রাণু বউদি
সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সন্ধেবেলা অফিস থেকে ফেরার পর অন্ধকার ঘরে জল জমতে থাকে। জলের পছন্দসই অন্ধকার নিঃশব্দে হাওয়াই চপ্পল, খালি বোতল ভাসিয়ে তোলে। খাটের পায়া বেয়ে এসে গায়ে ঠাণ্ডা হাত রাখে। ঘরের লাগোয়া বারান্দা; বাইরে একফালি ঘাস, পাঁচিল, নয়ানজুলি। পার হয়ে হাইওয়ে; ওপারে নোনাজমি, খাড়ির সমুদ্র। সোডিয়াম ভেপারের আলো ঘরের মধ্যে চলকায়। জলের জামার সামান্য ছেঁড়া, আঙুল দিয়ে টেনে বাড়িয়ে দেয়। ঘাসের ওপর এলো চুলে ফ্ল্যাটবাড়ির এক মেয়ে নিচু হয়ে কী কুড়িয়ে নিলো; বকুল ফুল, নাকি আংটি হারিয়েছে, নাকছাবি! মেয়েটি কি বুঝতে পেরেছে, কেউ তাকে দেখছে? নুনের মতো গুঁড়ো সোডিয়াম উড়ছে হাওয়ায়। সেই ছায়ামানুষীর শরীরের চারপাশে ফুটে ওঠা আলোর দানা; অবয়বের অপার্থিব সৌকর্য; দেখে দেখে জলের সংস্রবে অন্ধকার ঘরে, আমার শরীর জেগে ওঠে। তীব্র আত্মরতির লিপ্সায় অস্থির হয়ে উঠি, ছটফট করতে থাকি।
মেয়েটি আমার খোলা জানালার দিকে হেঁটে আসে; গরাদে হাত রেখে আমার শীত শরীরকে প্রায় ছুঁয়ে যায়। ‘একি অন্ধকারে ভূতের মত বসে কী করছ?’ রাণু বউদি ঘাসের থেকে জবাব চাইছে। রাণু বউদির মুঠো থেকে টিকটিকির লেজের মতো সাদা ফিতে ঝুলে আছে। দোতলার বারান্দা থেকে উড়ে এসে ঘাসে পড়েছিল সাদা জামা; পায়রার মতো দানা খুঁটে খাচ্ছিল। তাই কুড়োতে নিচে এসেছিল রাণু বউদি।। বলে, ‘চাবি ভুলে গেছি। বাপ ছেলে বেরিয়েছে। তোমার ঘরে একটু বসি?’ আলো জ্বেলে দরজা খুলে দিই। ঘরে ঢুকে নির্দ্বিধায় আমার বিছানায় বসে পড়ে রাণু বউদি। আঁচল দিয়ে ঠোটের ওপরের ঘাম মোছে। কথা খোঁজে; এটা সেটা বলে। আস্তে আস্তে জিভ জড়িয়ে আসে; পুরু সর পড়ে। ‘বাইরে হিমের মধ্যে থেকে ঘরে এসে গরম লাগছে’। রাণু বউদি ওঠে; বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আমাকেও ডাকে। ‘যাই’ বলে সাড়া দিয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
এমন সময় জোর হাওয়া ওঠে। অনবরত খোলা জানালার পাল্লা পড়ে। ঝড়ের মতো হাওয়ায় আমার হাফশার্ট ফুলে ওঠে। একটার পর একটা বোতাম ছিঁড়ে যায়। রাণু বউদির সম্বিত ফেরে। শাড়ির আঁচল ধরে রাখতে পারে না। হিমশিম খায়। শহরতলীর আলোর ওপর, অন্ধকার আকাশে জাপানী ঘুড়ির মতো রাণু বউদির শাড়ি উড়ে যায়। উড়তে উড়তে ঝড়ের মেঘের মতো আকাশ ছেয়ে ফেলে। ব্লাউজের হুক ছিঁড়ে সাদা জামা বারান্দার কার্ণিশে আটকে যায়। তারপর নতুন উড়তে শেখা সীগালের মতো খাড়ির দিকে ভেসে যায়। দু-এক বিন্দু বৃষ্টি ওড়ে। হঠাৎ হাওয়ার শব্দ ছাপিয়ে দরজায় কারো করতল বেজে ওঠে। বারংবার একই মাত্রায় বাজতে থাকে। স্থানু হয়ে দুজনে দাঁড়িয়ে থাকি। কেউ গিয়ে দরজা খুলে দিতে পারি না।
সন্ধেবেলা অফিস থেকে ফেরার পর অন্ধকার ঘরে জল জমতে থাকে। জলের পছন্দসই অন্ধকার নিঃশব্দে হাওয়াই চপ্পল, খালি বোতল ভাসিয়ে তোলে। খাটের পায়া বেয়ে এসে গায়ে ঠাণ্ডা হাত রাখে। ঘরের লাগোয়া বারান্দা; বাইরে একফালি ঘাস, পাঁচিল, নয়ানজুলি। পার হয়ে হাইওয়ে; ওপারে নোনাজমি, খাড়ির সমুদ্র। সোডিয়াম ভেপারের আলো ঘরের মধ্যে চলকায়। জলের জামার সামান্য ছেঁড়া, আঙুল দিয়ে টেনে বাড়িয়ে দেয়। ঘাসের ওপর এলো চুলে ফ্ল্যাটবাড়ির এক মেয়ে নিচু হয়ে কী কুড়িয়ে নিলো; বকুল ফুল, নাকি আংটি হারিয়েছে, নাকছাবি! মেয়েটি কি বুঝতে পেরেছে, কেউ তাকে দেখছে? নুনের মতো গুঁড়ো সোডিয়াম উড়ছে হাওয়ায়। সেই ছায়ামানুষীর শরীরের চারপাশে ফুটে ওঠা আলোর দানা; অবয়বের অপার্থিব সৌকর্য; দেখে দেখে জলের সংস্রবে অন্ধকার ঘরে, আমার শরীর জেগে ওঠে। তীব্র আত্মরতির লিপ্সায় অস্থির হয়ে উঠি, ছটফট করতে থাকি।
মেয়েটি আমার খোলা জানালার দিকে হেঁটে আসে; গরাদে হাত রেখে আমার শীত শরীরকে প্রায় ছুঁয়ে যায়। ‘একি অন্ধকারে ভূতের মত বসে কী করছ?’ রাণু বউদি ঘাসের থেকে জবাব চাইছে। রাণু বউদির মুঠো থেকে টিকটিকির লেজের মতো সাদা ফিতে ঝুলে আছে। দোতলার বারান্দা থেকে উড়ে এসে ঘাসে পড়েছিল সাদা জামা; পায়রার মতো দানা খুঁটে খাচ্ছিল। তাই কুড়োতে নিচে এসেছিল রাণু বউদি।। বলে, ‘চাবি ভুলে গেছি। বাপ ছেলে বেরিয়েছে। তোমার ঘরে একটু বসি?’ আলো জ্বেলে দরজা খুলে দিই। ঘরে ঢুকে নির্দ্বিধায় আমার বিছানায় বসে পড়ে রাণু বউদি। আঁচল দিয়ে ঠোটের ওপরের ঘাম মোছে। কথা খোঁজে; এটা সেটা বলে। আস্তে আস্তে জিভ জড়িয়ে আসে; পুরু সর পড়ে। ‘বাইরে হিমের মধ্যে থেকে ঘরে এসে গরম লাগছে’। রাণু বউদি ওঠে; বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আমাকেও ডাকে। ‘যাই’ বলে সাড়া দিয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
এমন সময় জোর হাওয়া ওঠে। অনবরত খোলা জানালার পাল্লা পড়ে। ঝড়ের মতো হাওয়ায় আমার হাফশার্ট ফুলে ওঠে। একটার পর একটা বোতাম ছিঁড়ে যায়। রাণু বউদির সম্বিত ফেরে। শাড়ির আঁচল ধরে রাখতে পারে না। হিমশিম খায়। শহরতলীর আলোর ওপর, অন্ধকার আকাশে জাপানী ঘুড়ির মতো রাণু বউদির শাড়ি উড়ে যায়। উড়তে উড়তে ঝড়ের মেঘের মতো আকাশ ছেয়ে ফেলে। ব্লাউজের হুক ছিঁড়ে সাদা জামা বারান্দার কার্ণিশে আটকে যায়। তারপর নতুন উড়তে শেখা সীগালের মতো খাড়ির দিকে ভেসে যায়। দু-এক বিন্দু বৃষ্টি ওড়ে। হঠাৎ হাওয়ার শব্দ ছাপিয়ে দরজায় কারো করতল বেজে ওঠে। বারংবার একই মাত্রায় বাজতে থাকে। স্থানু হয়ে দুজনে দাঁড়িয়ে থাকি। কেউ গিয়ে দরজা খুলে দিতে পারি না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন