বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

০৩) উল্কা

সুলভে এক টাকা




এই মুহূর্তে যে মেয়েটা আমার সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আমি ওর মুখের দিকে তাকাইনি। ওর প্লাস্টিকের রংচঙে চুড়ি আর পেতে দেওয়া হাত আমাকে ব্ল্যাকহোলের মতো টানছে। আর আমি তলিয়ে যাচ্ছি ওর হাতের রেখা উপরেখার কচি গভীরতায়। এর ঠিক ঘণ্টা দুয়েক আগে জ্যোতিষকার্যালয়ে মোটের ওপর অর্ধশিক্ষিত লম্ফটির শিখায় আমার হাতের রেখা আর অনেকগুলো রঙিন পাথর ঝলকে উঠছিল। বুঝতে পারছিলাম ভাব বেগতিক। অর্থক্ষরণের ঘোরতর সম্ভাবনা টের পেয়ে শিউরে উঠছিলাম। সেই মুহূর্তে আমার পেতে রাখা হাতের মধ্যে বোঁ বোঁ করে পাক খাচ্ছিল ম্যাগনিফায়েড একজোড়া চোখ। আমার হাতে কোনো ব্ল্যাকহোল নেই। এমনকি মাধ্যাকর্ষণের অবলুপ্তি ঘটেছে। মেয়েটা কাটা রেকর্ডের মতো ঘ্যানঘ্যানে সুরে কিছু একটা বলছে অনেকক্ষণ থেকে। খেয়াল খোলা পড়ে আছে পাশে। তার আস্তিনে একটা আধপোড়া সিগারেট আর কয়েক ডজন মরা ভ্রূণের কনসেপ্ট। এই মুহূর্তে যেগুলো কাজের নয়। দু আঙুলের চাপে ঘুরে ঘুরে গোল আকার নিচ্ছে এগারো নম্বর বাসের টিকিট। ওই ব্ল্যাকহোল থেকে নিজেকে ছিনিয়ে নিতে নিতে তৈরি হচ্ছে একটা সাদাটে পৃথিবী। “এঅ্যাঁঅ্যাঁ... একটাকা দ্যাঁয়য় না... মুই খাবো...” হাতটা মুড়ি খাওয়ার মতো করে মুখের কাছে নিয়ে গেল মেয়েটা। খুচরো মেলা দায় আজকাল। দামীও বটে। কতো যে হাত গলে যায় এপাশ-ওপাশ। আর একটাকায় কী সত্যিই মুড়ি মেলে...



ওর মুখে কালচে ঘাম বসেছে। কুঁতকুঁতে চোখে বিঘে বিঘে প্রত্যাশা। প্রত্যাশা চুরি করতে পারি না, প্রতিবারের ব্যর্থতার সাথে ফুরিয়ে গেছে বছর দুয়েক আগে। মেয়েটা এবার পেটে হাত দিয়ে দেখালো। বুঝলাম খিদের ব্যথা, সকাল থেকে খায়নি। মুখের সেই অস্পষ্ট ভাষা ক্রমাগত অস্বস্তি দিচ্ছে। চামড়া ওঠা পয়সার ব্যাগটা তলানি থেকে টেনে তুললাম। মেয়েটাকে দেখে নিজের তলপেটের ভুলে যাওয়া ব্যথাটা চাগাড় দিয়ে উঠছে। খেয়াল এসে চিমটি দিল হঠাৎ। উঠে দাঁড়ালাম। সামনে পে অ্যান্ড ইউজ সুলভ শৌচালয়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন