চিত্রকর
মাটির তলার ঘরটায় থাকে ওয়াশিং মেশিন আর ড্রায়ার। সপ্তাহান্তে সেখানে জামাকাপড় কাচতে দিতে যাই। গ্রীষ্মদিনে অদ্ভুত ঠাণ্ডা থাকে ঘরটা। সিঁড়ি দিয়ে নেমে দরজা খুলে ঢুকতেই একটা মাটি মাটি সোঁদা গন্ধ আমাকে টেনে নেয়। কেমন যেন ছোটবেলার বৃষ্টিদিন মনে পড়ে। এদিক ওদিক ইঁট পাথর বার করা তুমুল অগোছালো ঘর। বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দাদের নানা পরিত্যক্ত জিনিসে ঠাসা। বাতিল এয়ার কণ্ডিশনার, পুরনো সোফা, খাটের অংশ, চেয়ার, টেবিল, ক্যাসেট প্লেয়ার, ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, বেতের বাক্স – কী নেই সেখানে! খুব প্রিয় মানুষটার প্রতিটি কথা, কথার প্রতিটি শব্দ যেমন চেনা, ঠিক তেমনই চেনা এ ঘরের প্রতিটি জিনিস। যেন আমার নিজস্ব এক নিরালা পৃথিবী।
সেদিন ঢুকে দেখি কী আশ্চর্য! ভিতরে আলো জ্বলছে। দিব্যি এক কোণা পরিষ্কার করে ইজেল-ক্যানভাস-রং-তুলির সংসার সাজানো। একটি ছেলে, আমার থেকে কমবয়সীই হবে, সাবলীল টানে আঁকছে কিছু একটা। পায়ে পায়ে গিয়ে দাঁড়াই। লোভ হয় দেখার। ক্যানভাসে একটি মেয়ের মুখের আদল, তবে স্পষ্ট নয় এখনো। নিমগ্ন ছেলেটি হঠাৎ চোখ তুলে তাকায়, হাসে। তখনই লক্ষ্য করি তার সাদা জামায়, বাদামী মুখে, ঘন চুলে এখানে সেখানে রং লেগে আছে।
কথার ঝরণায় স্নান করিয়ে দেয় আমায়, আমারও ভালো লাগে কথা বলতে। কাচতে আনা জামাকাপড় পড়ে থাকে, আমাদের আড্ডা জমে ওঠে। কত কিছু শেখা হয় তার কাছ থেকে, রং-রূপের এক ভিন্ন জগৎ আমাকে সম্মোহিত করে। হঠাৎ খেয়াল পড়ে, অনেকটা সময় চলে গেছে। জামাকাপড় কাচতে দিয়ে দুদ্দাড় উঠে আসি ওপরে। আরও দুবার যাই - জামাকাপড় ড্রায়ারে দিতে, শুকিয়ে গেলে গুছিয়ে আনতে। দুবারে আরও অনেক কথা হয়। শুধু মনে থাকে না জিজ্ঞেস করতে কি নাম, কোথায় থাকে! এ বাড়িরই ওপর নঞ্চে কোনো একটা তলায় থাকে নিশ্চয়ই, হয়তো নতুন এসেছে!
পরের দিন সকালবেলা দৌড়ে নামি নিচে। ঘরটার দরজা বন্ধ বাইরে থেকে, যেমন থাকে। তার মানে, আজ কেউ নেই। ভেতরে ঢুকি। সেই কোণাটায় মেঝের ওপর দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখা ক্যানভাস শুধু। হাঁটু মুড়ে বসি তার সামনে এবং চমকে উঠি আয়নায় নিজের মুখ দেখার মতো।
এখনো সপ্তাহান্তে ও ঘরের দরজা খোলার আগে বেড়ে যায় লাবডুব, যদিও নিশ্চিত জানি, কেউ থাকবে না। সত্যিই কি কেউ ছিল? কোনোদিন? তবে ছবিটা এলো কোথ্থেকে? ওটা কি আমার? না ওর স্প্যানিশ প্রেমিকার? রাস্তাঘাটে অনেকে আমায় স্প্যানিশ বলে ভুল করে। হয়তো সে মেয়েটির মুখের সঙ্গে আমার মুখের মিল আছে! যাকে জিজ্ঞেস করা যেত, তাকে কোথায় খুঁজে পাব? কখনও মনে হয়, মনের ঘরে বসত করে যে জন, তাকে বাইরেই বা খুঁজে মরি কেন!
মাটির তলার ঘরটায় থাকে ওয়াশিং মেশিন আর ড্রায়ার। সপ্তাহান্তে সেখানে জামাকাপড় কাচতে দিতে যাই। গ্রীষ্মদিনে অদ্ভুত ঠাণ্ডা থাকে ঘরটা। সিঁড়ি দিয়ে নেমে দরজা খুলে ঢুকতেই একটা মাটি মাটি সোঁদা গন্ধ আমাকে টেনে নেয়। কেমন যেন ছোটবেলার বৃষ্টিদিন মনে পড়ে। এদিক ওদিক ইঁট পাথর বার করা তুমুল অগোছালো ঘর। বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দাদের নানা পরিত্যক্ত জিনিসে ঠাসা। বাতিল এয়ার কণ্ডিশনার, পুরনো সোফা, খাটের অংশ, চেয়ার, টেবিল, ক্যাসেট প্লেয়ার, ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, বেতের বাক্স – কী নেই সেখানে! খুব প্রিয় মানুষটার প্রতিটি কথা, কথার প্রতিটি শব্দ যেমন চেনা, ঠিক তেমনই চেনা এ ঘরের প্রতিটি জিনিস। যেন আমার নিজস্ব এক নিরালা পৃথিবী।
সেদিন ঢুকে দেখি কী আশ্চর্য! ভিতরে আলো জ্বলছে। দিব্যি এক কোণা পরিষ্কার করে ইজেল-ক্যানভাস-রং-তুলির সংসার সাজানো। একটি ছেলে, আমার থেকে কমবয়সীই হবে, সাবলীল টানে আঁকছে কিছু একটা। পায়ে পায়ে গিয়ে দাঁড়াই। লোভ হয় দেখার। ক্যানভাসে একটি মেয়ের মুখের আদল, তবে স্পষ্ট নয় এখনো। নিমগ্ন ছেলেটি হঠাৎ চোখ তুলে তাকায়, হাসে। তখনই লক্ষ্য করি তার সাদা জামায়, বাদামী মুখে, ঘন চুলে এখানে সেখানে রং লেগে আছে।
কথার ঝরণায় স্নান করিয়ে দেয় আমায়, আমারও ভালো লাগে কথা বলতে। কাচতে আনা জামাকাপড় পড়ে থাকে, আমাদের আড্ডা জমে ওঠে। কত কিছু শেখা হয় তার কাছ থেকে, রং-রূপের এক ভিন্ন জগৎ আমাকে সম্মোহিত করে। হঠাৎ খেয়াল পড়ে, অনেকটা সময় চলে গেছে। জামাকাপড় কাচতে দিয়ে দুদ্দাড় উঠে আসি ওপরে। আরও দুবার যাই - জামাকাপড় ড্রায়ারে দিতে, শুকিয়ে গেলে গুছিয়ে আনতে। দুবারে আরও অনেক কথা হয়। শুধু মনে থাকে না জিজ্ঞেস করতে কি নাম, কোথায় থাকে! এ বাড়িরই ওপর নঞ্চে কোনো একটা তলায় থাকে নিশ্চয়ই, হয়তো নতুন এসেছে!
পরের দিন সকালবেলা দৌড়ে নামি নিচে। ঘরটার দরজা বন্ধ বাইরে থেকে, যেমন থাকে। তার মানে, আজ কেউ নেই। ভেতরে ঢুকি। সেই কোণাটায় মেঝের ওপর দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখা ক্যানভাস শুধু। হাঁটু মুড়ে বসি তার সামনে এবং চমকে উঠি আয়নায় নিজের মুখ দেখার মতো।
এখনো সপ্তাহান্তে ও ঘরের দরজা খোলার আগে বেড়ে যায় লাবডুব, যদিও নিশ্চিত জানি, কেউ থাকবে না। সত্যিই কি কেউ ছিল? কোনোদিন? তবে ছবিটা এলো কোথ্থেকে? ওটা কি আমার? না ওর স্প্যানিশ প্রেমিকার? রাস্তাঘাটে অনেকে আমায় স্প্যানিশ বলে ভুল করে। হয়তো সে মেয়েটির মুখের সঙ্গে আমার মুখের মিল আছে! যাকে জিজ্ঞেস করা যেত, তাকে কোথায় খুঁজে পাব? কখনও মনে হয়, মনের ঘরে বসত করে যে জন, তাকে বাইরেই বা খুঁজে মরি কেন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন