বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৩

দেবতোষ দাশ

গন্ধ


টিভির পর্দা হঠাৎ ঝিরঝির। ছবি হাওয়া। মেয়েটি বিরক্ত। ছেলেটি বুঝতে পারে না কী হলো। বাইরে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। সঙ্গে কিছুটা বৃষ্টিও। ছাদে গিয়ে অ্যান্টেনাটা একবার নেড়েচেড়ে দিয়ে আসবে কী না ভাবে। মেয়েটির বিরক্তি কমে না। ছেলেটি বাইরে বেরোয়। হাতে ছাতা। আলো- আঁধারি সিঁড়িপথে পা ফেলে ফেলে ওঠে। দরজা খোলে। শূন্য ছাদটা হাঁ করে গিলতে চায় ছেলেটিকে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো শজারুর কাঁটার মতো আছড়ায়। ছাতাটা খোলে ছেলেটি। এক-পা দু-পা করে এগোয়। অ্যান্টেনাটা একটু নাড়াচাড়া করে। হঠাৎ দমক। তীব্র পাখসাটে ছিটকে যায় ছাতা। ঝড়-জলেই ছেলেটি অ্যান্টেনাতে মন দেয়। কিন্তু একটা কেমন যেন গন্ধ! ঝড়ের গন্ধ! বৃষ্টির! না, এ গন্ধ অচেনা। কোথা থেকে আসছে এ গন্ধ! চকিতে পেছন ফেরে। এ কী –- আঃ –- ছেড়ে দাও, আঃ –- আঃ –-

নাঃ, কেউ তো কোথাও নেই! তাহলে কেন মনে হলো কে যেন গলাটা চেপে ধরেছে! ছেলেটি ধূ ধূ ছাদে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। আবার সেই গন্ধ আসে নাকে। গোটা শরীর যেন অবশ করে দেবে। দ্রুত হাতে দরজা বন্ধ করে নিচে নামে। টিভিতে ছবি এসে গেছে। মেয়েটি খুশি।

মেয়েটি টেনে নেয় তাকে সোফার নরমে। জিভ ঢুকিয়ে দেয় কানে। আগুন লেগে যায়। মেয়েটি এবার ছেলেটির বুকের কালো নিপল্‌-এ হাত দেয়। তারপর জিভ। এ কী, সেই গন্ধটা আবার, আবার! কিন্তু কোথা থেকে আসছে এই ঘাতক ঘ্রাণ! ছেলেটি মেয়েটির বুকে ঠোঁট রাখে। টোলহীন। নরম। কিন্তু সেই গন্ধ! এ গন্ধ তো এখানেই! মেয়েটির শরীরে! ছেলেটি মুখ তোলে। আতঙ্ক। মেয়েটি তার গলা জড়ায়। সে ছিটকে সরায় তাকে। ছেলেটির চোখ ধোঁয়াটে। মেয়েটি অবাক। তার সবল আঙুলগুলো চেপে ধরে মেয়েটির গলা। মেয়েটি আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে।

বাইরে ঝড় ক্রমবর্ধমান। টিভিতে আবার ছবি হাওয়া। ঝিরঝির। ঝিরঝির। এদিক-ওদিক তাকায়। হাতের কাছে ক্রিকেট ব্যাটটা নিয়ে ঠুকে দেয় টিভির পর্দায়। একটা ছোট্ট বিস্ফোরণ। কাচ ভেঙে যায়। গলগল ধোঁয়া। ছেলেটি সোফায় মেয়েটিকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। মেয়েটির শরীর তখন ঠান্ডা হতে শুরু করেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন