আসুন কাগজের রকেট ওড়াই।
প্রমাণ করি- আমরাই পাখিদের পূর্বসুরী।
ছোটবেলায় অঙ্কভুলের দুটি দিক ছিল। এক- বাবার অসহ্য রামকানমলা, দুই- খাতার ওই পাতাটি ছিঁড়ে নৌকা বানানো। নৌকা পাল কিম্বা দাঁড় এমন কি ভাসার জলটুকু ছাড়াই কাঁড়ি কাঁড়ি তৈরি হয়ে গেছে। অবশ্য এই নৌকার শেষ ঠিকানা কোথায় - অধিকাংশ সময়েই খোঁজ থাকত না। যেমন খোঁজ থাকত না দাদুর দাঁতের। কারণ দাদুর দাঁত প্রায় সময়ই গ্লাসের জলে কাটাতো। দাদুরা সাধারণত অনেক গল্প জানেন এবং তাঁদের বিশেষ কাজকম্মো থাকে না। তাই তাঁদের সময় মানেই জলের গ্লাসে দাঁত, নাতি-নাতনি আর রূপকথা।
রূপকথা মিলিয়ে নিতে চাইলে অবশ্য সে আর রূপকথা থাকে না। একটা ম্যাজিককে বিশ্বাস করেই বাঁচে অসংখ্য গপ্পো আর দাদু। পোষোলার (পড়ুন পৌষলা) আগের রাতেও এরকম একটা ম্যাজিক থাকত আর এটাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আর ঘুমোতাম না। সকালের হাঁটাহাঁটি সেরে মুরগীর পালক আমড়াআঁটিতে গুঁজে ব্যাডমিন্টনের কর্ক বানিয়ে নিতাম। ওইদিকে রান্না হতো, আমরা এদিকে মত্ত থাকতাম ছাদহীন একটা সকালে। রোজকার ছাদটা অভ্যেস বলেই হয়তো একদিন এত ভালো লাগত, নইলে তো ফুটপাথকে স্বর্গ ভাবতে হয়! মাঠের এদিক সেদিক দু’পা-চার পায়ের পটি’তে ভর্তি। তাই আমরা রান্না করে একটা পুকুরের ধারে এসে খেতে বসতাম। পুকুরের জল খুব স্বচ্ছ, এমন কি ওই জলেই রান্না হতো খিচুড়ি। খাওয়া হলেই হাওয়া হয়ে যেতাম। কারণ এরপরেই মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক পড়ত। পান খেতো মা-ঠাকুমা-রা, আমরা চাইলেই সেই স্লোগান - উঁহু ছোটছেলে পান খায় না, কুকুরে কামড়ে দেবে! সেসব ভয়কেই পোষ মানিয়ে খেজুরপাতা আর শিশুপাতা চিবিয়ে মুখ লাল করে বলতাম - তোর খয়েরটা বেশি হয়ে গেছে বোধহয়!
বয়স এবং চুলের রঙই ঠিক করে দেয় কথার ওজন। পানের সত্যিটা যেদিন আবিষ্কার করেছিলাম, খুব রাগ হয়েছিল। নিজের বোকামিকে ছোট করে দেখতে শিখে ফেলা মানেই তো বড় হয়ে যাওয়া! বুঝেছিলাম, আবিষ্কার আসলে সময় নির্ভরশীল। টিভির পরেই টিভির রিমোট আবিষ্কার হয়। মাধ্যাকর্ষণ আসে আপেল গাছ থেকে খসলে। তেমনি মানুষ আবিষ্কৃত হয় জন্মের পর। আর মৃত্যু অব্দি রাস্তাটুকুই লোকজনের চোখে পড়ে। সব কিছু মানুষ দেখতে পায় না, কিম্বা দেখতে চায় না। খুব বেশি আলো আসলে অন্ধকারেরই সমান।
এই যেমন পাশের বাড়ির গোলাপটব চুরি হলেও খবর রাখেন না মধুবাবু। মধুবাবু অদ্ভুত এক চশমা ব্যবহার করেন, যা দিয়ে তিনি যা চান সেটিই কেবল দেখতে পান। অটো ধরতে গিয়ে তিনি সামনে বসা ভিখিরিকে দেখতে পান না। খবরের কাগজে শব্দছকের পাশেই রক্ত চেয়ে বিজ্ঞাপনটি দেখতে পান না। মধুবাবু জানেন, তিনি সত্তরের ঘরে এলেই মারা যাবেন। আর ওই দিনটার অপেক্ষায় কাটিয়ে দেবেন বাকি দিনক’টা।
বয়স সবার বাড়ে, সুপারম্যান ছাড়া। কারণ তিনি প্যান্টের ওপরে জাঙিয়া পরেন। তবে এইভাবে ব্যক্তিগত ফুটোফাটাকে সমাজের চোখে আনতে সাহস লাগে বৈকি! রুমালের চেয়ে বেশি সুস্থ রাখতে হয় জাঙিয়া’কে। আসলে জাঙিয়া তো প্রতীক। ভিতরের লুকিয়ে রাখাকে বাইরে এনে দেখানোই সুপারম্যানের কাজ। দাদুকে কমিক্স্ থেকে তার গল্প বলতে গেলেই বলতেন - “আরে গতকালই তো ইসমাইলের কাছে আন্ডারপ্যান্ট সেলাই করতে এসেছিল। চা খেলো দাওয়ায় বসে। চাষ কেমন হলো, এবারে লবান (পড়ুন নবান্ন) কবে, এসব বলছিল।” আমরা হেসেছি, কিন্তু গোপনে খুঁজেছি মিথ্যেটাকে। কলকাতা ‘ক’ই প্রথম ম্যাজিক শুনিয়েছিল। এখন বুঝি মানুষ ম্যাজিক শোনে বলেই ভোট দেয়। আর বিশ্বাস করে বলেই তিনটে শালিক দেখে অপেক্ষা করে চিঠির।
আর এই অবাক প্রত্যশাগুলোই দাদু হয়ে আমাদের মধুবাবু হতে দেয় না। ক্লাস সেভেনে পাওয়া কাগুজে বেঢপ নৌকাটাও সাজিয়ে রাখি ক্লাস নাইনের গ্রিটিংস কার্ডটার পাশে।
ছোটবেলায় অঙ্কভুলের দুটি দিক ছিল। এক- বাবার অসহ্য রামকানমলা, দুই- খাতার ওই পাতাটি ছিঁড়ে নৌকা বানানো। নৌকা পাল কিম্বা দাঁড় এমন কি ভাসার জলটুকু ছাড়াই কাঁড়ি কাঁড়ি তৈরি হয়ে গেছে। অবশ্য এই নৌকার শেষ ঠিকানা কোথায় - অধিকাংশ সময়েই খোঁজ থাকত না। যেমন খোঁজ থাকত না দাদুর দাঁতের। কারণ দাদুর দাঁত প্রায় সময়ই গ্লাসের জলে কাটাতো। দাদুরা সাধারণত অনেক গল্প জানেন এবং তাঁদের বিশেষ কাজকম্মো থাকে না। তাই তাঁদের সময় মানেই জলের গ্লাসে দাঁত, নাতি-নাতনি আর রূপকথা।
রূপকথা মিলিয়ে নিতে চাইলে অবশ্য সে আর রূপকথা থাকে না। একটা ম্যাজিককে বিশ্বাস করেই বাঁচে অসংখ্য গপ্পো আর দাদু। পোষোলার (পড়ুন পৌষলা) আগের রাতেও এরকম একটা ম্যাজিক থাকত আর এটাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আর ঘুমোতাম না। সকালের হাঁটাহাঁটি সেরে মুরগীর পালক আমড়াআঁটিতে গুঁজে ব্যাডমিন্টনের কর্ক বানিয়ে নিতাম। ওইদিকে রান্না হতো, আমরা এদিকে মত্ত থাকতাম ছাদহীন একটা সকালে। রোজকার ছাদটা অভ্যেস বলেই হয়তো একদিন এত ভালো লাগত, নইলে তো ফুটপাথকে স্বর্গ ভাবতে হয়! মাঠের এদিক সেদিক দু’পা-চার পায়ের পটি’তে ভর্তি। তাই আমরা রান্না করে একটা পুকুরের ধারে এসে খেতে বসতাম। পুকুরের জল খুব স্বচ্ছ, এমন কি ওই জলেই রান্না হতো খিচুড়ি। খাওয়া হলেই হাওয়া হয়ে যেতাম। কারণ এরপরেই মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক পড়ত। পান খেতো মা-ঠাকুমা-রা, আমরা চাইলেই সেই স্লোগান - উঁহু ছোটছেলে পান খায় না, কুকুরে কামড়ে দেবে! সেসব ভয়কেই পোষ মানিয়ে খেজুরপাতা আর শিশুপাতা চিবিয়ে মুখ লাল করে বলতাম - তোর খয়েরটা বেশি হয়ে গেছে বোধহয়!
বয়স এবং চুলের রঙই ঠিক করে দেয় কথার ওজন। পানের সত্যিটা যেদিন আবিষ্কার করেছিলাম, খুব রাগ হয়েছিল। নিজের বোকামিকে ছোট করে দেখতে শিখে ফেলা মানেই তো বড় হয়ে যাওয়া! বুঝেছিলাম, আবিষ্কার আসলে সময় নির্ভরশীল। টিভির পরেই টিভির রিমোট আবিষ্কার হয়। মাধ্যাকর্ষণ আসে আপেল গাছ থেকে খসলে। তেমনি মানুষ আবিষ্কৃত হয় জন্মের পর। আর মৃত্যু অব্দি রাস্তাটুকুই লোকজনের চোখে পড়ে। সব কিছু মানুষ দেখতে পায় না, কিম্বা দেখতে চায় না। খুব বেশি আলো আসলে অন্ধকারেরই সমান।
এই যেমন পাশের বাড়ির গোলাপটব চুরি হলেও খবর রাখেন না মধুবাবু। মধুবাবু অদ্ভুত এক চশমা ব্যবহার করেন, যা দিয়ে তিনি যা চান সেটিই কেবল দেখতে পান। অটো ধরতে গিয়ে তিনি সামনে বসা ভিখিরিকে দেখতে পান না। খবরের কাগজে শব্দছকের পাশেই রক্ত চেয়ে বিজ্ঞাপনটি দেখতে পান না। মধুবাবু জানেন, তিনি সত্তরের ঘরে এলেই মারা যাবেন। আর ওই দিনটার অপেক্ষায় কাটিয়ে দেবেন বাকি দিনক’টা।
বয়স সবার বাড়ে, সুপারম্যান ছাড়া। কারণ তিনি প্যান্টের ওপরে জাঙিয়া পরেন। তবে এইভাবে ব্যক্তিগত ফুটোফাটাকে সমাজের চোখে আনতে সাহস লাগে বৈকি! রুমালের চেয়ে বেশি সুস্থ রাখতে হয় জাঙিয়া’কে। আসলে জাঙিয়া তো প্রতীক। ভিতরের লুকিয়ে রাখাকে বাইরে এনে দেখানোই সুপারম্যানের কাজ। দাদুকে কমিক্স্ থেকে তার গল্প বলতে গেলেই বলতেন - “আরে গতকালই তো ইসমাইলের কাছে আন্ডারপ্যান্ট সেলাই করতে এসেছিল। চা খেলো দাওয়ায় বসে। চাষ কেমন হলো, এবারে লবান (পড়ুন নবান্ন) কবে, এসব বলছিল।” আমরা হেসেছি, কিন্তু গোপনে খুঁজেছি মিথ্যেটাকে। কলকাতা ‘ক’ই প্রথম ম্যাজিক শুনিয়েছিল। এখন বুঝি মানুষ ম্যাজিক শোনে বলেই ভোট দেয়। আর বিশ্বাস করে বলেই তিনটে শালিক দেখে অপেক্ষা করে চিঠির।
আর এই অবাক প্রত্যশাগুলোই দাদু হয়ে আমাদের মধুবাবু হতে দেয় না। ক্লাস সেভেনে পাওয়া কাগুজে বেঢপ নৌকাটাও সাজিয়ে রাখি ক্লাস নাইনের গ্রিটিংস কার্ডটার পাশে।
তুমি কি সুন্দর করে লিখেছ ! কী অনায়াস স্টাইল কিন্তু কান পাতলে ভিতর থেকে গভীরতার সুলুক মিলে যায়। এইভাবে হারিয়ে যাওয়া সময়কে ধরতে পারিনি কখনো। ভালো লাগলো। -জাহিদ হোসেন
উত্তরমুছুনধন্যবাদ ভাইজান
মুছুন