শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

০১ সমীর রায়চৌধুরী

ভিন্ন কথনকেতার খেলা
সমীর রায়চৌধুরী


চারিদিকে অসত্য কথন, মিথ্যাচার, ক্ষমতার রহস্যাবৃত কথাস্রোত সচেতন মানুষকে দগ্ধ করে। এক আস্তিক বিপন্নতা দেখা দেয়। লেখার মাধ্যমে সে তার কথন বিশ্বকে ব্যাপ্তি দেয়। পুনর্নির্মাণ করে তার সত্যদ্রষ্টা সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ।

ধারণাময় এই ধরিত্রীর মাইক্রোস্তরে যতই প্রবেশ করা যায়, দেখা যায়, বহু সংকেত এমনই যে, বাস্তব জগতে বা প্রাত্যহিক কাজেকর্মে তা তেমন কাজে লাগে না। তবু তা প্রয়োজনীয় নয়, একথাও বলা যাবে না। অস্বীকার করা যাবে না, ব্যক্তি মনের সৃজন জগতের মুক্তির একটি পরিসর নির্মাণে তার ভূমিকার কথা।

এমনই অনেক টুকরো-টাকরা নিয়ে আমি ‘মেথিশাকের গন্ধ’ গল্পটি লিখতে গিয়ে দেখেছি, পাঠকদের মনকে তা আনন্দ দিয়েছে অনায়াসে এবং পাঠকেরা তা সহজ ভাবে গ্রহণ করেছেন। এই ধরনের অমীমাংসেয়তাকে গ্রহণ করবার জন্য পাঠকদের সৃজনশীল মন অপেক্ষায় থাকে। এখানে তাঁদের সৃজনশীল মন অনায়াসে খেলতে পারে। অর্থাৎ একটা খেলাধুলার পরিসর তাঁদের চাই। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, জহর সেন মজুমদারের ‘হৃল্লেখ বীজ’, মিহির চক্রবর্তীর ‘গ্যেডেলের অসম্পূর্ণতা তত্ত্ব’, রবীন্দ্র গুহর ‘কি লিখি কীভাবে লিখি’, আমাদের ভাষায় এই একই কারণে। এঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের নিজস্ব কথনবিশ্ব নির্মাণ করেছেন। আর একজন সাংবাদিকের প্রতিবেদন থেকে এখানেই এই টেক্সটগুলির পার্থক্য।

মুখোশ পরা কথাবার্তার অন্তরালে ক্ষমতার উঁকিঝুঁকি গ্রাহ্যতার এলাকায় বাধার সৃষ্টি করে। প্রসঙ্গত, গতকালই আমার পাশের বাড়ির প্রতিবেশী পুরী বেড়াতে গেলেন। অথচ এই বর্ষার সময় সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। এমন কি তাঁরা ফেরার পথে অনেক সংকটেও পড়তে পারেন। বালেশ্বরের কাছে রেললাইন বর্ষার জলে প্রায়ই ডুবে থাকে। আমি এই সময় একবার পুরী বেড়াতে গিয়ে বুঝেছি, প্রকৃত সংকট কাকে বলে। এই সংকট কিন্তু, যেমন সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে, ‘সিগারেট খেলে ক্যানসার হয়’, সেই অপেক্ষাটুকুরও সুযোগ দেয় না। তবু কিছু মানুষ জেনেশুনে এই সময়ই সমুদ্রের মুখোমুখি হয়, তার ভয়ংকর রূপের সঙ্গে পরিচিত হবে বলে। আসলে আমাদের ব্যক্তিমন প্রতি মুহূর্তে একটি ভিন্ন কথনকেতার অপেক্ষায় থাকে।

আমার নিজের এই বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই বলেন যে, অনেক তো হলো, এখন কিছুটা ঢিমেতালে লেখালেখি করা দরকার এবং বিশ্রামের প্রয়োজন অনেক বেশি। অথচ আমার সৃজনশীল মন জানে, লেখালেখিতেই আমি আমার যৌবন ফিরে পাই। কেননা, আমি আজও নীরবতার রহস্যসন্ধানী।

২টি মন্তব্য:

  1. 'তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি'
    আপনার প্রবন্ধটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সুলিখিত।

    আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

    উত্তরমুছুন
  2. নীরবতা সত্যিই রহস্যময়ী। সন্ধানী মন তার মধ্যে ডুব দিয়ে কত যে অজানিত,অকথিত, না বলা বাণীর মুক্তো তুলে আনতে পারে ! সমীরদা মেথিশাকের গন্ধ এখনো ছড়িয়ে আছে। আপনার সৃজনশীল নিত্য নতুন চলতি হাওয়ার যুবক-লেখা আপনাকে আমাদের কাছে চিরযুবক রাখুক। নীতা বিশ্বাস।

    উত্তরমুছুন