সিঁড়ি ভাঙার খেলা
মেঘ অদিতি
ছুটি মানে দিনভর কবিতায় ডুব। কবিতায় ডুবলেই অগ্রহায়ণের বিকেল আর সোনা রঙা ফসলের মিঠে গন্ধ নাকে লাগে। এ’সময়কার ছেলেরা গোধূলি আর ফসলের মাঠ চেনার আগে বৈদ্যুতিন জানালায় বসে বিশ্বকে চিনতে শিখে গেল। সন্ধে পেরোয়। তখনও এসবই ভাবতে থাকি। ভাবতে গিয়ে কারো লালচে কারো কালচে চুল সজোরে টানি আর সিঁড়ি ভাঙি। সিঁড়িতে পা পড়লে জামার বোতাম থেকে আনন্দ গড়ায়। মুঠোর ভেতর ঝিনুক রেখে ঠোঁটের দিগন্তে চাঁদ চমকায়। আশ্লেষে গরররর থেকে মিঁউ, মিঁউ থেকে ক্রমে পাতালে যাবার পথ খুলে যায়। উইন্ডচাইমের মৃদু টুং-টাং শব্দে আমার তখন রোহিণী রাতের বোলবোলা শুরু।
এক্যুরিয়ামের গোল্ডফিশদের সাথে জলের তলে খাবি খাওয়া শেষে শহরতলির ভোর আসে শুদ্ধ বনজ গন্ধে। সে শুদ্ধতা আমার গায়ে আলোকরশ্মি হয়ে মিশে যেতে চায়। কিন্তু রিনিঝিনিদেরও উঁকি মারার সময় ওটাই। দু’হাত বাড়িয়ে তাদের সাড়া দিই। সময় মতো সার্ভার ডাউন হয়ে যাবে। তারপর একাউন্ট অচল। সুডোকু স্টাইলে শব্দ মেলানো শেষে আমার সে অর্থে করার মতো কিছু আর থাকেও না। যে কোনো খেলাই আমার কাছে খেলা অথচ মণিকা খেলাটা ধরে ফেলে। অসাড় শরীর আর ক্ষুরধার মস্তিষ্কের মণিকা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কী করে যে আমার খেলাগুলো ধরে ফেলে! বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ওর সামনে তাই পড়ি না। চোখ দিয়ে ঘৃণা উগড়ে দেওয়া মণিকার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ওর ক্ষয়াটে শরীর দিনভর আমার সর্বাঙ্গে লেগে থাকে। ওর চোখ দু’টো থেকে সরে আসতে আবারও সেই খেলা, এছাড়া আমার আর কোনো পথ থোলা থাকে না।
খেলার বাইরে নিজেকে মাঝে মাঝে চিনেবাদাম মনে হয়। দু’ আঙুলের চাপে খোসাটা ফাটিয়ে আমার মস্তিষ্কটা বাদামের মতো কেউ কেউ চিবিয়ে খায়। এইসব দিনে কবে, কখন জ্যোৎস্না আমার বারান্দায় এসে বসে, বুঝি না। সর্বক্ষণ একটা হাঁ-মুখের ভেতর সেঁধিঁয়ে থাকা। আর সেই মুখ যখন তখন আমাকে দাঁতে পিষ্ট করে। মাঝে মাঝে নখেও আঁচড় টানে। দাঁতে পেষা আর সেই তীক্ষ্ণ আঁচড় শেষে যখন চিবুকে জমে ম্লান বিকেল আর জিভ তেতো হয়ে ওঠে, তখন খরখরে চোখ মেলে কিছুদিন পাব-এ গিয়ে বসি। সামনে অন্ধকার, পিছনে অন্ধকার, মাঝখানে স্নায়ু বৈকল্য। হৃদয়ে বহুভাষিক উষ্ণতার নিরক্ষরেখা ধরে একদিকে মণিকার অসাড় শরীর অন্যদিকে অন্ধকারে সিঁড়ি ভাঙার খেলা। ফুরিয়ে যাচ্ছি দ্রুত, নিভে যাচ্ছি জানি, তবু জমিনে কোনো ক্ষতচিহ্ন রাখি না। পিছনে মণিকার চোখদুটো তাকিয়ে থাকে। বাতাসে আমিষ গন্ধ ভাসে, মন চাইলে যা খুশি আঙুলে খেলাই। কখনো মুখ ডুবিয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে, সমস্ত বাধা টপকে সুনামির শেষ নুনঘাম ঝরিয়ে শ্রান্তিতে শান্তি খুঁজি। কখনো সার্ভার ডাউন হবার আগে পর্যন্ত একটানা সোনালি-রুপালি তারাগুলোকে মানালির ঝিরিপথ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখাই।
মেঘ অদিতি
ছুটি মানে দিনভর কবিতায় ডুব। কবিতায় ডুবলেই অগ্রহায়ণের বিকেল আর সোনা রঙা ফসলের মিঠে গন্ধ নাকে লাগে। এ’সময়কার ছেলেরা গোধূলি আর ফসলের মাঠ চেনার আগে বৈদ্যুতিন জানালায় বসে বিশ্বকে চিনতে শিখে গেল। সন্ধে পেরোয়। তখনও এসবই ভাবতে থাকি। ভাবতে গিয়ে কারো লালচে কারো কালচে চুল সজোরে টানি আর সিঁড়ি ভাঙি। সিঁড়িতে পা পড়লে জামার বোতাম থেকে আনন্দ গড়ায়। মুঠোর ভেতর ঝিনুক রেখে ঠোঁটের দিগন্তে চাঁদ চমকায়। আশ্লেষে গরররর থেকে মিঁউ, মিঁউ থেকে ক্রমে পাতালে যাবার পথ খুলে যায়। উইন্ডচাইমের মৃদু টুং-টাং শব্দে আমার তখন রোহিণী রাতের বোলবোলা শুরু।
এক্যুরিয়ামের গোল্ডফিশদের সাথে জলের তলে খাবি খাওয়া শেষে শহরতলির ভোর আসে শুদ্ধ বনজ গন্ধে। সে শুদ্ধতা আমার গায়ে আলোকরশ্মি হয়ে মিশে যেতে চায়। কিন্তু রিনিঝিনিদেরও উঁকি মারার সময় ওটাই। দু’হাত বাড়িয়ে তাদের সাড়া দিই। সময় মতো সার্ভার ডাউন হয়ে যাবে। তারপর একাউন্ট অচল। সুডোকু স্টাইলে শব্দ মেলানো শেষে আমার সে অর্থে করার মতো কিছু আর থাকেও না। যে কোনো খেলাই আমার কাছে খেলা অথচ মণিকা খেলাটা ধরে ফেলে। অসাড় শরীর আর ক্ষুরধার মস্তিষ্কের মণিকা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কী করে যে আমার খেলাগুলো ধরে ফেলে! বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ওর সামনে তাই পড়ি না। চোখ দিয়ে ঘৃণা উগড়ে দেওয়া মণিকার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ওর ক্ষয়াটে শরীর দিনভর আমার সর্বাঙ্গে লেগে থাকে। ওর চোখ দু’টো থেকে সরে আসতে আবারও সেই খেলা, এছাড়া আমার আর কোনো পথ থোলা থাকে না।
খেলার বাইরে নিজেকে মাঝে মাঝে চিনেবাদাম মনে হয়। দু’ আঙুলের চাপে খোসাটা ফাটিয়ে আমার মস্তিষ্কটা বাদামের মতো কেউ কেউ চিবিয়ে খায়। এইসব দিনে কবে, কখন জ্যোৎস্না আমার বারান্দায় এসে বসে, বুঝি না। সর্বক্ষণ একটা হাঁ-মুখের ভেতর সেঁধিঁয়ে থাকা। আর সেই মুখ যখন তখন আমাকে দাঁতে পিষ্ট করে। মাঝে মাঝে নখেও আঁচড় টানে। দাঁতে পেষা আর সেই তীক্ষ্ণ আঁচড় শেষে যখন চিবুকে জমে ম্লান বিকেল আর জিভ তেতো হয়ে ওঠে, তখন খরখরে চোখ মেলে কিছুদিন পাব-এ গিয়ে বসি। সামনে অন্ধকার, পিছনে অন্ধকার, মাঝখানে স্নায়ু বৈকল্য। হৃদয়ে বহুভাষিক উষ্ণতার নিরক্ষরেখা ধরে একদিকে মণিকার অসাড় শরীর অন্যদিকে অন্ধকারে সিঁড়ি ভাঙার খেলা। ফুরিয়ে যাচ্ছি দ্রুত, নিভে যাচ্ছি জানি, তবু জমিনে কোনো ক্ষতচিহ্ন রাখি না। পিছনে মণিকার চোখদুটো তাকিয়ে থাকে। বাতাসে আমিষ গন্ধ ভাসে, মন চাইলে যা খুশি আঙুলে খেলাই। কখনো মুখ ডুবিয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে, সমস্ত বাধা টপকে সুনামির শেষ নুনঘাম ঝরিয়ে শ্রান্তিতে শান্তি খুঁজি। কখনো সার্ভার ডাউন হবার আগে পর্যন্ত একটানা সোনালি-রুপালি তারাগুলোকে মানালির ঝিরিপথ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন