বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

০৭) তুষ্টি ভট্টাচার্য


কাগজফুল


বোগেনভিলিয়া না বলে কাগজফুল বললে বেশি ভালো লাগে। ওর রঙিন কিম্বা সাদা পাতলা পাতলা পাতাগুলো পালকের মতো ভাসতে থাকে, হাসতে থাকে হাওয়ায়। একটু হাওয়া দিলে কাগজফুল চলে যেতে পারে বাগান থেকে জানালায়। ঝড় উঠলে পাশের পানা পুকুরটায় ওদের পাতলা কাগজ-লাশ ভাসতে থাকে। আর তেমন শুকনো খটখটে, বা রোদ ঝলমলে দিনে ওরা গাছের গায়ে আহ্লাদে লটরপটর করতেই থাকে, করতেই থাকে।

বোগেনভিলিয়ার পাতা যথারীতি সবুজ থেকে আরও সবুজ হয়ে ওঠে। তরতর করে বেড়ে ওঠে ডালপালা। গুল্ম থেকে গাছ, গাছ থেকে বৃক্ষ – অবশ্যম্ভাবী এই পরিবর্তনের মাঝে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। বোগেনভিলিয়া কি সম্পূর্ণ বৃক্ষ হতে পারে? একটু ঝুঁকে পড়া নমনীয়তা তার জন্মগত দোষ। বড় হতে হতে বৃক্ষের দৈর্ঘ্য পেলেও এলিট ক্লাসের আভিজাত্য পায় না।

কাগজফুল তো মিথ্যে ফুল। না সে পাতার সবুজ পেয়েছে, না ফুলের সৌরভ। মৌমাছির দল গুনগুন করে না তার কাছে। মধু নেই তার কোষে। তার গর্ভ নেই, বীজ বোনার সখ তাকে মানায় না। রঙিন-পাতা সুখই তার সম্বল। তার ঝিরঝিরে সুখে অবশ্য এ জন্য কোনো বাদ সাধেনি। হাওয়ায়, রোদে সে দিব্যি ফুরফুরে থাকে, মনের আনন্দে মশগুল সে। শুধু বৃষ্টি এলে বড় বিপর্যস্ত হয় কাগজফুল। ভিজে নেতিয়ে মৃতপ্রায় পাতা-ফুল ঝরে পড়ে দলা দলা হয়ে। আবার রোদ উঠলে নতুন কিশলয়, নতুন রূপ পায় কাগজের ফুল।


বৃষ্টিতে মহাসুখি কাগজফুল গাছের পাতা। ঢাল ঢাল ঘন সবুজ পাতায় কী বাহার তখন! চকচক করে জ্বলে ওঠে পাতার চোখ। শরীর বাঁধ মানে না, ডাক দেয়, খুঁজে ফেরে তারই কোনো দোসরকে। পাতায় পাতায় গড়ে ওঠে প্রেম-বাহার। জলে ধ্যাবড়ানো কাগজফুল হিংসেয় জ্বলে। তার নিজের রূপ দেখে কান্না আসে হু হু করে। আকুল হয়ে রোদ চায়, আরও আরও রোদ চায়।

অবশেষে বৃষ্টিদিন শেষে রোদ আসে। কাগজফুল পূর্ণতা পায়। সেই মিথ্যে ফুলের ভেতরে জেগে ওঠে সত্যিকারের ফুল। তারার মতো সেই ফুলকে আগলে রাখে পাতা-ফুল মায়ের মতো । ছায়া দেয়, ওম দেয় নিজের বুকের। কোনো এক নিভৃত দিনে অলি এসে বসে সেই ফুলে, গুনগুন করে, পরাগ মাখা পা নিয়ে উড়ে যায় অন্য কোনো তারা ফুলে। সেদিন কাগজফুলের হাসি আর ধরে না! সেদিনই কাগজফুল সত্যিকারের ফুল হয়ে যায় মনে মনে।

২টি মন্তব্য: