সংঘের রবীন্দ্রনাথকে ত্যাগ করে কবি রবীন্দ্রনাথকে পাওয়া যায়
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
সংঘের রবীন্দ্রনাথ আর কবি রবীন্দ্রনাথ এক জিনিস নয়। যেমন এক নয়, রাষ্ট্রের প্রজানায়ক রবীন্দ্রনাথ আর কবিতার কবিনায়ক রবীন্দ্রনাথ। মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র কাউকে এত তেল মারে না, যদি না রাষ্ট্র কিছু কামাতে পারে তার কাছ থেকে। তাহলে প্রশ্ন -- রাষ্ট্র এই কবির কাছে কী পায় যে, তাকে মানে এক কবিকে হঠাৎ একটা মহা উৎসব-আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু করে তোলে! বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রবীন্দ্রনাথের ভাবগত বা চিন্তাগত মূল্যের চেয়ে তার বানানো-মূর্তিজাত উপস্থিতির বস্তুগত মূল্য তখন বড় বেশি দরকারি হয়ে পড়ে। কারণ সেটা সামনে রেখে রাষ্ট্র তার একটা কৃত্রিম মহৎ ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারে। সেটি করে রাষ্ট্র বোঝায় (ক) রাষ্ট্র কোনো নন্দনচর্চাজ্ঞানশূন্য, অনুভবহীন ভোঁতা প্রতিষ্ঠান নয়। (খ)তার বদৌলতে রাষ্ট্রের কবি-সাহিত্যকদের প্রতি একটা সামারাটিয়ান চরিত্র দাঁড় করায়। সাথে সাথে এটির বিপুল উদযাপনের ব্যয়ভারের অংশীদার হন ঠিকাদার থেকে শুরু করে(কোনোদিন একটি মাত্র রবীন্দ্রকবিতা না-পড়া বা গান না-শোনা) বিপুল কর্মীবাহিনী। এর বাইরে যারা আছেন, তারা কবির অতলান্তিক সৃষ্টিকাজের প্রাচুর্য বিষয়ে আধ-বোঝা বা পুরাতন ছোঁয়াচে আবেগের আগুনে পুড়ে সাময়িকভাবে বাঙালি সংস্কৃতির ভাগীদার হতে চান। অন্যদিকে যারা কবিতা-শিল্পের প্রকৃত সমজদার পাঠক -- তারা কবির কাছে কোনো দেনা পাওনার হিসাব নেয় না। আবার তার মর্যাদার হেরফের পাঠকভেদেও এদিক সেদিক হয় না। সে ততটুকুও নেয় যতটুকু কবি দিতে পারে বা যতটুকু মূল্য একজন কবি বা সাহিত্যক তৈরি করতে পারে পাঠকদের কাছে। এর মধ্যে কোনো বস্তুগত লাভের হিসাব নিকাশ নেই। প্রকৃতপক্ষে সংঘের রবীন্দ্রনাথ একজন নেতা রবীন্দ্রনাথ হিসাবেই আবির্ভূত হন -- যার ভেতরে সংঘকর্মীরা আবিষ্কার করেন এক অভূতপূর্ব কবি আর সংগীতের মর্মবাণী, যা দিয়ে একটা রাজনৈতিক শিক্ষার কর্মসূচি হাতে নেওয়া যায়। এর ফলে রবীন্দ্রনাথ যে একটি প্লুরাল সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব, সেটির কোনো অস্তিত্ব থাকে না, থাকে শুধু বাহুবলীয় সিংগুলারিটি -- যার মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীন স্রোতটাকে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব।
সংঘের রবীন্দ্রনাথকে যারা সঙ্গী করে, তাদের মানসিক জগৎ থেকে কবি সাহিত্যিক রবীন্দ্রসঙ্গ অনেক আগেই লুপ্ত। যা থাকে সে তো এক নাম না জানা বিস্ময়! যার আর এক নাম হতে পারে অজ্ঞ বা অন্ধ বিস্ময়। তারা তখন হাজার নেতার পাশাপাশি বা কখনো ছায়াতলে নতুন নেতা রবীন্দ্রনাথকে পায়। এখানে তাই প্রশ্ন আসে, রবীন্দ্রনাথ কিসের নেতা? রবীন্দ্রনাথের আইডোলজি কী? রবীন্দ্রনাথ কী করে তাদের সাথে? রবীন্দ্রনাথের মেসেজ কী? তার যে অন্যায় হিংসা বিদ্বেষহীন সমাজের ধারণা, সর্ব কল্যাণের চিন্তা, সর্বজনীন শিক্ষার চিন্তা, সেগুলি কোনো একটি দলের বা দলীয় নেতা কর্মীদের আইডোলজি নয়, এইগুলি ইউনিভার্সেল বিষয়। এইগুলি সংঘের লোকেরা নেয় না বা তারা এভাবে চিন্তাও করে না। কারণ সেগুলিতে তাদের কোনো ফায়দা নেই বরং তাতে কবি রবীন্দ্রনাথের বাণিজ্যবিহীন, নিরীহ কবিমুখটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিষয়টা ভেবে দেখা দরকার। রবীন্দ্রনাথ তো কারো নেতা নয়। কারণ কবির কাজ কোনো নেতৃত্ব বিধান বা কোনো নিদের্শ দান নয়। কবির কাজ মানুষের ভেতর মরে থাকা সৌন্দর্যবোধ জাগানোর মাধ্যমে জীবনকে একটা মিনিং দেওয়া, মানুষের ভেতর চিন্তাহীন, শুধু ভোগবাদী পশু সত্ত্বাটাকে বাদ দিয়ে তাকে মানুষের কাতারে আনার জন্য তৈরি করা।
সংঘের কোনো ফিক্সড চরিত্র নেই। নানান রকম মানুষ নিয়ে সে যে একটা কিছু হয়, সেটি আসলে একটা বহুরূপী বহুগামী স্থির আকারহীন চরিত্র। তার অবলম্বন বহিরাঙ্গনের নীচ রাজনীতি ও তৈলমর্দন। কিন্তু কবি রবীন্দ্রনাথ আসলে কোনো বহিরাঙ্গনের লোক নয়। তাই ঘটা করে মজলিসি কায়দায় রবীন্দ্রনাথকে -- রবীন্দ্রনাথের মুর্শিদ আর মুরিদ ধরে তার সংগীতের মজা পাওয়া যায় না। কারণ নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথই আসল রবীন্দ্রনাথ। কবিতাশিল্প বা নন্দনচর্চা ঠিক কোলাহল, প্রভাতফেরি, নেতা নেত্রী পাজামা পাঞ্জাবির বিষয়বস্তু নয়। এইগুলি লোকবল রাষ্ট্রবল সংঘছাড়া নিঃসঙ্গতাকে দাবী করে। সংঘবল আদতে একটি বাহুবলের চাতুর্যমাত্র। এর কারুকার্যময় পৃথিবীর ভেতরে বেচারা কবি রবীন্ত্রনাথ পালিয়ে বাঁচে যেন! সেইসূত্রে বলতে পারি, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে পূজা করা আর তার সাহিত্যসৃষ্টিকে সমাদর করা এক জিনিস নয়। যারা ব্যবসায়িক, বা রাজনৈতিক কারণে তাকে পালন করে, তারা তার স্রষ্টা-সত্ত্বাকে হত্যা করে একজন বাজারি রবীন্দ্রনাথকে জন্ম দেয়। বাঙালির হাজার বছরের মনোভঙ্গি হিরো-ওয়ারশিপিং হওয়ার কারণে সমাজ চিন্তক, রিফর্মিস্ট মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথের দর্শনেরও কোনো চর্চা হয় না। সাদা কাপড় আর সাদা গোঁফদাড়িওয়ালা কবিকে বৈশাখ আর শ্রাবণের রোমান্টিক দেবতা করে দাসেরা ফুলের মালা আর কথার ফুলঝুরিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে হয় না কোনো বিচার বিশ্লেষেণ, হয় না কোনো জীবনকে বোঝার বা জানার অন্বেষণ। তাহলে ক্ষতি কার, প্রজানায়ক রবীন্দ্রনাথের না কবিরাজ রবীন্দ্রনাথের? না সংঘবাদী এইসব ক্ষুদে নায়কদের?
আমার মতে ক্ষতি তিন দলেরই। কারণ এতে তারা কোনো কিছু বুঝতে পারে না। আর বুঝতে পারে না বলেই কোনো কিছু গড়তেও পারে না। এই একই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে স্টেজে, হলরুমে বা লম্বা করিডোরে কিংবা কোনো বাগান বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ছবি টাঙ্গিয়ে রবীন্দ্রচর্চার নামে তার নাম জপ করা ধর্মবাদীতার সমতুল্য। তখন এই ধর্মগুরুকে পাবলিক যীশুর মতো শৃঙ্খলিত করে লোকজনের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায়। আটকে রাখে বড় বড় দালান কোঠায়। রবীন্দ্রনাথ ধর্মেও নেই অধর্মেও নেই। রবীন্দ্রনাথ আছে নিঃসঙ্গ ধ্যানে, মানুষের সমাধিভঙ্গিমায়। হিরো-ওয়ারশিপিং মানসিক পঙ্গুতার কারণে হিরোকে নানান ভাগে বিভক্ত করার প্রচলন বাংলাদেশে আছে। রবীন্দ্রনাথকে ভেঙে বিশ্বকবি, হিন্দু, বাঙালি, ভারতীয়, এপার- ওপার বাংলার নেতা বানানোর মাধ্যমে সৃষ্টিহীন লোকদের একটা হীন উদ্দেশ্য সফল হয় হয়তো। তাতে কবি সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের কিছুই হয় না। কবি রবীন্দ্রনাথ সব সময় এক এবং নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথই থাকে। তাকে পেতে হলে তাকে ঘরে বসেই তার সৃষ্টিশীলতাকে তথা তার টেক্সটকে পঠন, বিশ্লেষণ আর পূর্ণগঠনের মাধ্যমে পেতে হবে।
সংঘের রবীন্দ্রনাথ আর কবি রবীন্দ্রনাথ এক জিনিস নয়। যেমন এক নয়, রাষ্ট্রের প্রজানায়ক রবীন্দ্রনাথ আর কবিতার কবিনায়ক রবীন্দ্রনাথ। মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র কাউকে এত তেল মারে না, যদি না রাষ্ট্র কিছু কামাতে পারে তার কাছ থেকে। তাহলে প্রশ্ন -- রাষ্ট্র এই কবির কাছে কী পায় যে, তাকে মানে এক কবিকে হঠাৎ একটা মহা উৎসব-আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু করে তোলে! বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রবীন্দ্রনাথের ভাবগত বা চিন্তাগত মূল্যের চেয়ে তার বানানো-মূর্তিজাত উপস্থিতির বস্তুগত মূল্য তখন বড় বেশি দরকারি হয়ে পড়ে। কারণ সেটা সামনে রেখে রাষ্ট্র তার একটা কৃত্রিম মহৎ ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারে। সেটি করে রাষ্ট্র বোঝায় (ক) রাষ্ট্র কোনো নন্দনচর্চাজ্ঞানশূন্য, অনুভবহীন ভোঁতা প্রতিষ্ঠান নয়। (খ)তার বদৌলতে রাষ্ট্রের কবি-সাহিত্যকদের প্রতি একটা সামারাটিয়ান চরিত্র দাঁড় করায়। সাথে সাথে এটির বিপুল উদযাপনের ব্যয়ভারের অংশীদার হন ঠিকাদার থেকে শুরু করে(কোনোদিন একটি মাত্র রবীন্দ্রকবিতা না-পড়া বা গান না-শোনা) বিপুল কর্মীবাহিনী। এর বাইরে যারা আছেন, তারা কবির অতলান্তিক সৃষ্টিকাজের প্রাচুর্য বিষয়ে আধ-বোঝা বা পুরাতন ছোঁয়াচে আবেগের আগুনে পুড়ে সাময়িকভাবে বাঙালি সংস্কৃতির ভাগীদার হতে চান। অন্যদিকে যারা কবিতা-শিল্পের প্রকৃত সমজদার পাঠক -- তারা কবির কাছে কোনো দেনা পাওনার হিসাব নেয় না। আবার তার মর্যাদার হেরফের পাঠকভেদেও এদিক সেদিক হয় না। সে ততটুকুও নেয় যতটুকু কবি দিতে পারে বা যতটুকু মূল্য একজন কবি বা সাহিত্যক তৈরি করতে পারে পাঠকদের কাছে। এর মধ্যে কোনো বস্তুগত লাভের হিসাব নিকাশ নেই। প্রকৃতপক্ষে সংঘের রবীন্দ্রনাথ একজন নেতা রবীন্দ্রনাথ হিসাবেই আবির্ভূত হন -- যার ভেতরে সংঘকর্মীরা আবিষ্কার করেন এক অভূতপূর্ব কবি আর সংগীতের মর্মবাণী, যা দিয়ে একটা রাজনৈতিক শিক্ষার কর্মসূচি হাতে নেওয়া যায়। এর ফলে রবীন্দ্রনাথ যে একটি প্লুরাল সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব, সেটির কোনো অস্তিত্ব থাকে না, থাকে শুধু বাহুবলীয় সিংগুলারিটি -- যার মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীন স্রোতটাকে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব।
সংঘের রবীন্দ্রনাথকে যারা সঙ্গী করে, তাদের মানসিক জগৎ থেকে কবি সাহিত্যিক রবীন্দ্রসঙ্গ অনেক আগেই লুপ্ত। যা থাকে সে তো এক নাম না জানা বিস্ময়! যার আর এক নাম হতে পারে অজ্ঞ বা অন্ধ বিস্ময়। তারা তখন হাজার নেতার পাশাপাশি বা কখনো ছায়াতলে নতুন নেতা রবীন্দ্রনাথকে পায়। এখানে তাই প্রশ্ন আসে, রবীন্দ্রনাথ কিসের নেতা? রবীন্দ্রনাথের আইডোলজি কী? রবীন্দ্রনাথ কী করে তাদের সাথে? রবীন্দ্রনাথের মেসেজ কী? তার যে অন্যায় হিংসা বিদ্বেষহীন সমাজের ধারণা, সর্ব কল্যাণের চিন্তা, সর্বজনীন শিক্ষার চিন্তা, সেগুলি কোনো একটি দলের বা দলীয় নেতা কর্মীদের আইডোলজি নয়, এইগুলি ইউনিভার্সেল বিষয়। এইগুলি সংঘের লোকেরা নেয় না বা তারা এভাবে চিন্তাও করে না। কারণ সেগুলিতে তাদের কোনো ফায়দা নেই বরং তাতে কবি রবীন্দ্রনাথের বাণিজ্যবিহীন, নিরীহ কবিমুখটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিষয়টা ভেবে দেখা দরকার। রবীন্দ্রনাথ তো কারো নেতা নয়। কারণ কবির কাজ কোনো নেতৃত্ব বিধান বা কোনো নিদের্শ দান নয়। কবির কাজ মানুষের ভেতর মরে থাকা সৌন্দর্যবোধ জাগানোর মাধ্যমে জীবনকে একটা মিনিং দেওয়া, মানুষের ভেতর চিন্তাহীন, শুধু ভোগবাদী পশু সত্ত্বাটাকে বাদ দিয়ে তাকে মানুষের কাতারে আনার জন্য তৈরি করা।
সংঘের কোনো ফিক্সড চরিত্র নেই। নানান রকম মানুষ নিয়ে সে যে একটা কিছু হয়, সেটি আসলে একটা বহুরূপী বহুগামী স্থির আকারহীন চরিত্র। তার অবলম্বন বহিরাঙ্গনের নীচ রাজনীতি ও তৈলমর্দন। কিন্তু কবি রবীন্দ্রনাথ আসলে কোনো বহিরাঙ্গনের লোক নয়। তাই ঘটা করে মজলিসি কায়দায় রবীন্দ্রনাথকে -- রবীন্দ্রনাথের মুর্শিদ আর মুরিদ ধরে তার সংগীতের মজা পাওয়া যায় না। কারণ নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথই আসল রবীন্দ্রনাথ। কবিতাশিল্প বা নন্দনচর্চা ঠিক কোলাহল, প্রভাতফেরি, নেতা নেত্রী পাজামা পাঞ্জাবির বিষয়বস্তু নয়। এইগুলি লোকবল রাষ্ট্রবল সংঘছাড়া নিঃসঙ্গতাকে দাবী করে। সংঘবল আদতে একটি বাহুবলের চাতুর্যমাত্র। এর কারুকার্যময় পৃথিবীর ভেতরে বেচারা কবি রবীন্ত্রনাথ পালিয়ে বাঁচে যেন! সেইসূত্রে বলতে পারি, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে পূজা করা আর তার সাহিত্যসৃষ্টিকে সমাদর করা এক জিনিস নয়। যারা ব্যবসায়িক, বা রাজনৈতিক কারণে তাকে পালন করে, তারা তার স্রষ্টা-সত্ত্বাকে হত্যা করে একজন বাজারি রবীন্দ্রনাথকে জন্ম দেয়। বাঙালির হাজার বছরের মনোভঙ্গি হিরো-ওয়ারশিপিং হওয়ার কারণে সমাজ চিন্তক, রিফর্মিস্ট মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথের দর্শনেরও কোনো চর্চা হয় না। সাদা কাপড় আর সাদা গোঁফদাড়িওয়ালা কবিকে বৈশাখ আর শ্রাবণের রোমান্টিক দেবতা করে দাসেরা ফুলের মালা আর কথার ফুলঝুরিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে হয় না কোনো বিচার বিশ্লেষেণ, হয় না কোনো জীবনকে বোঝার বা জানার অন্বেষণ। তাহলে ক্ষতি কার, প্রজানায়ক রবীন্দ্রনাথের না কবিরাজ রবীন্দ্রনাথের? না সংঘবাদী এইসব ক্ষুদে নায়কদের?
আমার মতে ক্ষতি তিন দলেরই। কারণ এতে তারা কোনো কিছু বুঝতে পারে না। আর বুঝতে পারে না বলেই কোনো কিছু গড়তেও পারে না। এই একই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে স্টেজে, হলরুমে বা লম্বা করিডোরে কিংবা কোনো বাগান বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ছবি টাঙ্গিয়ে রবীন্দ্রচর্চার নামে তার নাম জপ করা ধর্মবাদীতার সমতুল্য। তখন এই ধর্মগুরুকে পাবলিক যীশুর মতো শৃঙ্খলিত করে লোকজনের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায়। আটকে রাখে বড় বড় দালান কোঠায়। রবীন্দ্রনাথ ধর্মেও নেই অধর্মেও নেই। রবীন্দ্রনাথ আছে নিঃসঙ্গ ধ্যানে, মানুষের সমাধিভঙ্গিমায়। হিরো-ওয়ারশিপিং মানসিক পঙ্গুতার কারণে হিরোকে নানান ভাগে বিভক্ত করার প্রচলন বাংলাদেশে আছে। রবীন্দ্রনাথকে ভেঙে বিশ্বকবি, হিন্দু, বাঙালি, ভারতীয়, এপার- ওপার বাংলার নেতা বানানোর মাধ্যমে সৃষ্টিহীন লোকদের একটা হীন উদ্দেশ্য সফল হয় হয়তো। তাতে কবি সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের কিছুই হয় না। কবি রবীন্দ্রনাথ সব সময় এক এবং নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথই থাকে। তাকে পেতে হলে তাকে ঘরে বসেই তার সৃষ্টিশীলতাকে তথা তার টেক্সটকে পঠন, বিশ্লেষণ আর পূর্ণগঠনের মাধ্যমে পেতে হবে।
এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরমুছুন