ফোন
সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ
লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। নানাবিধ কারণে অনেকদিন লেখা হয়নি। অনেকগুলো লেখার চাপ ছিল। লেখা পাঠানোর জন্যে বারবার ফোন আসছে।
আমি যখন লিখি তখন অন্যদিকে মন থাকে না। লেখার মধ্যে ডুবে যাই। অনেক সময় সেলফোনের কথাও মনে থাকে না। চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ থাকে সময় সময়।
আমার লেখার চাপ, স্ত্রী শাহানা পারভীন বোর্ডের খাতা দেখায় ব্যস্ত; সেলফোনটা পাশের রুমে। রাত তখন সাড়ে বারোটা কী পৌনে একটা হবে। পাশের রুমে সেলফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বাজছে। অবাক হলাম না। এ সময়ে আমার প্রচুর কল আসে। শাহানা গিয়ে ফোনটা ধরলো। আমার আগেই বলা ছিল, খুব জরুরি ফোন না হলে আমাকে না দিতে। ফোনে কথা বলে শাহানা আমার কাছে এলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম : কার ফোন?
শাহানা উত্তর দিল : তোমার এক বন্ধু ফোন করেছিল।
কী নাম?
কী যেন নাম বলল, কায়সার হামিদ না হামিদ কায়সার।
কেন ফোন করেছিল?
বলল এই মাঝরাতে তোমার সাথে গল্প করতে নাকি ওনার খুব ইচ্ছে করছে।
তুমি কী বললে?
আমি বললাম, উনি এখন লেখায় ব্যস্ত আছেন, কাল সকালে ফোন করতে।
কী করেছো তুমি?
কেন? তুমিই তো বলেছিলে, জরুরি ফোন না হলে তোমাকে না দিতে।
হায় আল্লাহ! এর চেয়ে জরুরি ফোন যে আমার জীবনে আর নেই, সে কথাটা আমি তোমাকে কী করে বোঝাবো! ও আমার জীবনের সেরা বন্ধু। কতদিন ধরে ওর ফোন নাম্বার খুঁজছি। ওর সাথে কথা বলার জন্যে মুখিয়ে আছি।
ভালো কথা, এখন তো উনি জেগেই আছেন, তুমি ফোন করে কথা বলো!
শাহানার কথাটা পছন্দ হলো । হাতের লেখাটা শেষ করে ওই নাম্বারে ফোন করলাম। ফোন সুইসড অফ। বারবার ফোন করলাম। একই উত্তর,`দিস নাম্বার ইজ নট এ্যাবেলএ্যাবল নাও, প্লিজ ট্রাই লেটার’।
রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারলাম না। কেন ফোন করেছিল, সুপ্ত? কী কথা বলতে চেয়েছিল? ওকে বলার জন্যে কত কথা জমে আছে বুকের ভেতর। নাম্বার যখন পাওয়া গেছে, আর অসুবিধে নেই। সকালেই কথা বলা যাবে।
অনেক রাতে ঘুমাতে যাবার কারণে সকালে একটু দেরিতে আমার ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস। সাড়ে ছ’টার দিকে সেলফোনটা বাজতে থাকলো। এত সকালে কেউ ফোন করলে আমি খুব বিরক্ত হই। ঘুমের মধ্যেই ফোন ধরলাম।
হ্যালো, আমি পাভেল বলছি। খবর শুনেছিস?
কী খবর?
কাল রাত তিনটের দিকে সুপ্ত মারা গেছে।
এক ঝটকায় উঠে বসলাম। সারা শরীর কাঁপতে থাকলো। কে যেন বুকের ওপর একখানা দশ টনের ভারি পাথর চাপিয়ে দিল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। সুপ্ত মানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হামিদ কায়সার। যে কাল রাতেও আমাকে ফোন করেছিল। আমার কথা বলতে খুব কষ্ট হলো। তবু মিইয়ে স্বরে জিজ্ঞেস করলাম : কীভাবে?
হার্ট এ্যাটাক।
আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। আমার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গালে। গাল বেয়ে কপোলে। ভাসিয়ে দিল বুকের উষ্ণ চরাচর। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকলো। তীব্র থেকে তীব্রতর।
সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ
লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। নানাবিধ কারণে অনেকদিন লেখা হয়নি। অনেকগুলো লেখার চাপ ছিল। লেখা পাঠানোর জন্যে বারবার ফোন আসছে।
আমি যখন লিখি তখন অন্যদিকে মন থাকে না। লেখার মধ্যে ডুবে যাই। অনেক সময় সেলফোনের কথাও মনে থাকে না। চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ থাকে সময় সময়।
আমার লেখার চাপ, স্ত্রী শাহানা পারভীন বোর্ডের খাতা দেখায় ব্যস্ত; সেলফোনটা পাশের রুমে। রাত তখন সাড়ে বারোটা কী পৌনে একটা হবে। পাশের রুমে সেলফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বাজছে। অবাক হলাম না। এ সময়ে আমার প্রচুর কল আসে। শাহানা গিয়ে ফোনটা ধরলো। আমার আগেই বলা ছিল, খুব জরুরি ফোন না হলে আমাকে না দিতে। ফোনে কথা বলে শাহানা আমার কাছে এলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম : কার ফোন?
শাহানা উত্তর দিল : তোমার এক বন্ধু ফোন করেছিল।
কী নাম?
কী যেন নাম বলল, কায়সার হামিদ না হামিদ কায়সার।
কেন ফোন করেছিল?
বলল এই মাঝরাতে তোমার সাথে গল্প করতে নাকি ওনার খুব ইচ্ছে করছে।
তুমি কী বললে?
আমি বললাম, উনি এখন লেখায় ব্যস্ত আছেন, কাল সকালে ফোন করতে।
কী করেছো তুমি?
কেন? তুমিই তো বলেছিলে, জরুরি ফোন না হলে তোমাকে না দিতে।
হায় আল্লাহ! এর চেয়ে জরুরি ফোন যে আমার জীবনে আর নেই, সে কথাটা আমি তোমাকে কী করে বোঝাবো! ও আমার জীবনের সেরা বন্ধু। কতদিন ধরে ওর ফোন নাম্বার খুঁজছি। ওর সাথে কথা বলার জন্যে মুখিয়ে আছি।
ভালো কথা, এখন তো উনি জেগেই আছেন, তুমি ফোন করে কথা বলো!
শাহানার কথাটা পছন্দ হলো । হাতের লেখাটা শেষ করে ওই নাম্বারে ফোন করলাম। ফোন সুইসড অফ। বারবার ফোন করলাম। একই উত্তর,`দিস নাম্বার ইজ নট এ্যাবেলএ্যাবল নাও, প্লিজ ট্রাই লেটার’।
রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারলাম না। কেন ফোন করেছিল, সুপ্ত? কী কথা বলতে চেয়েছিল? ওকে বলার জন্যে কত কথা জমে আছে বুকের ভেতর। নাম্বার যখন পাওয়া গেছে, আর অসুবিধে নেই। সকালেই কথা বলা যাবে।
অনেক রাতে ঘুমাতে যাবার কারণে সকালে একটু দেরিতে আমার ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস। সাড়ে ছ’টার দিকে সেলফোনটা বাজতে থাকলো। এত সকালে কেউ ফোন করলে আমি খুব বিরক্ত হই। ঘুমের মধ্যেই ফোন ধরলাম।
হ্যালো, আমি পাভেল বলছি। খবর শুনেছিস?
কী খবর?
কাল রাত তিনটের দিকে সুপ্ত মারা গেছে।
এক ঝটকায় উঠে বসলাম। সারা শরীর কাঁপতে থাকলো। কে যেন বুকের ওপর একখানা দশ টনের ভারি পাথর চাপিয়ে দিল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। সুপ্ত মানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হামিদ কায়সার। যে কাল রাতেও আমাকে ফোন করেছিল। আমার কথা বলতে খুব কষ্ট হলো। তবু মিইয়ে স্বরে জিজ্ঞেস করলাম : কীভাবে?
হার্ট এ্যাটাক।
আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। আমার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গালে। গাল বেয়ে কপোলে। ভাসিয়ে দিল বুকের উষ্ণ চরাচর। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকলো। তীব্র থেকে তীব্রতর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন