রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৩

১০ রুচিস্মিতা ঘোষ

ব্রেকআপ
রুচিস্মিতা ঘোষ



সুজয়ের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। কল সেন্টারের চাকরিটা সে ছেড়ে দিয়েছে। অনেকটা সময় কাটাতে হয় সেখানে। নিজেকে এভাবে বিকিয়ে দেবে – এই প্রশ্নটা তাকে ভাবায় আজকাল। বিপাশার সঙ্গে তার পাঁচ বছরের সম্পর্কটা কাল পাঁচ মিনিটেই শেষ হয়ে গেল। এখন তার মন খারাপের সময় চলছে। মনখারাপ মনখারাপ আর মনখারাপ।

চঞ্চল জনমুখর কলেজ স্ট্রীট ধরে সে হেঁটে চলেছে। নতুন বইয়ের গন্ধও আজ তাকে টানছে না। হাঁটতে হাঁটতে সে একটা সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়ালো। এক প্যাকেট সিগারেট কিনলো। একটা সিগারেট ধরিয়ে কয়েকটা টান দিয়ে সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিল রাস্তায়। সুজয় ঠিক করতে পারছে না, এখন সে কোথায় যাবে। একবার ভাবলো, আউট্রাম ঘাটে ঘুরে আসবে। কতদিন যাওয়া হয়নি! তার চোখের সামনে জোড়ায় জোড়ায় মুখ ভেসে উঠলো। তবে কি শেয়াল’দা স্টেশন? অগণিত মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাবে? না – সে এখন একটু একা হতে চায়। তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। বিপাশার প্রতি একরাশ ঘৃণা উগড়ে দিল সে সিগারেটের ধোঁয়ার মতো।

হতাশা তাকে ঘিরে ধরছে। আবার সেই নেট ঘাঁটাঘাঁটি, বিজ্ঞাপন দেখা। নতুন চাকরির খোঁজ। অস্থির লাগছে। দু’দন্ড স্থির হয়ে কোথাও সে বসতে চাইছে।

সামনেই একটা পার্ক। শেষ অগ্রহায়ণের হেলে পড়া রোদ পার্কের বেঞ্চগুলোয় ছায়া ফেলছে। সুজয় পার্কে ঢুকে একটা বেঞ্চে বসলো। সামনের সবুজ লনে কয়েকটি শালিখ ডানা ঝাপটিয়ে খেলা করছে। মাথার ওপর সেই আবহমান কালের আকাশ। পার্ক পেরিয়ে বড় রাস্তার ওপরে চলমান মানুষ আর যানবাহনের অস্পষ্ট কোলাহল। সুজয় পারে না আত্মহত্যা করতে। সে শুধু অসহায় ক্ষোভে ছটপট করতে থাকে।

নীল জিন্‌স আর কমলা রঙের কুর্তি পরা একটা মেয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে। তার কানে মোবাইল। উত্তেজিত হয়ে সে যেন মোবাইল ফোনটার সঙ্গেই কিছু বোঝাপড়া করছে। তার মুখের রেখায় ভাঙচুর। সুজয় এদিক ওদিক তাকালো। পার্কের সব ক’টা বেঞ্চ এখন ভরে গেছে। সে উঠে পড়তে চাইলো। পারলো না। মেয়েটা একেবারে কাছে চলে এসেছে। মোবাইলটা কান থেকে নামিয়ে সুজয়কে বলছে, “আপনার মোবাইলটা কাইন্ডলি একটু দেবেন? আমার একটা জরুরি ফোন আসছে, আর এদিকে আমার মোবাইলের চার্জ শেষ। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড!” সুজয় কোনো কথা বলার সুযোগই পেল না। সে এতটাই হতবাক হয়ে গেছিল যে, যন্ত্রচালিতের মতো পকেটে হাত ঢুকিয়ে তার মোবাইলটা বের করে দিল। মেয়েটা এখন সুজয়ের পাশে বসে পড়েছে। অভ্যস্ত হাতে মোবাইলের বোতামগুলো টিপে একটা নম্বর কল করলো। সুজয় শুনতে পেল, সে বলছে, “নন্দিনী বলছি, কল সেন্টারের চাকরিটা ছেড়ে দিলাম রে! মোহিতের সঙ্গে এইমাত্র ব্রেকআপ হয়ে গেল। মনটা ভালো নেই। কিছুই ভালো লাগছে না। একবার কি তোর কাছে আসব?”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন