রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

১২ সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ

মা
সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ



সকাল থেকেই ভীষণ ব্যস্ত রাফায়েত। আজ ওকে অনেকগুলো ব্লগ পোস্ট করতে হবে। একটা প্রাইভেট য়্যুনিভার্সিটিতে বিবিএ’র ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে হৈ হুল্লোড়ে মেতে থাকা, ফেসবুকে সময় দেওয়া ওর বেশি পছন্দ। অনেকগুলো ব্লগের নিয়মিত লেখক। ওর ধারণা, ব্লগে লিখলেই বুঝি সমাজ উদ্ধার, দেশোদ্ধার হয়ে যাবে। এ ভাবনা থেকেই ও সংসারের চেয়ে ব্লগকে বেশি সময় দেয়। সংসারকে সময় দেওয়া মানে একটা পরিবারের উপকার, আর ব্লগে লিখলে দেশের উপকার। ওর কাছে সবার আগে দেশ।

শুক্রবার। য়্যুনিভার্সিটি বন্ধ। সকালেই ফেসবুকে বসে গেছে রাফায়েত। আজ ওকে অনেকগুলো ব্লগ লিখতে হবে। সামনের রাস্তাটার কাজ গত তিন বছরেও কেন শেষ হচ্ছে না, এটা নিয়েও লেখা দরকার।

রাফায়েতের মা মোমেনা খাতুন এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ। ব্লগে লেখা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে যে, মাকেও ঠিকমতো সময় দেওয়া হয় না। তবে ফেসবুকে রোজ মায়ের অসুস্থতার স্ট্যাটাস লিখতে কোনো ভুল হয় না। প্রচুর লাইক আসে, গাদাগাদা কমেন্টস আর সুস্থতা কামনায় স্ট্যাটাস’এর নিচের লাইন সমৃদ্ধ হতে থাকে।

রাফায়েত তখন ব্লগ লেখায় ব্যস্ত। পাশের রুমে মোমেনা খাতুন জলতেষ্টায় কাতর। পানি দাও পানি বলে কাৎরাচ্ছেন। রাফায়েত তখন লেখায় এতটাই ব্যস্ত যে, উঠে গিয়ে মা’কে একগ্লাস পানি দেবে, তারও ফুরসৎ নেই। ভাবলো, হাতের লেখাটা শেষ করে মায়ের পাশে গিয়ে বসবে, মাকে নিজের হাতে পানি খাওয়াবে।

লেখাটা শেষ হতে এক ঘন্টারও বেশি লেগে গেল রাফায়েতের। লেখা শেষ করে মা মোমেনা খাতুনের কাছে গেল। কোনো কথা বলছেন না মোমেনা খাতুন। মায়ের শিয়রে বসলো রাফায়েত।

জানো মা, আজও তোমার সুস্থতা কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। তুমি ভাবতেও পারবে না, কত লাইক এসেছে, কত মানুষ তোমার সুস্থতা কামনা করে কমেন্টস করেছে! এত মানুষের দোয়ায় দেখো তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। নাও, এবার পানিটা খেয়ে নাও তো! বলে মায়ের মুখে একটু পানি ঢেলে দিলো রাফায়েত। কিন্তু মোমেনা খাতুনের গলায় পানি ঢুকলো না। ঠোঁটের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো বালিশে ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন