শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

০৩) রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়

এসো বয়কট করি



তোমাকে খুঁজছি। অনেক রঙে দেখেছি তোমায়। আবার রঙ খুঁজছি। খুঁজতে খুঁজতে তোমাকে আবিষ্কার করি আবার। বিপ্লবী রঙে। সেই একহারা চেহারা। সেই দুর্বিনীত চুল। উদাসী চোখ। আনমনা। আমার সমস্ত অস্তিত্বে চুপ করে যাওয়া রূপকথার কাঁপন। শরীর জুড়ে আবার কালবোশেখী। ঝড়ের ভেতর তোমাকে দেখি, তুমি আকাশ দেখছো চুরি করে। কেন? আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছেটা কি বুকের মধ্যে গড়াচ্ছে?

আমি নিঃশব্দে তোমাকে খুঁড়ে যাই। তোমার চোখের ওই উন্মুখ প্রলাপ থেকে নামতে থাকি। ঈষৎ বাঁকানো ঠোঁটের কিনারা পেরিয়ে নামতে থাকি। অস্পষ্ট হয়ে আসা গ্রীবা পেরিয়ে নামতে থাকি। নামতে নামতে আমি থমকে যাই তোমার হাতের লুকোনো পিস্তলে –

-কার ওপর গুলি করার নির্দেশ?

শীতল কন্ঠে অন্য উত্তাপ –

-পিস্তলে অনুভব করি জীবনের উত্তাপ। তবুও তো তাপ, শীতলতা নয়।

আমি চলকে যাই। আলোর ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে এ কোন্‌ অন্ধকারে তুমি?

আমি চুপি চুপি বলি,

-আমরা এখনো মানুষ... এখনো আকাশ ছুঁতে পারি... এখনো ভালোবাসতে পারি...

তোমার শীতল স্পর্শে কেঁপে ওঠে আমার আঙুলগুলো। প্রতি পলের অক্সিজেনশুদ্ধ গাঢ় রক্ত কখন যে নীল হয়ে উঠেছে তোমার প্রচন্ড ঘৃণায়! নীল রক্ত চুঁইয়ে পড়ে তোমার শরীর থেকে। কুঁচকে ওঠে তোমার ঠোঁটের কোণ, ‘এখানে নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে...’

আমি মাথা রাখি তোমার বুকের ওমে। তোমার গাঢ় চোখের পাতায় মৃদু স্পন্দনগুলো আমাকে বলে দেয়, কেমন সেই প্রতিদিন অসহ্য বেঁচে থাকা; একটু একটু করে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া; একটু একটু করে সরে সরে যাওয়া জীবন থেকে যোজনখানেক দূরে!

আমার চোখে চোখ রেখে নেমে আসে তৃষিত ঠোঁট। আমি পুড়তে থাকি।
আলতো ছোঁয়ায় হাত রাখি ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা হাতের মুঠিতে ধরা পিস্তলে। তুমি প্রবলভাবে চমকে ওঠো।

আমি ফিসফিস করি,

-এসো বয়কট করি।

তুমি অবাক প্রশ্নে থমকে যাও,

-কী?
-মৃত্যু; বরং আর একবার জীবনে ফিরি...


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন