চিয়ারলিডার
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়
মেয়েগুলোকে মর্ত্যের কুন্ডীতে নেমে আসা পরীদের মতো মনে হয়। যখন হাঁটে, হেঁটে যায়, মঞ্চে ওঠে, তারপর ফুলেল শরীর মেলে দেয়, ফের নামে, হাঁটে, হেঁটে যায়, বসে, আবার ওই শিরশিরে আওয়াজটা বেজে উঠলে চকিতে ওঠে… সবটুকু…
এত দূরের গ্রামে, কেবল ট্রান্সমিশান ডিজিটালাইসড হয়ে যাওয়ার পরেও ছবি কাঁপে, কেঁপে কেঁপে ওঠে। হতে পারে পুরনো সেট। মান্ধাতার আমলে বললেও কম বলা হয়। জেঠিমণির ওপরের ঘরে কবে ফুল বেলপাতা চড়িয়ে বসে পড়েছিল। নড়াচড়ার নাম নেই। এখনো পর্যন্ত কেউ ঘাঁটেনি, সে-ও কাউকে ঘাঁটায়নি। খালি মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে।
সে তো গেল দৃশ্য, কিন্তু বিচিত্র এই শব্দ প্রক্ষেপের সাথে এই ছোট্ট মেয়েটার কানও সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে। সেও জেনেছে, এটা বাজলে ওটা হয়। ধ্বনি-মাধুর্য নয়, ধ্বনি-চাতুর্য, যা বিচিত্র এই IPL-র আবিষ্কার কৌশল। প্রথমে মুখে মুখে, উত্তেজনায় শ্বাস চেপে, 10-9-8-7-6-5-4… বলতে ছোট্ট বুক দুটো হাঁপর ঠেলত।
প্রথম যেদিন অনেকক্ষণ চেয়ে চেয়ে থেকে সে দেখল, সেইসব ফুলপরীদের, তাদের হাতে রেশম রুমাল বাঁধা, হাত নাড়ে… যেন তাকেই নাড়ে… আর শরীরগুলোকে ছুঁড়ে দেয়, বাজনা দ্রুত বেজে ওঠে, ধোঁয়া ওড়ে। যেন মনে হয় প্রতিমা-প্রতিম। চণ্ডীমণ্ডপে দণ্ডায়মান দেবীর মতো। তবে চোখগুলো তত টানা নয়, আর নাকগুলো যেন একটু বেশি তীক্ষ্ণ মনে হয়। শরীরগুলোও তত সুডৌল, পেলব নয়। তবে ফুলপরীদের মতো।
--খুকি, অত কাছে যেও না, চোখ খারাপ হবে…
--কী নামে ডাকে ওদের?
--চিয়ারলিডার
সব দলের আলাদা আলাদা ওরা, রেশম রঙে চোখ জুড়নো যেন সেইসব উড্ডীন প্রজাপতি, এই সবুজ ঘাসের দেশের কোণে কোণে সংঘবদ্ধ থাকতে শিখেছে।
আর নীল মশারির নিচে তার ছোট্ট নীল শরীরটাকে সে ঠিক সেইরকম মুচড়ে মুচড়ে ওঠায়। এ সময় তার মা বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে শোয়ায়, তারপর নিজে ওঠে, নীল আলোয় দেখে, শাদা দাগটা আস্তে আস্তে ছড়াচ্ছে।
--ডাক্তারবাবু, এটা কী, শ্বেতীর দাগ, মেয়ে বলে কথা...
--হুম, অ্যালবিনো, কিছু করার নেই, তবে দেখতে হবে আর যেন ছড়িয়ে না পড়ে…
আরো একটা IPL যেতে না যেতেই ঠোঁট থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল, আর মেয়ে কিনা অনুচ্ছেদ রচনা লিখে এল, তার জীবনের লক্ষ্য চিয়ারলিডার হওয়া!
পুনশ্চঃ স্পট ফিক্সিং-র পর, অন্তর্বর্তীকালীন হাল আমলে অন্যতম নীতি নির্ধারিত হয়েছে যে, আগামী IPLগুলোতে চিয়ারলিডার বলে কিছু থাকবে না।
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়
মেয়েগুলোকে মর্ত্যের কুন্ডীতে নেমে আসা পরীদের মতো মনে হয়। যখন হাঁটে, হেঁটে যায়, মঞ্চে ওঠে, তারপর ফুলেল শরীর মেলে দেয়, ফের নামে, হাঁটে, হেঁটে যায়, বসে, আবার ওই শিরশিরে আওয়াজটা বেজে উঠলে চকিতে ওঠে… সবটুকু…
এত দূরের গ্রামে, কেবল ট্রান্সমিশান ডিজিটালাইসড হয়ে যাওয়ার পরেও ছবি কাঁপে, কেঁপে কেঁপে ওঠে। হতে পারে পুরনো সেট। মান্ধাতার আমলে বললেও কম বলা হয়। জেঠিমণির ওপরের ঘরে কবে ফুল বেলপাতা চড়িয়ে বসে পড়েছিল। নড়াচড়ার নাম নেই। এখনো পর্যন্ত কেউ ঘাঁটেনি, সে-ও কাউকে ঘাঁটায়নি। খালি মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে।
সে তো গেল দৃশ্য, কিন্তু বিচিত্র এই শব্দ প্রক্ষেপের সাথে এই ছোট্ট মেয়েটার কানও সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে। সেও জেনেছে, এটা বাজলে ওটা হয়। ধ্বনি-মাধুর্য নয়, ধ্বনি-চাতুর্য, যা বিচিত্র এই IPL-র আবিষ্কার কৌশল। প্রথমে মুখে মুখে, উত্তেজনায় শ্বাস চেপে, 10-9-8-7-6-5-4… বলতে ছোট্ট বুক দুটো হাঁপর ঠেলত।
প্রথম যেদিন অনেকক্ষণ চেয়ে চেয়ে থেকে সে দেখল, সেইসব ফুলপরীদের, তাদের হাতে রেশম রুমাল বাঁধা, হাত নাড়ে… যেন তাকেই নাড়ে… আর শরীরগুলোকে ছুঁড়ে দেয়, বাজনা দ্রুত বেজে ওঠে, ধোঁয়া ওড়ে। যেন মনে হয় প্রতিমা-প্রতিম। চণ্ডীমণ্ডপে দণ্ডায়মান দেবীর মতো। তবে চোখগুলো তত টানা নয়, আর নাকগুলো যেন একটু বেশি তীক্ষ্ণ মনে হয়। শরীরগুলোও তত সুডৌল, পেলব নয়। তবে ফুলপরীদের মতো।
--খুকি, অত কাছে যেও না, চোখ খারাপ হবে…
--কী নামে ডাকে ওদের?
--চিয়ারলিডার
সব দলের আলাদা আলাদা ওরা, রেশম রঙে চোখ জুড়নো যেন সেইসব উড্ডীন প্রজাপতি, এই সবুজ ঘাসের দেশের কোণে কোণে সংঘবদ্ধ থাকতে শিখেছে।
আর নীল মশারির নিচে তার ছোট্ট নীল শরীরটাকে সে ঠিক সেইরকম মুচড়ে মুচড়ে ওঠায়। এ সময় তার মা বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে শোয়ায়, তারপর নিজে ওঠে, নীল আলোয় দেখে, শাদা দাগটা আস্তে আস্তে ছড়াচ্ছে।
--ডাক্তারবাবু, এটা কী, শ্বেতীর দাগ, মেয়ে বলে কথা...
--হুম, অ্যালবিনো, কিছু করার নেই, তবে দেখতে হবে আর যেন ছড়িয়ে না পড়ে…
আরো একটা IPL যেতে না যেতেই ঠোঁট থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল, আর মেয়ে কিনা অনুচ্ছেদ রচনা লিখে এল, তার জীবনের লক্ষ্য চিয়ারলিডার হওয়া!
পুনশ্চঃ স্পট ফিক্সিং-র পর, অন্তর্বর্তীকালীন হাল আমলে অন্যতম নীতি নির্ধারিত হয়েছে যে, আগামী IPLগুলোতে চিয়ারলিডার বলে কিছু থাকবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন