আলোয় আলোয়
অলোকপর্ণা
মুক্তি, মু-ক-তি, মুক্তি’ই...
জানালার ওপারে তোমার ছায়াটাকে আমি এভাবেই ডাকি, -- মনে মনে। এমন নয় যে, চিৎকার করার ক্ষমতা আমার নেই; এমন নয় যে, আমিও বুক বাজিয়ে বলতে পারি না, “আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, এই আকাশে”। ...তোমাকেও আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে দেখি, জানো? সমান্তরাল ছবির আটপৌরে অভিনেত্রীর মতো, যাদের আমরা নায়িকা বলতে স্বচ্ছন্দ নই।
তোমার ‘পরিবার’ সুমনকে আমি ছোট থেকে চিনি। ফুটবল মাঠে চোরাগোপ্তা ঢুসো মারতে যার জুড়ি ছিল না, সে তোমার আনাচ কানাচ চিনলেও যে তোমার আনাচ কানাচ -- চিনবে, সে আশা তোমারই মতো আমিও পোষণ করি না। তাই বিয়েবাড়ি, পুষ্পমেলা বা পয়লা বৈশাখের সমারোহে ডুবে আমি তোমাদের পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার চেয়ে বেশি মেলাঙ্কলি আর কিছুই খুঁজে পাই না। আমার উৎসবগুলো মুখর থেকে মৌন হয়ে যায়, তোমার দুঃখে আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলি। এ প্রসঙ্গে বলতে দ্বিধা নেই যে, তোমার আনন্দে তোমার প্রতি আমার কোনো মোহ জন্মায় না, একে কি করুণা বলবে? স্নেহ? আমি সন্তানের মতো চাই তোমায় মুক্তি, নিঃসন্তান স্বামী যেমন শীতের রাতে ব্যর্থ সঙ্গম শেষে স্ত্রীয়ের গায়ে চাদর টেনে ইতি আঁকে... আবার এই আমিই তোমাকে কামুক বজ্জাত দেহাতি মরদের মতো চাই, যার কাছে তুমি পাশ-বালিশের থেকে বেশি কিচ্ছু নও। তুমি খালি আমায় পরতে পরতে খুলে মুক্ত করবে, -- এই নির্বাণ লাভের আশায় আমি আমার জানালায় আসি।
এখান থেকে তেরছা ভাবে তোমার নাক, চুল, ইনশাল্লাহ -- আঙুল এসে পড়ে আমার চোখে। চোখ বোজাটা যেন এক শিল্প, আমার ভারী হয়ে নেমে আসা চোখের পাতারা একসাথে ‘ওম্’ বলে নিভে যায়।
রান্নাঘরের সবুজ জানালায় সিদ্ধ আনাজের ধোঁয়ায় ঢাকা হয়ে মুক্তি, তুমি আমার গায়ে এসে পড়ো, আমার ভিতরে চুঁইয়ে যাও। আমি হয়ে যাও। সুমন জানবে না এইসব আলোর যাতায়াত, চাহনির চলাচল। কিন্তু এই চিঠি? তা কি কখনও তোমার হাতে স্কুল ফেরত বালকের মতো আছড়ে পড়বে না? আর তুমিও তাকে আঁজলা ভরে নেবে না কি? বলো?
--তোমার... তুমিই জানো।
শক্ত হাতে চিঠিটা আঁকড়ে পাঁচিল থেকে দূরেই দাঁড়ালাম। ধনেগুঁড়োর গন্ধ মেখে তুমি আলগোছে ঘাম মুছে নিলে নাক থেকে। তোমার আঙুল ঝলসে উঠল। রৌদ্রে নয়, স্বমহিমায় জ্বলে উঠল অনামিকা, -- তোমার মধ্যে মুক্তি নয়, সমর্পণ দেখলাম; সুমনের মতো বেয়াদপের প্রতি সমর্পণ। ঝাঁঝে আমার চোখ বুজে গেল। উনুনের পবিত্র আগুন আর পার করা হলো না।
তখনই ডালনায় কী যে মিশিয়ে দিলে মুক্তি, আন্দাজ মতো কাশ্মীরি মির্চ, না এক পশলা নির্মম ভালোবাসা... কেউ জানল না।
অলোকপর্ণা
মুক্তি, মু-ক-তি, মুক্তি’ই...
জানালার ওপারে তোমার ছায়াটাকে আমি এভাবেই ডাকি, -- মনে মনে। এমন নয় যে, চিৎকার করার ক্ষমতা আমার নেই; এমন নয় যে, আমিও বুক বাজিয়ে বলতে পারি না, “আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, এই আকাশে”। ...তোমাকেও আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে দেখি, জানো? সমান্তরাল ছবির আটপৌরে অভিনেত্রীর মতো, যাদের আমরা নায়িকা বলতে স্বচ্ছন্দ নই।
তোমার ‘পরিবার’ সুমনকে আমি ছোট থেকে চিনি। ফুটবল মাঠে চোরাগোপ্তা ঢুসো মারতে যার জুড়ি ছিল না, সে তোমার আনাচ কানাচ চিনলেও যে তোমার আনাচ কানাচ -- চিনবে, সে আশা তোমারই মতো আমিও পোষণ করি না। তাই বিয়েবাড়ি, পুষ্পমেলা বা পয়লা বৈশাখের সমারোহে ডুবে আমি তোমাদের পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার চেয়ে বেশি মেলাঙ্কলি আর কিছুই খুঁজে পাই না। আমার উৎসবগুলো মুখর থেকে মৌন হয়ে যায়, তোমার দুঃখে আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলি। এ প্রসঙ্গে বলতে দ্বিধা নেই যে, তোমার আনন্দে তোমার প্রতি আমার কোনো মোহ জন্মায় না, একে কি করুণা বলবে? স্নেহ? আমি সন্তানের মতো চাই তোমায় মুক্তি, নিঃসন্তান স্বামী যেমন শীতের রাতে ব্যর্থ সঙ্গম শেষে স্ত্রীয়ের গায়ে চাদর টেনে ইতি আঁকে... আবার এই আমিই তোমাকে কামুক বজ্জাত দেহাতি মরদের মতো চাই, যার কাছে তুমি পাশ-বালিশের থেকে বেশি কিচ্ছু নও। তুমি খালি আমায় পরতে পরতে খুলে মুক্ত করবে, -- এই নির্বাণ লাভের আশায় আমি আমার জানালায় আসি।
এখান থেকে তেরছা ভাবে তোমার নাক, চুল, ইনশাল্লাহ -- আঙুল এসে পড়ে আমার চোখে। চোখ বোজাটা যেন এক শিল্প, আমার ভারী হয়ে নেমে আসা চোখের পাতারা একসাথে ‘ওম্’ বলে নিভে যায়।
রান্নাঘরের সবুজ জানালায় সিদ্ধ আনাজের ধোঁয়ায় ঢাকা হয়ে মুক্তি, তুমি আমার গায়ে এসে পড়ো, আমার ভিতরে চুঁইয়ে যাও। আমি হয়ে যাও। সুমন জানবে না এইসব আলোর যাতায়াত, চাহনির চলাচল। কিন্তু এই চিঠি? তা কি কখনও তোমার হাতে স্কুল ফেরত বালকের মতো আছড়ে পড়বে না? আর তুমিও তাকে আঁজলা ভরে নেবে না কি? বলো?
--তোমার... তুমিই জানো।
শক্ত হাতে চিঠিটা আঁকড়ে পাঁচিল থেকে দূরেই দাঁড়ালাম। ধনেগুঁড়োর গন্ধ মেখে তুমি আলগোছে ঘাম মুছে নিলে নাক থেকে। তোমার আঙুল ঝলসে উঠল। রৌদ্রে নয়, স্বমহিমায় জ্বলে উঠল অনামিকা, -- তোমার মধ্যে মুক্তি নয়, সমর্পণ দেখলাম; সুমনের মতো বেয়াদপের প্রতি সমর্পণ। ঝাঁঝে আমার চোখ বুজে গেল। উনুনের পবিত্র আগুন আর পার করা হলো না।
তখনই ডালনায় কী যে মিশিয়ে দিলে মুক্তি, আন্দাজ মতো কাশ্মীরি মির্চ, না এক পশলা নির্মম ভালোবাসা... কেউ জানল না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন