেন, অথচ আমি টের পাইনি!”
“পাওনি, কারণ তুমি ব্যস্ত ছিলে। আজ তোমার ব্যস্ততা নেই, তুমি সময়ের মতো স্থির হয়েছ। তাই টের পেয়েছ, এই ঘরে তুমি ছাড়াও আরও কেউ আছে।”
“আপনি ঘরের ঠিক কোন্ দিকে আছেন?”
“কী করবে শুনে?”
“আপনার পাশে গিয়ে বসব, পাশাপাশি বসতে কেমন লাগে, অনেকদিন হলো ভুলে গিয়েছি”
“আসবে?... এসো... বাঁদিক ঘেঁষে এসো...”
সে অল্প অল্প করে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বাঁদিকে চলতে শুরু করল।
এক পা এক পা করে এগোচ্ছে সে, “এই তো আর একটুখানি, বাঁদিকে... এসো, এই তো, প্রায় পৌঁছেই গেছ, আর এক পা!”
এক পা বাড়াতে সে ঘরের ঠিক সেইখানে এসে দাঁড়ালো, যেখান থেকে সে বাঁদিকে যাওয়া শুরু করেছিল।
“কোথায় আপনি?!” আর্তনাদ শোনা গেল তার গলা থেকে।
বক্তা অল্প হেসে বললেন, “বাঁদিকে তো হাত বাড়াওনি কখনও...”
সে ভয়ে ভয়ে হাত পাতলো বাঁদিকে, বাঁ দিক ভরে আছে ঠিক থাক ঠিক থাক ভাইব্রেশনে।
কতদিন বা কতবছর, মনে পড়ে না তার। অন্ধকারে থাকতে থাকতে থাকতে থাকতে, তার দেখার চোখ তৈরি হয়ে গিয়েছে। সে দেখেছে, এই ঘরে শুধু দেওয়াল আছে। দরজা নেই, জানালা নেই, ঘুলঘুলি এমনকি শব্দও নেই কোনো। তার সন্দেহ হয়, এমন নেই-এর মধ্যে থাকতে থাকতে তার কান একদিন শব্দ শুনতে ভুলে যাবে, চোখ দেখতে ভুলে যাবে, জিভ ভুলে যাবে বলতে। এসব ভেবে সে কঁকিয়ে ওঠে আর আবিষ্কার করে, মানুষ কোনোদিন কাঁদতে ভোলে না।
এতদিন বা এতবছর ধরে সে স্মৃতি রোমন্থন অভ্যাস করে এসেছে। বারবার একই ধরনের হাসির আওয়াজ, একই গানের লাইন, একই রোদ, রোদের তাপ, একই গন্ধ – ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভাবতে কখন যে তার নিজের খেয়ালও তাতে মিশে গিয়েছে, সে টের পায়নি। অতএব এখন সে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, তার সন্দেহ হয়, সে নিজে আদৌ সত্যি তো? সত্যিই কি এই চারটে দেওয়ালের কোনো অস্তিত্ব আছে? এই যে অন্ধকার, এটা কি আলো নয়?! নিজের হাত পা টিপে টিপে মেপে মেপে দেখে সে, সন্দেহ দূর হয় না। নিজের বুকের উপর সে হাত রাখে। টিক টক, টিক টক। তার হৃৎপিণ্ড বলে দিচ্ছে, সে আছে, সময় আছে, চার দেওয়াল আছে, অন্ধকার আছে। সমস্ত নেইকে এক ধাক্কায় মিথ্যে বানিয়ে দিচ্ছে ওই ঠিক থাক, ঠিক থাক শব্দটা।
একদিন ঘুম ভাঙার পর সে ভেবে নিল, দেওয়ালগুলোর রঙ হলুদ। এরকম ভেবে সে নিজের ভাবার ক্ষমতার প্রতি সন্তুষ্ট হতেই হঠাৎ ঘরের কোণ থেকে কে যেন বলে উঠল, “দেওয়ালগুলো হলুদ নয়, নীল”।
-“কে?”
“আমার পরিচয়ের থেকেও কি এই দেওয়ালের রঙ বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়?”
সে কিছুক্ষণ ভাবে, “রঙ যে নীলই আপনি জানলেন কী করে?”
“যে ভাবে তুমি জেনেছ, দেওয়ালের রঙ হলুদ”
সে সময় নিয়ে কথাটা কাটাছেড়া করে নিশ্চিত হয়। “আপনি এই ঘরে কীভাবে এলেন?”
“এলাম কোথায়, তুমিই তো এলে, আমি তো আগে থেকেই ছিলাম।”
সে ভাবার চেষ্টা করে, কিন্তু তার কিছুই মনে পড়ে না। “আপনি কখনও এখান থেকে বেরোতে চেষ্টা করেননি?”
“করেছিলাম, যখন তোমার মতো ছিলাম... এখন বুঝে গিয়েছি”
“কি?”
“এখান থেকে বেরোতে গেলে এখানেই ফিরে আসতে হবে”
দুজনেই চুপ করে থাকায় ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে।
“আপনার নাম কি?”
“তোমার মনে আছে, তোমার কি নাম ছিল?”
“না”
“তাহলে, আশা করছ কি করে যে, আমারও মনে থাকবে?”
কথা খুঁজতে থাকে সে, “আপনি এতদিন ধরে আমায় দেখছেন, অথচ আজই সাড়া দিলেন, কেন?”
“না দিলে কি তুমি খুশি হতে? দেওয়াল যে হলুদ রঙের তা ভেবে কি তুমি স্থির থাকতে, না পরক্ষণেই নিজের সাথে লড়াইয়ে নামতে নীলের পক্ষ নিয়ে? আমি তোমার কাজটা সহজ করে দিলাম শুধু।”
“ধন্যবাদ”, সে আর কিছু বলতে পারে না,
“আচ্ছা, আপনি এতদিন আমার সাথে একই ঘরে আছেন, অথচ আমি টের পাইনি!”
“পাওনি, কারণ তুমি ব্যস্ত ছিলে। আজ তোমার ব্যস্ততা নেই, তুমি সময়ের মতো স্থির হয়েছ। তাই টের পেয়েছ, এই ঘরে তুমি ছাড়াও আরও কেউ আছে।”
“আপনি ঘরের ঠিক কোন্ দিকে আছেন?”
“কী করবে শুনে?”
“আপনার পাশে গিয়ে বসব, পাশাপাশি বসতে কেমন লাগে, অনেকদিন হলো ভুলে গিয়েছি”
“আসবে?... এসো... বাঁদিক ঘেঁষে এসো...”
সে অল্প অল্প করে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বাঁদিকে চলতে শুরু করল।
এক পা এক পা করে এগোচ্ছে সে, “এই তো আর একটুখানি, বাঁদিকে... এসো, এই তো, প্রায় পৌঁছেই গেছ, আর এক পা!”
এক পা বাড়াতে সে ঘরের ঠিক সেইখানে এসে দাঁড়ালো, যেখান থেকে সে বাঁদিকে যাওয়া শুরু করেছিল।
“কোথায় আপনি?!” আর্তনাদ শোনা গেল তার গলা থেকে।
বক্তা অল্প হেসে বললেন, “বাঁদিকে তো হাত বাড়াওনি কখনও...”
সে ভয়ে ভয়ে হাত পাতলো বাঁদিকে, বাঁ দিক ভরে আছে ঠিক থাক ঠিক থাক ভাইব্রেশনে।
galpata theke kichu pelam moner gahane
উত্তরমুছুন