কী-বোর্ডে ঝড়তোলা স্পীড
নীতা বিশ্বাস
(১)
লাইটার জ্বালিয়েছি। ব্যালকনির বাতাসে বসন্ত খেলছে। সিগারেট ধরাতেই তাগড়াই মৌ-লোভীটা চামেলি ফুলের গর্ভকেশর থেকে মুখ তুলে আমার তর্জনীতে ল্যান্ড করলো। সামান্য লাইটারশব্দে ওর নিবিড় মনোযোগে বিচ্ছিন্নতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। মুহূর্তে বাল্মিকী, শ্লোক, ক্রৌঞ্চ-মিথুন টিথুন মনে পড়ে আত্ম অপরাধবোধ। শাপ টাপ লাগবে নাকি! লাগতেও পারে, মধুখোরকে বেপথুমানা! পাপবোধে আহত আমি প্রাপ্য শাস্তি মাথায় তুলে নিতে প্রস্তুত। সিগারেট পুড়ছে। আমিও। পুড়ছি।
পুড়তে পুড়তে শ্যামলী চিৎকার করেছিল। সামলাতে পারেনি। শরীরে আগুন নিয়ে খোলা গেটের বাইরে। ক্লাস নাইন-টেন হবে। দৃপ্ত যৌবনা মৌবোনা নয়, ফর্সা ত্বকের সাধারণ মেয়ে। মানুষ সাধারণত সাধারণ’ই হয়। কারো চোখ হাত ভালোবাসা তাকে অসাধারণ করে দেয়। আমি তখন ফার্স্ট ইয়ার। চোখের সামনে জ্বলন্ত ছোটাছুটি। বসন্তবাতাস সেদিন আরো বেশি জ্বালাবার রসদে ভরপুর, কেরোসিনের কল্যাণে। মোটা শতরঞ্চি জড়িয়ে ছুটন্ত আগুনকে নিভিয়ে দেবার প্রচেষ্টায় প্রাণপণ সেই আমার প্রথম নারীশরীর ছোঁয়া। জ্বলন্ত নারীশরীর। সেই থেকে বসন্তবাতাসে চামেলি নয়, আগ্রাসী পোড়াগন্ধ পাই।
নিজেকে দায়ী করে তর্জনী স্থির রাখি। কামড়াক। আমার উচিৎ ও প্রাপ্য শাস্তি। শ্যামলীর বাবা মা ওপার বাংলার রায়টে শেষ। স্নেহের কাকা আর অরাজি কাকিমার পোষ্য শ্যামলী। পান থেকে চুন খসলেই ঝাড়পিঠ, বেতবাজি। আমাকে বাঁচালে কেন? মহত্ব? বেঁচে ফিরে এসে পোড়া কোঁচকানো শরীর দেখিয়ে আমায় চ্যালেঞ্জ শ্যামলীর। আমি ভয়ে পালিয়ে আসতে আসতে আবার পোড়াগন্ধ বাতাসে, পেয়েছি।
মৌমাছিটা ধমকালো, এনি কাইন্ড অফ স্মোকিং ইস ইনজুরিয়াস টু হেলথ। মদ্যপান পানপরাগ অলসো। আজকাল হেঁজিপেঁজি আম আদমিও জানে এসব লেকচারবাজী। রজ্নীগন্ধা পানপরাগ তবু দোল খায়, লোকে খায়, স্যাচের পর স্যাচে বিকে যায়। মৌখোরটা মধু নিতে নিতে কী পরাগমিলন ঘটায়নি ফুলের গর্ভকেশরে? এটা পাপের না গৌরবের!
সৌরভ বাংলার গৌরব—টিভিটা অন ছিল। লর্ডসের মাঠে সৌরভ তখন জার্সি উড়িয়ে সারা মাঠ। দাদাগিরিতে ২৪/২৫, তারচেয়ে বড় মেয়েরা এখনও সৌরভকে সরাসরি প্রেম নিবেদন... রোজ দেখছি। এটা কি পাপ! কেউ কি শ্যামলীকে ভালোবেসেছিল? কিংবা শ্যামলীই কারোকে! তাতে নিজের শরীর পোড়ে কেন? সে তো হৃদয় জ্বালায়! আগুনে নয়, আলোতে। ভালোবাসা কি পাপ? আলবৎ পাপ, মৌমাছিটা ফের খরখর ফরফর। যদি ফেবুতে পঁচিশটাকে প্রেমবার্তা একই সাথে, জানবে -- পাপ।
(২)
তুই শালা একরত্তি মাছি, একের পর এক ফুলে -- তুই পাপী না? হ্যাঁ আমিও। আমি পবিত্র পাপী। সাহায্যের ঠোঁটে দরাজ।
মানে?
মানে বোঝো না? আমি মিডিয়া। ডাইরেক্ট নই। আমি সাহায্য না করলে কাননে কুসুম – পেতে? আমি স্পার্ম ব্যাংক। আর শোনো, মুখ খারাপ করবে না একদম, মাছি আমায় আল্টিমেটাম দিলো — আমি কিন্তু মিডিয়া। তুড়ি বাজিয়ে মিথ্যেকথা বাতাসে ভাসিয়ে, বাজারে খাইয়ে দিতে জানি। রাগালে পার পাবে না তীরে ওঠবার। হিউমারকে রিউমারে... পারি আমি।
অসহ্য! পিষে মেরে ফেলবো বাড়াবাড়ি করলে...
সাহস থাকে তো মারো...! শ্যামলীর গর্ভকেশরে কে?
কে? কে? কে?... আমি চিৎকারে ঘামে।
উহুঁ। চিৎকার একদম নয়। না-কে হ্যাঁ, শ্যামলকে নিখিল... আমার বাঁ হাতের খেল। আমি মিডিয়া। ট্যুইটারে-ব্লগে-ফেসবুকে...। হুঁ হুঁ। কী-বোর্ডে আমার ঝড়তোলা স্পীড। আমি এখন চামেলি ছেড়ে ক্যামেলিয়াতে যাই। বাই নিখিল, বাআআআআই...
শ্যামলী সেদিন পুড়তে পুড়তে বলেছিল, শ্যামলকে বলে দিও, গুড বাই ফর এভার। কথা রাখতে পারেনি। মৌলোভীটা হাসতে হাসতে আমারই চোখের সামনে দিয়ে চম্পায়...। এরপর বেলি, যূথি, কাশ্মীরি গুলাবী খুসবুতে। বদবু থাকে শুধু শ্যামলীদেরই।
আমিও কি মিডিয়া? শ্যামল তো আমারই বন্ধু!
(১)
লাইটার জ্বালিয়েছি। ব্যালকনির বাতাসে বসন্ত খেলছে। সিগারেট ধরাতেই তাগড়াই মৌ-লোভীটা চামেলি ফুলের গর্ভকেশর থেকে মুখ তুলে আমার তর্জনীতে ল্যান্ড করলো। সামান্য লাইটারশব্দে ওর নিবিড় মনোযোগে বিচ্ছিন্নতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। মুহূর্তে বাল্মিকী, শ্লোক, ক্রৌঞ্চ-মিথুন টিথুন মনে পড়ে আত্ম অপরাধবোধ। শাপ টাপ লাগবে নাকি! লাগতেও পারে, মধুখোরকে বেপথুমানা! পাপবোধে আহত আমি প্রাপ্য শাস্তি মাথায় তুলে নিতে প্রস্তুত। সিগারেট পুড়ছে। আমিও। পুড়ছি।
পুড়তে পুড়তে শ্যামলী চিৎকার করেছিল। সামলাতে পারেনি। শরীরে আগুন নিয়ে খোলা গেটের বাইরে। ক্লাস নাইন-টেন হবে। দৃপ্ত যৌবনা মৌবোনা নয়, ফর্সা ত্বকের সাধারণ মেয়ে। মানুষ সাধারণত সাধারণ’ই হয়। কারো চোখ হাত ভালোবাসা তাকে অসাধারণ করে দেয়। আমি তখন ফার্স্ট ইয়ার। চোখের সামনে জ্বলন্ত ছোটাছুটি। বসন্তবাতাস সেদিন আরো বেশি জ্বালাবার রসদে ভরপুর, কেরোসিনের কল্যাণে। মোটা শতরঞ্চি জড়িয়ে ছুটন্ত আগুনকে নিভিয়ে দেবার প্রচেষ্টায় প্রাণপণ সেই আমার প্রথম নারীশরীর ছোঁয়া। জ্বলন্ত নারীশরীর। সেই থেকে বসন্তবাতাসে চামেলি নয়, আগ্রাসী পোড়াগন্ধ পাই।
নিজেকে দায়ী করে তর্জনী স্থির রাখি। কামড়াক। আমার উচিৎ ও প্রাপ্য শাস্তি। শ্যামলীর বাবা মা ওপার বাংলার রায়টে শেষ। স্নেহের কাকা আর অরাজি কাকিমার পোষ্য শ্যামলী। পান থেকে চুন খসলেই ঝাড়পিঠ, বেতবাজি। আমাকে বাঁচালে কেন? মহত্ব? বেঁচে ফিরে এসে পোড়া কোঁচকানো শরীর দেখিয়ে আমায় চ্যালেঞ্জ শ্যামলীর। আমি ভয়ে পালিয়ে আসতে আসতে আবার পোড়াগন্ধ বাতাসে, পেয়েছি।
মৌমাছিটা ধমকালো, এনি কাইন্ড অফ স্মোকিং ইস ইনজুরিয়াস টু হেলথ। মদ্যপান পানপরাগ অলসো। আজকাল হেঁজিপেঁজি আম আদমিও জানে এসব লেকচারবাজী। রজ্নীগন্ধা পানপরাগ তবু দোল খায়, লোকে খায়, স্যাচের পর স্যাচে বিকে যায়। মৌখোরটা মধু নিতে নিতে কী পরাগমিলন ঘটায়নি ফুলের গর্ভকেশরে? এটা পাপের না গৌরবের!
সৌরভ বাংলার গৌরব—টিভিটা অন ছিল। লর্ডসের মাঠে সৌরভ তখন জার্সি উড়িয়ে সারা মাঠ। দাদাগিরিতে ২৪/২৫, তারচেয়ে বড় মেয়েরা এখনও সৌরভকে সরাসরি প্রেম নিবেদন... রোজ দেখছি। এটা কি পাপ! কেউ কি শ্যামলীকে ভালোবেসেছিল? কিংবা শ্যামলীই কারোকে! তাতে নিজের শরীর পোড়ে কেন? সে তো হৃদয় জ্বালায়! আগুনে নয়, আলোতে। ভালোবাসা কি পাপ? আলবৎ পাপ, মৌমাছিটা ফের খরখর ফরফর। যদি ফেবুতে পঁচিশটাকে প্রেমবার্তা একই সাথে, জানবে -- পাপ।
(২)
তুই শালা একরত্তি মাছি, একের পর এক ফুলে -- তুই পাপী না? হ্যাঁ আমিও। আমি পবিত্র পাপী। সাহায্যের ঠোঁটে দরাজ।
মানে?
মানে বোঝো না? আমি মিডিয়া। ডাইরেক্ট নই। আমি সাহায্য না করলে কাননে কুসুম – পেতে? আমি স্পার্ম ব্যাংক। আর শোনো, মুখ খারাপ করবে না একদম, মাছি আমায় আল্টিমেটাম দিলো — আমি কিন্তু মিডিয়া। তুড়ি বাজিয়ে মিথ্যেকথা বাতাসে ভাসিয়ে, বাজারে খাইয়ে দিতে জানি। রাগালে পার পাবে না তীরে ওঠবার। হিউমারকে রিউমারে... পারি আমি।
অসহ্য! পিষে মেরে ফেলবো বাড়াবাড়ি করলে...
সাহস থাকে তো মারো...! শ্যামলীর গর্ভকেশরে কে?
কে? কে? কে?... আমি চিৎকারে ঘামে।
উহুঁ। চিৎকার একদম নয়। না-কে হ্যাঁ, শ্যামলকে নিখিল... আমার বাঁ হাতের খেল। আমি মিডিয়া। ট্যুইটারে-ব্লগে-ফেসবুকে...। হুঁ হুঁ। কী-বোর্ডে আমার ঝড়তোলা স্পীড। আমি এখন চামেলি ছেড়ে ক্যামেলিয়াতে যাই। বাই নিখিল, বাআআআআই...
শ্যামলী সেদিন পুড়তে পুড়তে বলেছিল, শ্যামলকে বলে দিও, গুড বাই ফর এভার। কথা রাখতে পারেনি। মৌলোভীটা হাসতে হাসতে আমারই চোখের সামনে দিয়ে চম্পায়...। এরপর বেলি, যূথি, কাশ্মীরি গুলাবী খুসবুতে। বদবু থাকে শুধু শ্যামলীদেরই।
আমিও কি মিডিয়া? শ্যামল তো আমারই বন্ধু!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন