ধ্বন্যাত্মক
শ্রাবণী দাশগুপ্ত
মা... নিবার্ন্ধব পরবাসে আমি স্বেচ্ছাবন্দী। তোমরা ফোন করে পাগল –- দেখছি, শুনছি, ধরছি না। একটা মহাদেশে তোমরা, একটায় আমি। সুবিধেটা কী বল তো? ইচ্ছে হলেই কেউই যেতে আসতে পারি না। এ্যাসাইনমেন্টগুলো এনে জমা করেছি, শেষ হলে মেইল করছি। জানি না এভাবে কতদিন! সেদিন রাত্তির অবধি বসে তীর্থর সঙ্গে ফেসবুকে লিখে গল্প... কী দ্রুত লিখছিলাম! তীর্থ তো বটেই, নিজেও আমি অবাক। তখনই ধ্বনির ফোন। কতদিন পরে শুনছি ওর গলা “হ্যালো কেমন আছো?” আলাপ হলে বুঝতে মা, ও খুব সপ্রতিভ, ন্যাকামোর ধার ধারে না। আমার কাজকর্মের বিষয়ে কিছু, তাছাড়া দেশে ফিরলেই যে ওকে তোমার সাথে পরিচয়... বলতে মুখ খুলেছি, জিভটা নড়ে উঠে গুটলি পাকিয়ে গেল। ব্যাপারটা বোঝার আগেই ওপাশে ধ্বনি ক্ষেপে উঠল, “হ্যালো! কী করছ বল তো? আইএসডি কল রিসিভ করেও কথা না বলা, নতুন স্টাইল? ইন বেড উইদ সামওয়ান?” জবাব দিতে গিয়ে জিভ নড়ল সামান্য, তারপর গুটিয়ে গেল। মনেই করতে পারলাম না, কথা বলার প্রক্রিয়া বলতে যা বোঝায়, সেটা কেমন! তক্ষুণি ওয়াশরুমের আয়নায় গিয়ে মুখ হাঁ করলাম যতটা পারি। জিভ টান করলাম। সুস্থ স্বাভাবিক। ব্যথা জ্বালা অস্বস্তি জড়তা কিচ্ছু নেই। এই স্টুডিয়ো এ্যাপার্টমেন্টে আমার রুমমেট ফ্রান্সিস মাস দুয়েকের জন্য অন্যত্র গেছে। ডায়াল করতেই ধ্বনির ফোনে অসমীয়া লোকগান। এখানে রাত সাড়ে এগারো, ভারতের ক’টা খেয়াল রাখিনি। ঘুমজড়ানো গলা শুনলাম, “বলো।” বলতে গিয়ে সেই পুনরাবৃত্তি! ও গালি দিয়ে ফোন কেটে দিল। আমার মাথায় বিপ বিপ, দু’হাতের উপশিরা ধমনীতে তরঙ্গ। হাতের আঙুলগুলো নাচছে দ্রুত। মোবাইলে মেসেজ লিখতে গিয়ে অনুভব করলাম, শব্দগুলো অস্বাভাবিক ক্ষিপ্রতায় নামছে আঙুলে ভর করে। আমি বৈদ্যুতিন? গলা ফাটিয়ে চীৎকার করব, দেখি জিভ গুটিয়ে গলা আটকে দিয়েছে। মা, সম্পূর্ণ একা বাড়িটায় অসম্ভব ভয় করছিল, তীব্র আতঙ্ক। ল্যাপটপ খুললাম, ফেসবুকে কতজন তখনো... আমি কথা শুরু করলাম। আঙুলেরা বলছে, লিখছি আমি, ঝড়ের মতো টাইপ করছি। জানো মা, অনেক ডলার গচ্চা দিলাম ডাক্তারে। টেনে টিপে খুঁচিয়ে হাজারখানা পরীক্ষা, কিচ্ছু পেল না। দেখলে বুঝতে আমার কলেবরের শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে এবং খুব আনন্দে আছি। যেটা অকথ্য, সেটাও নির্দ্বিধায় লিখে বলছি। শুধু, এই বিজনবাসে তোমার শেখানো কবিতাগুলো গলা খুলে বলতে ভুলে গেছি। ধ্বনি ভুল বুঝেছে, তোমরাও কী যে ভাবছ...! আমার অভিযোজন হচ্ছে মা... অহঙ্কার করে বলছি, আমিই প্রথম...।
মা... নিবার্ন্ধব পরবাসে আমি স্বেচ্ছাবন্দী। তোমরা ফোন করে পাগল –- দেখছি, শুনছি, ধরছি না। একটা মহাদেশে তোমরা, একটায় আমি। সুবিধেটা কী বল তো? ইচ্ছে হলেই কেউই যেতে আসতে পারি না। এ্যাসাইনমেন্টগুলো এনে জমা করেছি, শেষ হলে মেইল করছি। জানি না এভাবে কতদিন! সেদিন রাত্তির অবধি বসে তীর্থর সঙ্গে ফেসবুকে লিখে গল্প... কী দ্রুত লিখছিলাম! তীর্থ তো বটেই, নিজেও আমি অবাক। তখনই ধ্বনির ফোন। কতদিন পরে শুনছি ওর গলা “হ্যালো কেমন আছো?” আলাপ হলে বুঝতে মা, ও খুব সপ্রতিভ, ন্যাকামোর ধার ধারে না। আমার কাজকর্মের বিষয়ে কিছু, তাছাড়া দেশে ফিরলেই যে ওকে তোমার সাথে পরিচয়... বলতে মুখ খুলেছি, জিভটা নড়ে উঠে গুটলি পাকিয়ে গেল। ব্যাপারটা বোঝার আগেই ওপাশে ধ্বনি ক্ষেপে উঠল, “হ্যালো! কী করছ বল তো? আইএসডি কল রিসিভ করেও কথা না বলা, নতুন স্টাইল? ইন বেড উইদ সামওয়ান?” জবাব দিতে গিয়ে জিভ নড়ল সামান্য, তারপর গুটিয়ে গেল। মনেই করতে পারলাম না, কথা বলার প্রক্রিয়া বলতে যা বোঝায়, সেটা কেমন! তক্ষুণি ওয়াশরুমের আয়নায় গিয়ে মুখ হাঁ করলাম যতটা পারি। জিভ টান করলাম। সুস্থ স্বাভাবিক। ব্যথা জ্বালা অস্বস্তি জড়তা কিচ্ছু নেই। এই স্টুডিয়ো এ্যাপার্টমেন্টে আমার রুমমেট ফ্রান্সিস মাস দুয়েকের জন্য অন্যত্র গেছে। ডায়াল করতেই ধ্বনির ফোনে অসমীয়া লোকগান। এখানে রাত সাড়ে এগারো, ভারতের ক’টা খেয়াল রাখিনি। ঘুমজড়ানো গলা শুনলাম, “বলো।” বলতে গিয়ে সেই পুনরাবৃত্তি! ও গালি দিয়ে ফোন কেটে দিল। আমার মাথায় বিপ বিপ, দু’হাতের উপশিরা ধমনীতে তরঙ্গ। হাতের আঙুলগুলো নাচছে দ্রুত। মোবাইলে মেসেজ লিখতে গিয়ে অনুভব করলাম, শব্দগুলো অস্বাভাবিক ক্ষিপ্রতায় নামছে আঙুলে ভর করে। আমি বৈদ্যুতিন? গলা ফাটিয়ে চীৎকার করব, দেখি জিভ গুটিয়ে গলা আটকে দিয়েছে। মা, সম্পূর্ণ একা বাড়িটায় অসম্ভব ভয় করছিল, তীব্র আতঙ্ক। ল্যাপটপ খুললাম, ফেসবুকে কতজন তখনো... আমি কথা শুরু করলাম। আঙুলেরা বলছে, লিখছি আমি, ঝড়ের মতো টাইপ করছি। জানো মা, অনেক ডলার গচ্চা দিলাম ডাক্তারে। টেনে টিপে খুঁচিয়ে হাজারখানা পরীক্ষা, কিচ্ছু পেল না। দেখলে বুঝতে আমার কলেবরের শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে এবং খুব আনন্দে আছি। যেটা অকথ্য, সেটাও নির্দ্বিধায় লিখে বলছি। শুধু, এই বিজনবাসে তোমার শেখানো কবিতাগুলো গলা খুলে বলতে ভুলে গেছি। ধ্বনি ভুল বুঝেছে, তোমরাও কী যে ভাবছ...! আমার অভিযোজন হচ্ছে মা... অহঙ্কার করে বলছি, আমিই প্রথম...।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন